জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা’ কেন প্রয়োজন?

মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম


জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা’ কেন প্রয়োজন?

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চলছে নানা অনিশ্চয়তা। কীভাবে, কার অধীনে নির্বাচন হবে তা নিয়ে চলছে তুমুল বিতর্ক। আওয়ামী সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে বলে দাবি করলেও নির্বাচনে চলেছে পেশীশক্তির দাপট, কালো টাকার ব্যবহার, সাম্প্রদায়িক প্রচারণা ইত্যাদি। এসবই হলো অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথে প্রধান অন্তরায়। সঠিক কারণেই আওয়ামী দুঃশাসনের অবসান এবং পার্লামেন্ট ভেঙ্গে দিয়ে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ ‘তদারকি সরকারের’ অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবী উঠেছে। তা ছাড়াও আরো সমস্যা আছে। সেসব সমস্যা নিয়ে কথাবার্তা খুব কম মহল থেকেই বলা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে অনেক কিছু করণীয় রয়েছে। এসব করণীয়-এর সাথে যুক্ত রয়েছে 'নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল সংস্কারের' প্রশ্নটি। কমিউনিস্ট ও বামপন্থি মহলসহ বেশকিছু মহল থেকে সেক্ষেত্রে 'সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা' প্রবর্তনের প্রস্তাব তুলে ধরা হয়েছে। কি সেই প্রস্তাবিত সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা?

'প্রকৃত গণতন্ত্রের' ভিত্তি হচ্ছে বহুমাত্রিক। তার যেমন রয়েছে নানা অর্থনৈতিক ও সামাজিক মাত্রিকতা, তেমনি তার রয়েছে রাজনৈতিক নানা উপাদান। রাজনৈতিক গণতন্ত্রের প্রকৃত মর্মবস্তুর যথাযথ প্রতিফলনের জন্য প্রয়োজন সমাজ ও রাষ্ট্র জীবনে গণতন্ত্রের বহুমুখী উপাদানগুলো প্রসারিত ও গভীরতর করা। একই সাথে প্রয়োজন গণতন্ত্রের কাঠামোগত ব্যবস্থা ও রূপের সুনির্দিষ্ট বিকাশ। নির্বাচন ব্যবস্থা হলো এসব কাঠামোগত ব্যবস্থার একটি প্রধান স্তম্ভ।

অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন রাজনৈতিক-গণতন্ত্রের একটি আবশ্যিক পূর্বশর্ত। জনগণের অবাধ-ভোটাধিকার প্রয়োগ ও ভোটের মাধ্যমে জনগণের প্রকৃত ইচ্ছা ও মতামতের প্রতিফলন নিশ্চিত করা একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রাথমিক ও মৌলিক উপাদান। কিন্তু আমাদের দেশে নির্বাচনকে টাকা, পেশীশক্তি, সাম্প্রদায়িকতা, প্রশাসনিক কারসাজি ইত্যাদির প্রহসনমূলক প্রতিযোগিতায় পরিণত করে রাখা হয়েছে। এই প্রহসনের খেলা থেকে নির্বাচন ব্যবস্থাকে মুক্ত করতে হবে।

অবাধ নিরপেক্ষ অর্থবহ নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য জন্য কেবলমাত্র কিছু লোকদেখানো উপরভাষা সংস্কারে আর কাজ হবে না, এজন্য আজ প্রয়োজন গোটা নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন। এক্ষেত্রে কনস্টিটুয়েন্সির ভিত্তিতে 'অনেক প্রার্থীর মধ্যে যে সবচেয়ে এগিয়ে থাকবে সে জয়ী হবে' (First Past The Post-FPTP) এই ব্যবস্থা বদল করে 'সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক' (Proportional Representation-PR) ব্যবস্থা চালু করা প্রয়োজন।

সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা কী? তার বৈশিষ্ট্যগুলো বা কী? এই ব্যবস্থা প্রবর্তিত হলে তা থেকে কী সুবিধা পাওয়া যাবে? সে বিষয়গুলো এখানে এখন সংক্ষেপে তুলে ধরা হচ্ছে।

(ক) জাতীয় সংসদ হলো

(১) জাতীয় নীতি-নির্ধারণের ও আইন প্রণয়নের জন্য এবং (২) কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের কাজ-কর্ম তদারক করার সংস্থা। স্থানীয় বিষয়ক কোনো কাজ-কর্ম সম্পর্কে জাতীয় সংসদের কোনো দায়িত্ব থাকার কথা না। (এসব কাজের সমুদয় দায়িত্ব স্বশাসিত নির্বাচিত স্থানীয় সরকারের উপর যথা ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ইত্যাদি সংস্থার উপর ন্যস্ত থাকাই বাঞ্ছনীয়)।

সংখ্যানুপাতিক তথা PR ব্যবস্থায়, জাতীয় সংসদের নিজস্ব এখতিয়ারভুক্ত কাজ-কর্ম সম্পর্কে প্রস্তাবনা-পরিকল্পনা-কর্মসূচি-নীতি বর্ণনা করে রাজনৈতিক দলগুলো দেশবাসীর সামনে নিজ নিজ ইশতেহার উপস্থিত করবে। এসবের মধ্যে যেখানে ইচ্ছার প্রতিফলন দেখতে পাবে সেই দলের মার্কায় সে ভোট দেবে। যে দল যত শতাংশ ভোট পাবে সেই দল জাতীয় সংসদে ততো শতাংশ সংখ্যক প্রতিনিধি পাঠাবে। অর্থাত্ ৩০০ আসনের সংসদে কোনো দল ৫০% ভোট পেলে ১৫০ আসন পাবে, কোনো দল ৫% ভোট পেলে ১৫টি আসন পাবে ইত্যাদি।

(খ) PR ব্যবস্থায় প্রতিটি রাজনৈতিক দল ইশতেহার ঘোষণার পাশাপাশি সংসদে আসন নেয়ার জন্য তাদের দলের প্রতিনিধিদের তালিকা অগ্রাধিকারক্রম অনুসারে নির্বাচনের আগেই দেশবাসীকে জানিয়ে দেবে। নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোট অনুসারে যে কয়টি আসন সেই দলের প্রাপ্য, তালিকার ক্রমানুসারে সেই কয়জন ব্যক্তি সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত বলে গণ্য হবেন।

(গ) এক্ষেত্রে পুরুষ ও নারীদের পৃথক দু'টি তালিকা থাকবে। যদি কোনো দলের প্রাপ্য আসনসংখ্যা ৫০ হয় এবং বিধান থাকে যে, সংসদে পুরুষ ও নারীর সংখ্যানুপাত হবে ৫০:৫০, তাহলে দুই তালিকা থেকে ২৫ জন করে অগ্রাধিকারক্রম অনুযায়ী ব্যক্তিগণ নির্বাচিত বলে গণ্য হবেন।

এই ব্যবস্থায় সংসদ সদস্য হিসাবে অন্তর্ভুক্তির কাজে দলীয় প্রধানের ডিকটেটরশিপ প্রতিষ্ঠার আশঙ্কা রয়েছে। সেই আশংকা রোধ করার জন্য দলের অভ্যন্তরে গণতন্ত্রের চর্চা বিধিবদ্ধভাবে বাধ্যতামূলক করতে হবে। স্বাধীন নির্বাচন কমিশনকে তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব দিতে হবে।

(ঘ) PR ব্যবস্থা প্রবর্তিত হলে নির্বাচিত সংসদ সদস্যগণ স্থানীয় পর্যায়ের উন্নয়ন কাজ, প্রশাসনিক কাজ অথবা অন্য কোনো কাজের সাথে জড়িত থাকবেন না। তারা শুধু জাতীয় নীতি-নির্ধারণ, আইন প্রণয়ন, কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের কাজকর্ম তদারক করা ইত্যাদিতে জড়িত থাকবেন। স্থানীয় সব উন্নয়নমূলক ও রাষ্ট্রীয় প্রশাসনিক কাজ-কর্ম সেই এলাকার নির্বাচিত স্বশাসিত স্থানীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হবে। এই ব্যবস্থার ফলে রাষ্ট্র ব্যবস্থা ও প্রশাসনের গণতান্ত্রিক বিকেন্দ্রীকরণ, স্থানীয় সরকারের প্রকৃত ক্ষমতায়ন এবং রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার ক্ষেত্রে তৃণমূলে জনগণের কার্যকর নিয়ন্ত্রণ গভীরতর করা সহজতর হবে।

(ঙ) বর্তমানে নির্বাচন যেভাবে টাকার খেলা হয়ে উঠেছে, PR ব্যবস্থায় তা অনেক কমে যাবে। এর প্রধান কারণ হলো তখন জাতীয় নির্বাচন আর ব্যক্তিকেন্দ্রিক ও এলাকাভিত্তিক হবে না বিধায় এমপি জিতিয়ে আনার জন্য এখন যেভাবে নানা সুযোগ-সুবিধার প্রত্যাশায় নির্বাচনে এক ধরনের 'পুঁজি বিনিয়োগ' ঘটে থাকে, সেই অবস্থা খর্ব করা সহজতর হবে।

(চ) বর্তমানে প্রচলিত FPTP ব্যবস্থায় সংসদে প্রাপ্ত আসনের সাথে মোট প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতের কোনো সামঞ্জস্য থাকে না। ২০০১ সালের অষ্টম এবং ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফলের দিকে দৃষ্টি দিলে দেখা যায় যে, ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৪০.৯৭% ভোট পেয়ে বিএনপি ১৯৩ টি অর্থাৎ ৬৪.৩৩% আসন পেয়েছিল এবং ৪০.১৩% ভোট পেয়ে আওয়ামী লীগ ৬২ টি অর্থাৎ ২০.৬৭% আসন পেয়েছিল। বিএনপি মাত্র ০.৮৪% বেশী ভোট পেয়ে আওয়ামী লীগের চাইতে ৪৩.৬৬% বেশী আসন পেয়েছিল।

২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৪৯% ভোট পেয়ে আওয়ামী লীগ ২৩০ টি অর্থাৎ ৭৬.৬৭% আসন পেয়েছিল। আর বিএনপি ৩৩.২০% ভোট পেয়ে ৩০ টি অর্থাৎ ১০% আসন পেয়েছিল। অন্য দিকে জাতীয় পার্টি মাত্র ৭.০৪% ভোট পেয়েও ২৭ টি অর্থাৎ ৯% আসন পেয়েছিল। আওয়ামী লীগ ১৫.৮% বেশী ভোট পেয়ে বিএনপির চাইতে ৬৬.৬৭% বেশী আসন পেয়েছিল। আবার জাতীয় পার্টি বিএনপির চাইতে ২৬.১৬% কম ভোট পেয়ে বিএনপির চাইতে মাত্র ১% আসন কম পেয়েছিল।

FPTP ব্যবস্থায় একটি নির্দিষ্ট নির্বাচনী আসনের ক্ষেত্রেও প্রকৃত জনমতের এ ধরনের অন্যায্য প্রতিফলন ঘটতে পারে। যেমন ধরা যাক যে, একটি আসনে ৫ জন প্রার্থীর মধ্যে যদি তারা যথাক্রমে ২৭%, ২৬%, ২১%, ১৭% ও ৯% করে ভোট পায় তাহলে যিনি মাত্র ২৭% ভোট পেয়েছেন তিনিই নির্বাচিত হয়ে 'সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের প্রতিনিধি' হিসাবে গণ্য হবেন (যদিও সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভোট তিনি মোটেও পাননি)।

এসব থেকে স্পষ্ট যে, বর্তমান ব্যবস্থার চেয়ে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা প্রকৃত জনমতকে অনেক বেশি ন্যায্যভাবে প্রতিফলিত করতে সক্ষম।

(ছ) বর্তমান FPTP ব্যবস্থার স্বাভাবিক প্রবণতাটা হলো দেশে একটি কার্যত (de-fecto) দ্বি-দলীয় ব্যবস্থা গড়ে তোলা, যা আমরা এখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ভিত্তিক প্রধান দুই রাজনৈতিক মেরুকরণের বাস্তবতার মধ্যে দেখতে পাচ্ছি। ইতিহাসের কোনো এক মুহূর্তে কোনোভাবে একবার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দু'টি দলের মধ্যে একটি হয়ে উঠতে পারলে সে দু'টি দলই পরবর্তীতে নানাভাবে প্রাধান্য করার মতো অটোমেটিক কতগুলো সুবিধা পেতে থাকে।

এই ব্যবস্থা দেশি-বিদেশি শোষক শ্রেণির জন্য খুবই সুবিধাজনক। কারণ তারা তুলনামূলকভাবে সহজে উভয় 'প্রধান দলকে' নানাভাবে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসে এমন একটা স্থায়ী এরেঞ্জমেন্ট দাঁড় করিয়ে ফেলতে সক্ষম হয় যাতে, 'সরকার' ও 'বিরোধী দল' উভয়কেই তারা তাদের প্রভাবের মধ্যে রাখতে পারে। ফলে 'গদি বদল' ঘটলেও তাদের শোষণের স্বার্থের অনুকূলে গড়ে তোলা 'ব্যবস্থার বদল' ঘটার আশঙ্কা থাকে না। এই প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে শোষণ ব্যবস্থা অব্যাহত রাখার সপক্ষে একটি স্থিতাবস্থা স্থাপন করার জন্য শাসক শ্রেণি চেষ্টা করে থাকে।

সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের (PR) ব্যবস্থা বড় দলগুলোকে এসব বহুবিধ অন্যায্য সুবিধাগুলো থেকে বঞ্চিত করবে। এই ব্যবস্থায় ছোট ও বিকাশমান দলগুলোকে সমান সুযোগ ও ন্যায্য প্রতিযোগিতার ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে সক্ষম করবে।

বর্তমান FPTP ব্যবস্থায় একটি দল তাত্ত্বিকভাবে ৩০০টি আসনে প্রার্থী দিয়ে প্রত্যেকটিতে ২০% করে ভোট পেয়েও (অর্থাৎ মোট ভোটের ২০% পেয়েও) একটি সিটও না পেতে পারে কিন্তু প্রধান দু'টি দল গড়ে ৪১% ও ৩৯% করে (দু'দল মিলে ৮০% ভোট) ভোট পেয়ে সবগুলো আসন নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিতে সক্ষম হতে পারে। এরূপ অবস্থা মোটেও জনমতের প্রকৃত প্রতিফলন নিশ্চিত করে না।

(জ) PR ব্যবস্থা বড় দলগুলোর বাইরেও উদীয়মান অথচ তুলনামূলকভাবে এখনো ছোট রয়েছে এমন সব দলকে ন্যায্য সুযোগ করে দেয়ার ফলে গণতন্ত্রের ভিত্তি আরো প্রসারিত হবে, রাজনীতিতে প্লুরালিজমের (Pluralism) চর্চা বৃদ্ধি পাবে, রাজনীতি আরো নীতি-আদর্শ ভিত্তিক হওয়ার সুযোগ পাবে।

(ঝ) দেশের সংবিধানের ৭০ (১) ধারা মোতাবেক নির্দিষ্ট কনস্টিটুরেন্সির ভোটারদের ভোটে নির্বাচিত হওয়া সত্ত্বেও কোনো সংসদ সদস্য দলের সিদ্ধান্ত অনুসারে ভোট না দিলে বা তার বিরুদ্ধে ভোট দিলে সংসদপদ হারাবেন। এর অর্থ হলো, প্রত্যেক সংসদ সদস্য শেষ বিচারে দলের সিদ্ধান্তের অধীনস্থ। কনস্টিটুয়েন্সির ভোটারদের মতামতের প্রতি দায়বদ্ধতার ঊর্ধ্বে দলের সিদ্ধান্তের প্রতি তার দায়বদ্ধতা। অতীতে পাকিস্তানি আমলে 'ফ্লোর ক্রসিং'-এর মাধ্যমে সরকারকে অস্থিতিশীল করার কারসাজির অভিজ্ঞতা থেকে এরকম অবস্থা পরিহার করার উদ্দেশ্যে এই বিধান সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সরকারের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য যদি দলীয় আনুগত্যকে প্রাধান্য দিতেই হয়, তাহলে তার সাথে কনস্টিটুয়েন্সি ভিত্তিক FPTP ব্যবস্থা কোনোভাবেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। সরকারের স্থিতিশীলতার প্রয়োজনে দলের প্রতি আনুগত্যকে যদি সর্বোচ্চ স্থান দিতেই হয় তা হলে PR ব্যবস্থাই তার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।

(ঞ) বর্তমান FPTP ব্যবস্থার কনস্টিটুয়েন্সির ভোটারদের জন্য প্রতিনিধি প্রত্যাহার করার সুযোগ রাখার যে দাবি প্রগতিশীল মহল বহুদিন ধরে করে আসছে তা PR ব্যবস্থাতেও প্রবর্তন করা সম্ভব হবে। এক্ষেত্রে কেবল মাত্র একজন সাংসদকে নয়, একটি গোটা দলকে অথবা পুরো সরকারকে ও সংসদকে প্রত্যাহার করার জন্য দেশবাসীর সুযোগ রাখার বিধান অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

(ট) প্রায় দুই শতাব্দী ব্রিটিশ কলোনির অংশ থাকার কারণে আমাদের দেশে FPTP ব্যবস্থা মানুষের কাছে পরিচিত। অনেকের একটা ভুল ধারণা হলো এই যে, এই পদ্ধতিই পশ্চিমা গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে সব দেশে সাধারণভাবে অনুসৃত হয়। কিন্তু বাস্তব সত্য হলো, ইউরোপের প্রায় সব দেশে, দক্ষিণ আমেরিকার বেশিরভাগ দেশে, জাপানে, অস্ট্রেলিয়ায় সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব তথা PR ব্যবস্থা অনুসরণ করা হয়। পার্শ্ববর্তী শ্রীলঙ্কায় ও নেপালে এই ব্যবস্থার প্রচলন রয়েছে। দেশবাসীকে এই নতুন পদ্ধতির সাথে পরিচিত করে তোলা খুব কঠিন কাজ হবে না।

(ঠ) সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব তথা PR পদ্ধতি গ্রহণ করা হলেও এর সাথে আংশিকভাবে FPTP পদ্ধতিও যুক্ত করার সুযোগ রাখা যেতে পারে। অনেক দেশে ৫০% আসন PR পদ্ধতিতে এবং অপর অর্ধেক আসন FPTP পদ্ধতিতে নির্বাচিত হয়। আমরা দুটো পদ্ধতিকেই কাজে লাগাবো কিনা এবং লাগালে কিভাবে দুটোর সমন্বয় ঘটাবো এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারণ করা যেতে পারে। তবে প্রথমে মৌলিকভাবে স্থির করে নিতে হবে যে, আমরা এখন PR ব্যবস্থা সাধারণভাবে প্রবর্তন করবো।

সাহসের সাথে নির্বাচন ব্যবস্থার এরূপ আমূল সংস্কার করতে পারলে দেশে গণতন্ত্র দৃঢ়মূল করার পথে তাৎপর্যপূর্ণ অগ্রগতি ঘটানো যাবে। এ নিয়ে সিরিয়াস মনোনিবেশ করার কাজটিকে আর ফেলে রাখা ঠিক হবে না।

 

লেখক: মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম

সাবেক সভাপতি এবং বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য,

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)