গাইবান্ধায় আদিবাসী-বাঙালি যুব সাংস্কৃতিক উৎসব

গাইবান্ধায় আদিবাসী-বাঙালি যুব সাংস্কৃতিক উৎসব

‘সাঁওতাল জনজাতি-বাঙালির বহুকালের সাংস্কৃতিক লেনদেন অব্যাহত থাকুক’ এই শ্লোগানকে সামনে রেখে সাঁওতালসহ জাতিগত সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষার দাবীকে সামনে রেখে গতকাল শনিবার সাঁওতাল বাঙালি যুব সাংস্কৃতিক উৎসব - ২০২২ নাগরিক সংগঠন জনউদ্যোগ ও বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন অবলম্বনের আয়োজনে শহরের ডিবি রোডের গানাসাস উন্মুক্ত মঞ্চে শনিবার বেলা ১১টা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

এতে ব্যানার, ফেস্টুন হাতে শতাধিক সাঁওতাল তাঁদের ঐতিহ্যবাহী পোশাকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় অংশ নেন। শোভাযাত্রা শেষে গানাসাস উন্মুক্ত মঞ্চে আলোচনা সভা ও সাঁওতাল-বাঙালি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী গাইবান্ধা জেলা সংসদের শিল্পীরা ও সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর নারীরা গান ও নাচ পরিবেশন করেন।

জনউদ্যোগের সদস্য সচিব ও অবলম্বনের নির্বাহী পরিচালক প্রবীর চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মূখ্য আলোচক ছিলেন বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় সংসদ সহসভাপতি ড. শাশ্বত ভট্টাচার্য।। বক্তব্য দেন পরিবেশ আন্দোলন-গাইবান্ধা জেলা সভাপতি ওয়াজিউর রহমান রাফেল, জেলা বার এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও আদিবাসী-বাঙালি সংহতি পরিষদের আহবায়ক অ্যাড. সিরাজুল ইসলাম বাবু, সাঁওতাল যুব নেত্রী আদুরী হাসদা, বাঙালি যুব নেতা সম্পা দেব প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন উদীচী, গাইবান্ধা জেলা সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক শিরিন আকতার।

আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, বহু সংস্কৃতি, বহু ভাষা আর বহু জাতির সম্মিলনে বাংলাদেশ একটি জাতি- বৈচিত্র্যের দেশ। এ দেশের পাহাড় থেকে সমতলে ৫০টি আদিবাসী জাতি বাস করে- যাদের রয়েছে স্বতন্ত্র্য ভাষা ও নিজস্ব সংস্কৃতি। সংখ্যায় প্রায় ৪০ লক্ষাধিক, যা মূল বাঙালি জনগোষ্ঠীর প্রায় ২ ভাগ। এদেশের বৈচিত্র্যময় আদিবাসী ভাষা ও সংস্কৃতির সঙ্গে সংখ্যাগুরু বাঙালিদের পরিচয় নেই বললেই চলে। প্রধান জনগোষ্ঠীর অবহেলা এবং রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের অভাবে আদিবাসীদের ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি আজ প্রায় বিপন্ন। কিছু কিছু এর মধ্যেই হয়ে গেছে বিলুপ্ত। এই বিপন্ন সংস্কৃতি উদ্ধার এবং বিকাশে প্রয়োজনে এ আয়োজন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

একই ভাবে সমতলে বসবাসরত সাঁওতালসহ দেশের ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী মানবাধিকার এবং জীবন মানের সার্বিক দিক দিয়ে আজও নানাভাবে বঞ্চিত এবং সে কারণেই দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর থেকে পিছিয়ে পড়া অবহেলিত জনগোষ্ঠী হিসেবে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে চিহ্নিত। এক কথায় বলা যায়, জাতীয় উন্নয়ন কর্মকান্ডের মূলধারা থেকেই তারা অনেকটা বিছিন্ন।

স্বাধীনতার দীর্ঘ সময় পরও বাংলাদেশে সাঁওতালদের নিজ মাতৃভাষায় শিক্ষালাভের দাবি উপেক্ষিত হয়ে আসছে। বর্তমানে দেশের ৫০টির মতো ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর শিশু বংশপরম্পরায় ভুলতে বসেছে তাদের নিজস্ব ভাষাগত ঐতিহ্য, লোকগাথা, প্রবাদ-প্রবচন ইত্যাদি। সাঁওতাল শিশুদের নিজ মাতৃভাষায় অক্ষরজ্ঞান না থাকায় তাদের সংস্কৃতিও হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত। একটি শিশুর স্বকীয়তা, সৃজনশীলতা, মননশীলতা ও মেধার বিকাশ হয় তার মাতৃভাষার মধ্য দিয়ে। তাই এ দেশে প্রত্যেক সাঁওতাল শিশুর নিজস্ব ভাষা ও নিজ ভাষার বর্ণলিপি শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। চর্চার অভাবে এসব বর্ণমালার সবই এখন বিলুপ্তপ্রায়। ফলে নতুন প্রজন্মের আদিবাসীরা নিজ ভাষায় কথা বলতে পারলেও নিজস্ব ভাষায় তারা একেবারে নিরক্ষর।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তি