নড়াইলের লোহাগাড়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িতে সাম্প্রদায়িক হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় বাসদ (মার্কসবাদী)’র নিন্দা ও ক্ষোভ

নড়াইলের লোহাগাড়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িতে সাম্প্রদায়িক হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় বাসদ (মার্কসবাদী)’র নিন্দা ও ক্ষোভ

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় নির্বাহী ফোরামের সমন্বয়ক কমরেড মাসুদ রানা এক বিবৃতিতে নড়াইলের লোহাগাড়ায় ফেইসবুক পোস্টে ধর্ম অবমাননার কথিত অভিযোগকে কেন্দ্র করে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িতে সাম্প্রদায়িক হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ ব্যক্ত করেছেন।

তিনি বিবৃতিতে বলেন, “এক হিন্দু তরুণের বিরুদ্ধে ফেসবুকে ইসলাম ধর্ম অবমাননার অভিযোগ এনে নড়াইলের লোহাগাড়ার দিঘলীয়া গ্রামে পুলিশ প্রশাসনের উপস্থিতিতে গতকাল হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, পূজামন্ডপ ও দোকানপাটে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও সাম্প্রদায়িক হামলাহয়েছে, তা চরম ন্যাক্কারজনক।গত ১৪ জুলাই ও১৫ জুলাই দিনভর এ নিয়ে উত্তেজনাকরপরিস্থিতি ক্রমাগত বাড়তে থাকলেও, তা নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনেরচরম ব্যর্থতা ও নিষ্ক্রিয়তার কারণে গতকাল সন্ধ্যায় এ সাম্প্রদায়িক হামলা ঘটতে পারলো। নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে ধর্ম অবমাননার কথিত অভিযোগে জুতার মালা পড়ানোর ন্যাক্কারজনক ঘটনার পরপরই আবার একই জেলায় এ সাম্প্রদায়িক হামলার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারলো। দুটি ক্ষেত্রেই প্রশাসনের উপস্থিতি সত্বেও নিষ্ক্রিয়তা লক্ষণীয়। ধর্ম অবমাননার কথিত অভিযোগে এবছর মার্চে মুন্সিগঞ্জে  বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় মন্ডলের ওপর পরিকল্পিত হামলা—মামলা, ২০১৬ সালে নারায়ণগঞ্জের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে জনসমক্ষে এমপি কর্তৃক কান ধরে ওঠবস করানো, ২০২০ সালের অক্টোবরে পাটগ্রামের বুড়িমারিতে শুধু একটা গুজবের ওপর ভর করে একদাশিক্ষক, গ্রন্থাগারিক, নিরীহ এবং কিছুটা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত শহিদুন্নবী জুয়েলকে দিনে দুপুরে সবার সামনে পিটিয়ে মারা হয়, ২০১২ সালে কক্সবাজারের রামুতে বৌদ্ধবিহার ও পল্লীতে হামলা, ২০১৬ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দু গ্রামে হামলা, ২০১৭ সালে রংপুরের গঙ্গাচড়াতে ফেসবুক থেকে  ছড়ানো গুজবের জের ধরে এক জনের মৃত্যুসহ বিগত এক দশকে সারাদেশে অসংখ্য সাম্প্রদায়িক নির্যাতন ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে শুধু ফেসবুকে  ইসলাম অবমাননার অজুহাতে! প্রায় প্রতিটি ঘটনায় স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মী, জনপ্রতিনিধি এবং পুলিশ ও সরকারি প্রশাসনঅতি সক্রিয় হয়ে ‘আশু’ বিচারের ব্যবস্থা করেছেন। প্রায় প্রত্যেকটি ঘটনায় পরে প্রমাণিত হয়েছে যে কাউকে পরিকল্পিত উপায়ে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ফাঁসানোর জন্য তার ফেইসবুক হ্যাক করে ফটোশপকৃত ছবি বা উস্কানিমূলক বক্তব্যপোস্ট করা হয়েছিল। গতবছর দুর্গাপূজার সময় কুমিল্লার পূজামন্ডপে কোরান রেখে দিয়ে অবমাননার অভিযোগ তুলে সারাদেশে পূজামন্ডপে ও হিন্দুদের ওপরহামলা করা হয়। পরে উদঘাটিত হয়— দেবীমূর্তির পায়ের কাছে পরিকল্পিতভাবে কোরান রেখে এসেছে একজন মুসলিম। প্রায় সব ক্ষেত্রে মামলাহওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বা কিছু ক্ষেত্রে মামলা হওয়ার আগেই পুলিশ তথাকথিত অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে এবং স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে। এসব হামলার ঘটনায় আক্রান্ত ও নির্যাতিত সংখ্যালঘুরা সাহস করে যদি মামলা করেনও, কিছুদিনের মধ্যে সমস্ত আসামির জামিন হয়। এ পর্যন্ত সংঘটিত সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনাগুলোর কোনটারই বিচার না হওয়ায়, এসাম্প্রদায়িক হামলা উত্তরোত্তর বাড়ছে। আওয়ামীলীগ সরকার তার ফ্যাসিবাদী শাসন টিকিয়ে রাখতে তার আশ্রয় ও প্রশ্রয়ে সাম্প্রদায়িকতার বিস্তার ঘটাচ্ছে, জনগণের মধ্যে এ সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষও বিভেদ সৃষ্টি ও জিইয়ে রাখতেপ্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ভূমিকা পালন করছে। ফলে অবিলম্বে সংঘটিত সাম্প্রদায়িক হামলার সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানানোর পাশাপাশি আমরা জনগণকে ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের বিরুদ্ধেও সোচ্চার হওয়ার আহবান জানাই।

 একইসাথে আমরা সৎ ধর্মবিশ্বাসী মানুষকেও ভেবে দেখতে বলবো, যেকোন ধর্মের মহাপুরুষ বা সমাজসংস্কারক, যাদের প্রতি অগণিত অনুসারীদের শ্রদ্ধা—ভালোবাসা—আবেগ রয়েছে, তাদের সম্পর্কে অসৎ উদ্দেশ্যে বিদ্বেষপ্রসূত মন্তব্য বা ‘হেটস্পীচ’ নিশ্চয় নিন্দনীয়। এর প্রতিবাদ জানানোর অধিকার সবার রয়েছে। কিন্তু কোন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের কোন একজন ব্যক্তির মাধ্যমে সত্যি সত্যি এধরণের কোন অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটে গেলে, ব্যক্তির দায় পুরো সম্প্রদায়ের উপর চাপিয়ে দিয়ে ‘প্রতিশোধ’ গ্রহণ, ঘৃণা—বিদ্বেষ প্রচার ও হামলা, বাংলাদেশও ভারতের উগ্র মৌলবাদী গোষ্ঠীর অসৎ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে ও বাংলাদেশের বিদ্যমান ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনকেই প্রলম্বিত করবে। সাম্প্রদায়িকতা বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে সহনশীলতা ও সহাবস্থান বিনষ্টকরে মানুষে মানুষে বিভেদ তৈরি করে, যা বিদ্যমান পুঁজিবাদীশাসন—শোষণ বহাল রাখতে সহায়তা করে। তাই, আমরা সকল গণতন্ত্রমনা মানুষকে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহবান জানাই।