৩১ বছর কারাভোগের পর মুক্তি পেতে যাচ্ছেন ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী হত্যাকাণ্ডে যুক্ত এজি পেরারিভালান। বুধবার ভারতের সুপ্রিম কোর্ট পেরারিভালানকে মুক্তির নির্দেশ দেয়।
রাজীবকে হত্যার মূল চক্রান্তকারী শিবরাসনকে দুইটি নয় ভোল্টের ব্যাটারি কিনে দিয়েছিলেন পেরারিভালান। যে ব্যাটারি বোমা তৈরির কাজে লাগে এবং ১৯৯১ সালে সেই বোমা নিজের শরীরে বেঁধে এলটিটিইর নারী সদস্য ধানু যান শ্রীপেরামবুদুরে রাজীব গান্ধীর জনসভায়। ধানুর আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিহত হন ওই সময়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী।
১৯৯৮ সালে ভারতের সন্ত্রাসবাদ বিরোধী আদালত পেরারিভালানকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করে। কিন্তু পরের বছর সুপ্রিম কোর্ট ওই রায় কার্যকর হওয়া স্থগিত করে এবং ২০১৪ সালে মৃত্যুদণ্ড বাতিল করে পেরারিভালানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেয়।
তারপর জেল থেকে মুক্তির জন্য বারবার আবেদন জানিয়ে আসছিলেন পেরারিভালান। তার ওই আবেদন তামিল নাড়ুর মন্ত্রিসভা অনুমোদন করে। কিন্তু গভর্নর সেই সিদ্ধান্ত পাঠিয়ে দেন রাষ্ট্রপতির কাছে।
কেন্দ্রীয় সরকার অবশ্য পেরারিভালানকে মুক্তি দিতে চায়নি। তাদের মত ছিল, রাষ্ট্রপতি এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেননি। তাই পেরারিভালানকে মুক্তি দেয়া যাবে না।
কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, গভর্নর রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্ত মানতে বাধ্য। তাই তার উচিত ছিল পেরারিভালানকে ক্ষমা করে দেয়া। কিন্তু তিনি তা না করে রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্তের অপেক্ষা করছেন।
আর কেন্দ্র জানিয়েছে, রাষ্ট্রপতি ছাড়া আর কারো ক্ষমা করার অধিকার নেই।
সর্বোচ্চ আদালত থেকে প্রশ্ন করা হয়, তাহলে এতদিন ধরে গভর্নররা যেসব অপরাধীদের ক্ষমা করেছেন, সেগুলি কী অসাংবিধানিক ছিল?
বিচারপতি এল নাগেশ্বর রাও নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ বলেন, ‘‘প্রাসঙ্গিক বিবেচনা করেই রাজ্যের মন্ত্রিসভা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা সংবিধানের ১৪২ ধারার অনুশীলন করে দোষী ব্যক্তিকে মুক্তি দেওয়ার উপযুক্ত বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।”
পেরারিভালানের মুক্তি এই মামলায় দোষীসাব্যস্ত বাকি ছয় জনের মুক্তির পথকে সম্প্রসারিত করেছে। যাদের মধ্যে নলীনি শ্রীহরণ এবং তার শ্রীলঙ্কান স্বামী মুরুগানও আছেন।
১৯৯১ সালে পেরারিভালানের বয়স ছিল ১৯ বছর। এখন তার বয়স ৫০ বছর।
পেরারিভালানের মুক্তি প্রসঙ্গে কংগ্রেসের তরফে বলা হয়েছে, রাজীব গান্ধীর হত্যাকারীকে মুক্তি দেয়ার ঘটনায় তারা ব্যথিত।
পেরারিভালান বহু বছর নির্জন কারাগারে ছিলেন। কারাগারে তার ভালো আচরণের রেকর্ড আছে। দীর্ঘ কারাবাসে তিনি লেখপড়া চালিয়ে গেছেন। তিনি একটি বইও লিখেছেন।
গ্রেপ্তারের পর পেরারিভালান বার বার দাবি করেছিলেন, কী উদ্দেশে তাকে ব্যাটারিগুলো কিনে দিতে বলা হয়েছিল তা তিনি জানতেন না। কিন্তু তার কথা শোনা হয়নি।
বেশ কয়েক বছর পর সিবিআই এর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা থিয়াগরাজন স্বীকার করেন, গ্রেপ্তারের পর পেরারিভালানের জবানবন্দি তিনি পাল্টে দিয়েছিলেন এবং এজন্য তিনি ক্ষমা চান।