বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আলোচনা সভা

জাতীয় ন্যুনতম মজুরি ২০ হাজার টাকা ঘোষনার দাবি


বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আলোচনা সভা

বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আলোচনা সভায় জাতীয় ন্যুনতম মজুরি ২০ হাজার টাকা ঘোষনা এবং বাজেটে বরাদ্ব দিয়ে রেশনিং, আবাসন ও শিক্ষাসহ সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করার দাবী জানানো হয়েছে।

মহান মে দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র'র (টিইউসি) উদ্যোগে "উন্নয়নের সুফল থেকে শ্রমিকরা বঞ্চিত কেন?" শীর্ষক এক আলোচনা সভা ২০ মে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র'র (টিইউসি) সভাপতি সহিদুল্লাহ চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ইনষ্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস) এর মহাপরিচালক বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. বিনায়ক সেন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এমএম আকাশ। আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখোন টিইউসির সাধারন সম্পাদক শ্রমিক নেতা ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খান, সহসভাপতি মাহবুবুল আলম, যুগ্ম সাধারন সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল মালেক, দপ্তর সম্পাদক সাহিদা পারভীন শিখা, অর্থ সম্পাদক কাজী রুহুল আমীন, প্রচার সম্পাদক মোবারক হোসেন, ঢাকা মহানগর সাধারন সম্পাদক ইদ্রিস আলী।

 

আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন মে দিবস সূচনার ১৩৬ বছর আর বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও দেশের শ্রমজীবী মানুষের রাষ্ট্রীয়, সামাজিক, অর্থনৈতিক কোনক্ষেত্রেই মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। তাদের জীবন মানের কোন উন্নয়ন ঘটেনি। শ্রমিক কর্মচারীরা এখনো বাঁচার মত মজুরি, আইএলও কনভেনশন ৮৭ ও ৯৮ অনুযায়ী অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকারসহ অন্যান্য ন্যায়সঙ্গত অধিকার, সামাজিক মর্যাদা ও সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত। গত কয়েক বছর ধরে মুক্তবাজার অর্থনীতির দাপট এবং মুনাফাখোর ফরিয়া ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট কারসাজিতে দ্রব্যমূল্যের ক্রমবর্ধমান উর্ধগতি বর্তমানে এমন অবস্থায় এসে পৌঁছেছে যে শ্রমিক কর্মচারী ও সাধারণ মানুষ এক অসহায় মানবেতর জীবন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছে।

 

ইপিজেড এর জন্য আলাদা শ্রম আইন করা হয়েছে। একটা দেশে দুইটা শ্রম আইন কোনভাবেই থাকতে পারেনা। এটা নিয়ম বহির্ভূত। পার্টিসিপেটরী কমিটির নামে পোশাক শিল্পসহ নতুন নতুন শিল্পের শ্রমিক কর্মচারীদের অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার খর্ব করা হয়েছে। পার্টিসিপেটরী কমিটি কোনভাবেই ট্রেড ইউনিয়নের বিকল্প হতে পারেনা। ট্রেড ইউনিয়ন করতে না পারার কারনে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের এসব শ্রমিকরা ন্যায্য মজুরি ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা নিয়ে দরকষাকষিও করতে পারেনা।

 

অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের বেশিরভাগ শ্রমিকের চাকুরীর নিরাপত্তা ও নিশ্চয়তা নেই। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের চাকুরী স্থায়ী করা হয়না। তাদেরকে ছুটি দেয়া হয়না। একজন শ্রমিক হিসেবে নারী শ্রমিক শ্রম আইন অনুযায়ী সকল অধিকারের সমান অংশীদার হলেও বাস্তব অবস্থা ভিন্ন।সমকাজে সমমজুরি ও নারী পুরুষের মজুরি বৈষম্যতো রয়েছে।  কৃষি ও গৃহস্থালির কাজে নিয়োজিত নারী শ্রমিকদের ব্যাপক অংশগ্রহণ থাকলেও তাদের কাজের কোন স্বীকৃতি নেই। গৃহকর্মে নিয়োজিত নারীরা সবধরনের অধিকার থেকে বঞ্চিত। ভাত কাপড়, মাথাগোঁজার ঠাঁই, শিক্ষা ও চিকিৎসার সুযোগ পাওয়া প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার হলেও আমাদের দেশের শ্রমজীবী মানুষের বিশাল অংশ এখনো এই অধিকার থেকে বঞ্চিত।

 

নেতৃবৃন্দ  বাজার দর,  শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতা, শিল্পের সক্ষমতা, মাথাপিছু জাতীয় আয় বিবেচনায় জাতীয় ন্যুনতম মজুরি ২০,০০০ টাকা নির্ধারণ করে প্রতিবছর বাজার দরের সাথে সংগতি রেখে মহার্ঘ ভাতা প্রদান করতে হবে এবং প্রতি দুই বছর অন্তর বেতন, মজুরি, ভাতা ও সুযোগ সুবিধা প্রদান করতে হবে।  শ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠার শিল্প বিকাশ ও জাতীয় অর্থনীতি সুদৃঢ় করার জন্য ১৯৬৯ সালের আইআরও এবং আইএলও কনভেনশন ৮৭ ও ৯৮ এর আলোকে পছন্দমত সংগঠন,  নেতা নির্বাচন, কর্মসূচী গ্রহণ ও তা বাস্তবায়ন এবং দরকষাকষির অধিকার নিশ্চিত করে গণতান্ত্রিক শ্রমআইন ও শ্রম বিধিমালা প্রনয়ন করার দাবী জানান। কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় শ্রমিকের মৃত্যু অথবা গুরুতর হয়ে কর্মক্ষমতা সম্পুর্ন বিনষ্ট হলে আইএলও কনভেনশন ১২১ অনুযায়ী তাকে আজীবন আয়ের সমান ক্ষতিপূরণ প্রদানের দাবী জানান। নেতৃবৃন্দ কর্মক্ষেত্রে সহিংসতা ও নির্যাতন প্রতিরোধে আইএলও কনভেনশন ১৯০ বাস্তবায়নের দাবী জানান।

 

নেতৃবৃন্দ শ্রমিক কর্মচারী ও নিন্ম আয়ের মানুষের জন্য বিশেষ করে গার্মেন্টস, নির্মাণ, পরিবহন, হোটেল, রেস্টুরেন্ট, চা শ্রমিক, রিকসা শ্রমিক হকার, চাতাল, ওয়েল্ডিং ও গৃহ শ্রমিকদের জন্য রেশন প্রথার মাধ্যমে সস্তা ও সুলভ মুল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি যেমন চাল, ডাল, তেল, চিনি সরবরাহ করার দাবী জানান। সার্বজনীন সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আসন্ন বাজেটে শ্রমিকদের রেশনিং, বাসস্থান, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বরাদ্ধ দিতে হবে।

নেতৃবৃন্দ বাজার দর, শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতা, শিল্পের সক্ষমতা, মাথাপিছু জাতীয় আয় বিবেচনায় জাতীয় ন্যুনতম মজুরি কমপক্ষে ২০,০০০ টাকা নির্ধারণ করে প্রতিবছর বাজার দরের সাথে সংগতি রেখে ভেরিয়েবল ডিএ এবং প্রতি দুই বছর অন্তর বেতন, মজুরি, ভাতা ও সুযোগ সুবিধা পূণনির্ধারন করতে হবে।

শ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠার শিল্প বিকাশ ও জাতীয় অর্থনীতি সুদৃঢ় করার জন্য ১৯৬৯ সালের আইআরও এবং আইএলও কনভেনশন ৮৭ ও ৯৮ এর আলোকে পছন্দমত সংগঠন,  নেতা নির্বাচন, কর্মসূচী গ্রহণ ও তা বাস্তবায়ন এবং দরকষাকষির অধিকার নিশ্চিত করে গণতান্ত্রিক শ্রমআইন ও শ্রম বিধিমালা প্রণয়ন করার দাবী জানান। কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় শ্রমিকের মৃত্যু অথবা গুরুতর হয়ে কর্মক্ষমতা সম্পুর্ন বিনষ্ট হলে আইএলও কনভেনশন ১২১ অনুযায়ী তাকে আজীবন আয়ের সমান ক্ষতিপূরণ প্রদানের দাবী জানান। নেতৃবৃন্দ কর্মক্ষেত্রে সহিংসতা ও নির্যাতন প্রতিরোধে আইএলও কনভেনশন ১৯০ বাস্তবায়নের দাবী জানান।

নেতৃবৃন্দ শ্রমিক কর্মচারী ও নিন্ম আয়ের মানুষের জন্য বিশেষ করে গার্মেন্টস, নির্মাণ, পরিবহন, হোটেল, রেস্টুরেন্ট, চা শ্রমিক, রিকসা শ্রমিক হকার, চাতাল, ওয়েল্ডিং ও গৃহ শ্রমিকদের জন্য রেশন প্রথার মাধ্যমে সস্তা ও সুলভ মুল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি যেমন চাল, ডাল, তেল, চিনি সরবরাহ করার দাবী জানান।