বিদ্যুৎগতিতে ছড়াতে থাকা করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন পৌঁছে গেছে ১০৬টি দেশে।
রয়টার্স জানিয়েছে, পুরো ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র এবং এশিয়ার কিছু দেশে ওমিক্রনের সংক্রমণ বাড়ছে গুনাত্মক হারে। জাপানের একটি সামরিক ঘাঁটিতে একটি ক্লাস্টার থেকে কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন অন্তত ১৮০ জন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইউরোপীয় প্রধান হ্যানস ক্লুগে ইউরোপের দেশগুলোর জন্য সতর্কবাণী উচ্চারণ করে বলেছেন, “আমরা দেখতে পাচ্ছি, আরেকটা ঝড় আসছে।”
ইউরোপের বিভিন্ন দেশ এরইমধ্যে স্বাস্থ্যবিধির কড়াকড়ি ফিরিয়ে আনতে শুরু করেছে। বড়দিনের পর জনসমাগম ও পার্টি করার ওপর বিধিনিষেধ জারি করেছে জার্মানি।
দেশটির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস মঙ্গলবার তার দেশের নাগরিকদের সতর্ক করে বলেছেন, করোনাভাইরাস বড়দিনে ছুটি কাটাবে না; সংক্রমণের আরেকটা ঢেউ আসছে জেনেও চোখ বন্ধ করে রাখা উচিত হবে না।
বড়দিনের পরদিন থেকে পর্তুগালে সব বার ও নাইটক্লাব বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন জানিয়েছেন, বড়দিনের আগে নতুন কোনো বিধিনিষেধ সেখানে দেওয়া হচ্ছে না। তবে স্কটল্যান্ড, ওয়েলস এবং নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডে জনসমাগমে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।
বিবিসি লিখেছে, সুইডেনে বুধবার থেকেই কড়াকড়ি বাড়ছে। কর্মীদের বাসা থেকে অফিস করতে বলা হয়েছে। বার, ক্যাফে, রেস্তোরাঁর ক্ষেত্রেও বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছে।
নভেম্বরের শেষ দিকে দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন দ্রুত বিশ্বজুড়ে আধিপত্য বিস্তার করছে। ইতোমধ্যে ১০৬টি দেশে ওমিক্রনের সংক্রমণ ধরা পড়েছে বলে খবর দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
এ সংস্থার প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, এতদিন বিশ্বে আধিপত্য বিস্তার করে থাকা করোনাভাইরাসের ডেল্টা ধরন ধীরে ধীরে জায়গা হারাচ্ছে, বাড়ছে ওমিক্রনের সংক্রমণ।
গত এক সপ্তাহে সারা বিশ্বে যত নমুনার জিন বিন্যাস বিশ্লেষণ করা হয়েছে, তার ৯৬ শতাংশ ছিল ডেল্টা। আগের সপ্তাহে এই হার ছিল ৯৯.২ শতাংশ। আর ওমিক্রনের হার এই এক সপ্তাহে ০.৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ১.৬ শতাংশ হয়েছে।
রয়টার্সসিএনএন জানিয়েছে, এখনও দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যায় বিশ্বে শীর্ষে আছে যুক্তরাষ্ট্র। সেখানে গত এক সপ্তাহে কোভিডে আক্রান্তদের ৭৩.২ শতাংশই ওমিক্রনে সংক্রমিত হয়েছেন।
স্পেনে কেবল মঙ্গলবারই ৪৯ হাজার ৮২৩ জন কোভিড রোগী শনাক্ত হয়েছে, যা মহামারী শুরুর পর থেকে এক দিনের সর্বোচ্চ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হ্যানস ক্লুগে বলছেন, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ইউপোরে ওমিক্রনই প্রাধান্য বিস্তার করবে। রোগী বাড়লে চাপ বাড়বে হাসপাতালেও ওপর, তাতে পুরো স্বাস্থ্য ব্যবস্থা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।
সতর্কবার্তা এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কথাতেও। সামরিক বাহিনীর স্বাস্থ্যকর্মীদের তিনি প্রস্তুত থাকতে বলেছেন, যাতে কোভিড সংক্রমণ বেড়ে গেলে হাসপাতালের পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায়।
২০১৯ সালের শেষে চীন থেকে ছড়াতে শুরু করেছিল নতুন করোনাভাইরাস। এরপর গত দুই বছরে বিশ্বজুড়ে ২৭ কোটি ৬২ লাখের বেশি মানুষের মধ্যে এ ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে, মৃত্যু হয়েছে ৫৩ লাখ ৬৮ হাজারের বেশি মানুষের।