সারাদেশে অব্যাহত ধর্ষণ, নিপীড়ন ও মব ভায়োলেন্সের প্রতিবাদে রাজধানীর উত্তরায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
১২ মার্চ ২০২৫ সকাল ১১ টায় ‘চব্বিশের উত্তরা’র আয়োজনে সারাদেশে অব্যাহত ধর্ষণ, নিপীড়ন ও মব ভায়োলেন্সের প্রতিবাদে উত্তরার সোনারগাঁ জনপদের কদম চত্বরে (ময়লার মোড়) ‘চব্বিশের উত্তরা’র উদ্যোগে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
চব্বিশের উত্তরার সংগঠক সামিয়া রহমান এর সঞ্চালনায় বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন চব্বিশের উত্তরা’র সংগঠক সোহানা সাকি, খাদিজা তাহেরা, মনীষা মাফরুহা, সুলেখা রহমান, ইশরাত চৌধুরী। বিক্ষোভ সমাবেশে উত্তরার বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন। বিক্ষোভ সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন মাহফুজা সৈয়দা, ফ্লোরা আক্তার, মাহমুদুল হাসান, তোফায়েল আহমেদ নাবিল, চৌধুরী জোসেন, সালমান রাহাত, জুবায়ের প্রমূখ।
বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা বলেন, ‘‘দীর্ঘদিনের বিচারহীনতার সংস্কৃতির ধারাবাহিকতায় এদেশে ধর্ষণ, নিপীড়ন ও মব ভায়োলেন্সের ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলছে। গত ৫ মার্চ মাগুড়া শহরে বোনের বাড়ি বেড়াতে এসে ধর্ষণের শিকার হয়েছে আট বছর বয়সী শিশু আছিয়া। দেশে শিশুরাও ধর্ষণ ও নিপীড়নের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না। এর আগেও আমরা দেখেছি তনু-আফসানা-মুনিয়া সহ নাম জানা না জানা অসংখ্য নারী-শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছেন, কিন্তু সুষ্ঠ বিচার পান নি। অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে না পারায় ধর্ষণ ও নিপীড়নের ঘটনা বন্ধ হচ্ছে না। বিচারহীনতার এই সংস্কৃতি দূর করার জন্য রাষ্ট্রকে কার্যকরী উদ্যোগ নিশ্চিত করতে হবে।’’
বক্তারা আরও বলেন, ‘‘একদিকে যেমন আইন-শৃঙ্খলার অবনতি এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতি রয়েছে, আবার আরেকদিকে নাগরিকদের মাঝে আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ার বিপজ্জনক প্রবণতাও পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে অপরাধীর উপর মব জাস্টিসের নামে আক্রমণ হচ্ছে, তো কোথাও ধর্মের ধুঁয়া তুলে বা রাজনৈতিক স্বার্থের কারণে নিরপরাধ মানুষের উপর নিপীড়ন ঘটানো হচ্ছে, আবার কখনো অপরাধীকে রক্ষার জন্যও মব নেমে পড়ছে। এ পরিস্থিতির অবসানে অবশ্যই যেকোন ধরণের মব ভায়োলেন্সের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে এবং এর সাথে যুক্ত ব্যক্তিদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে। একইসাথে জনগণের যেন আইন এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও বিচারব্যবস্থার উপর আস্থা তৈরি হয় তার উদ্যোগ রাষ্ট্রকেই নিতে হবে।’’
বক্তারা আরও বলেন, ‘‘ধর্ষণের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদন্ডের বিধান থাকলেই যে তা ধর্ষণের মহামারীকে কমিয়ে আনবে এমন নয়, বরং নিপীড়নের মাত্রা এবং ভিক্টিমের শারীরিক ক্ষতির সাপেক্ষে শাস্তির মাত্রা নির্ধারিত হওয়াটা যুক্তিযুক্ত। কিন্তু শাস্তির মাত্রার চেয়েও জামিনবিহীন দ্রুত বিচার, নিরপেক্ষ ও কার্যকরী তদন্ত প্রক্রিয়া, ভিক্টিমের নিরাপত্তা ইত্যাদি বিষয় নিশ্চিতকরণ ধর্ষণের মত অপরাধ মোকাবেলায় ভূমিকা রাখতে পারে। সর্বোপরি, সমাজে নারীবিদ্বেষী পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব ও সংস্কৃতিকে নির্মূল করে নারীর প্রকৃত সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের পথকে সুগম করার মধ্য দিয়েই একটি ধর্ষণমুক্ত সমাজ তৈরি করা সম্ভব।’’
বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে ধর্ষকদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ, শিশু আছিয়ার সুচিকিৎসা এবং অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়।