রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের আরটি-পিসিআর ল্যাবে কর্মরত দুজন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন। গত শুক্রবার থেকে এই দুই কর্মকর্তা আর কাজ করছেন না। এ কারণে হাসপাতালের ল্যাবে করোনা পরীক্ষা বন্ধ হয়ে গেছে।
এ দুই কর্মকর্তা হলেন এস এম হাসান এ লতিফ ও হামিদ আহমেদ। তাঁরা মূলত বিভাগীয় ফরেনসিক ডিএনএ ল্যাবের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা। রামেক হাসপাতালের পিসিআর ল্যাব চালু করার জন্য ২০২০ সালের মার্চে তাঁদের ডিএনএ ল্যাব থেকে আনা হয়।
সম্প্রতি হাসপাতালে করোনার নমুনা পরীক্ষার কিট নয়ছয়ের অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি তদন্তে গঠিত কমিটি কিট গায়েবের ব্যাপারে উচ্চতর তদন্তের সুপারিশ করে। একই সঙ্গে দুই কর্মকর্তাকে অন্যত্র সরিয়ে দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। তবে এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেওয়ার আগেই তাঁরা দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিলেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ল্যাবের টেকনোলজিস্টরা সম্প্রতি এই দুই বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অর্ধেক রিঅ্যাকশন ব্যবহার করে করোনা পরীক্ষার পর বাকি অর্ধেক সরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ করেন। কিন্তু কাগজপত্রে ৪৯ হাজার ৪০০ কিটের মধ্যে প্রায় সবই ব্যবহার করার প্রমাণ রাখা হয়। অভিযোগকারীদের দাবি, অন্তত ২ হাজার কিট গায়েব করে দেওয়া হয়েছে।
এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৯ নভেম্বর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটির প্রধান করা হয় রাজশাহী মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান শাহ আলমকে। এ কমিটি কিট গায়েবের প্রত্যক্ষ প্রমাণ পায়নি। তবে শুধু অভিযোগকারীদের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে দুই কর্মকর্তাকে অন্যত্র সরিয়ে দেওয়ার সুপারিশ করে।
গত ২১ নভেম্বর হাসপাতাল পরিচালকের কাছে এ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। ২২ নভেম্বর এ বিষয়ে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এস এম হাসান এ লতিফ বলেছিলেন, ভুল–বোঝাবুঝির কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়েছিল। প্রমাণ না হলেও শুধু সাক্ষ্যের ভিত্তিতে তাঁদের অন্যত্র সরিয়ে দেওয়ার সুপারিশের বিষয়টি বেদনার।
তদন্ত কমিটি সুপারিশ করলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দুই বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাকে সরিয়ে দেয়নি। তবে গত ১১ নভেম্বর দুই বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানীর কাছে অব্যাহতি চেয়ে চিঠি দেন। এরপর হাসপাতাল পরিচালক অনুরোধ করে গত ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত তাঁদের ল্যাবে কাজ করান। ১৭ ডিসেম্বর থেকে তাঁরা আর ল্যাবে কাজ করেননি।
বেদনা বা ক্ষোভ থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন কি না জানতে চাইলে এস এম হাসান এ লতিফ বলেন, ‘আসলে ক্ষোভ-টোভ কিছু না। আমাদের ডিএনএ ল্যাবেই এখন কাজের চাপ অনেক বেড়ে গেছে। তাই চলে এসেছি। আমরা এখান থেকেই বেতন পাই, মূল কাজটা তো এখানেই। ক্রান্তিকালে আমরা হাসপাতালে গিয়েছিলাম। কোনোরকম সম্মানী ছাড়াই কাজ করেছি। এ কথা তো কেউ বলে না।’
জানতে চাইলে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, ‘ওনাদের নিজেদের ডিএনএ ল্যাবেই নাকি এখন কাজ বেড়ে গেছে। তাই অব্যাহতি নিয়েছেন। তা–ও আমি অনুরোধ করে কয়েক দিন কাজ করিয়েছি। এখন তাঁরা না থাকার কারণে ল্যাব বন্ধ। এখন নমুনা নিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ল্যাবে যেতে হচ্ছে।’
পরিচালক বলেন, অব্যাহতি নেওয়া দুজনের মতো দক্ষ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হাসপাতালে দেওয়ার জন্য তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালককে চিঠি দিয়েছেন। জনবল পেলে ল্যাব চালাতে পারবেন।