বাজেট প্রতিক্রিয়া

দেশের ৫৭% যুব জনগোষ্ঠী ও সাধারণ মানুষের জন্য সুখবর নেই: যুব ইউনিয়ন

জাতীয় বাজেট ২০২২-২০২৩


দেশের ৫৭% যুব জনগোষ্ঠী ও সাধারণ মানুষের জন্য সুখবর নেই: যুব ইউনিয়ন

বাংলাদেশ যুব ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ বলেছেন, সীমাহীন বেকারত্ব ও মূল্যস্ফীতির বেসামাল পরিস্থিতিতে সঙ্কটকালীন জরুরি কর্তব্য বিবেচনায় ‘সবার মুখে ভাত’ ও ‘সবার হাতে কাজ’র নিশ্চয়তা এবারের বাজেটের মূল লক্ষ্য হওয়ার কথা থাকলেও, মূলত দিকভ্রান্ত অর্থমন্ত্রীর চকচকে কথামালায় পূর্বাপর প্রবঞ্চনামূলক বাজেটের ধারাবাহিকতা এটি। তিনি যে বাজেট প্রস্তাবনা দিয়েছেন তা হতাশাজনক। এ বাজেট জনজীবনকে আরও দুর্বিষহ করে তুলবে।

নেতৃবৃন্দ বলেন, বাজেটে দেশের যুব জনগোষ্ঠী ও সাধারণ মানুষের জন্য সুখবর নেই। বর্তমান সরকার প্রথম থেকেই কথিত অবকাঠামো উন্নয়নের মেগাপ্রকল্প নিয়ে যতোটা আগ্রহ দেখিয়েছে, দেশের কর্মক্ষম যুব জনগোষ্ঠীর প্রতি ঠিক ততোটাই উদাসীনতা অব্যাহত রেখেছে। বিশেষ করে ২৫ বছরের নিচে যে ৫৭% যুব জনগোষ্ঠী দেশে রয়েছে, বাজেটে তাদেরকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা হয়েছে।

বাংলাদেশ যুব ইউনিয়নের সভাপতি হাফিজ আদনান রিয়াদ ও সাধারণ সম্পাদক খান আসাদুজ্জামান মাসুম প্রস্তাবিত বাজেট প্রতিক্রিয়ায় এক বিবৃতিতে বলেন, দেশের মোট শ্রমশক্তির বিপুল অংশকে কর্মহীন রেখে প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব নয়। এ অবস্থায় কর্মসংস্থানকে অগ্রাধিকার দিয়ে পরিকল্পিত দৃশ্যমান বরাদ্দ দেওয়া জাতীয় বাজেটে কাঙ্খিত ছিলো। যা দিয়ে কর্মসংস্থান সঙ্কট সমাধানে স্বল্প ও মধ্য মেয়াদী পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা জরুরি। কিন্তু কর্মসংস্থান প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী আবারও প্রস্তাবনায় সুনির্দিষ্ট ও দৃশ্যমান কোনো পরিকল্পনা উপস্থাপনে ব্যর্থ হয়েছেন। গত দু’বছর থেকে ১০০টি অর্থনৈতিক জোন স্থাপন করে কোনো একদিন ১ কোটি যুবকের কাজের ব্যবস্থা করবেন বলে যে গল্প শোনাচ্ছেন, এবারেও সেই পরিকল্পনা আলোর মুখ দেখেনি। স্টার্টআপ ক্যাপিটালের জন্য যে ১০০ কোটি টাকা গতবার বরাদ্দ ছিলো এবার সেটাও রাখা হয়নি। শুধু বলা হয়েছে স্টার্টআপ উদ্যোক্তাদের বয়সসীমা তুলে দিচ্ছেন। বৃহৎ ও মাঝারি শিল্প ব্যবসায়ীদের নানা সুবিধা দেওয়া হলেও ক্ষুদ্র ও নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য কিছুই সেখানে নেই।

একই সঙ্গে ‘কর্মসংস্থান অধিদপ্তর’ করার প্রস্তাবকে প্রত্যাখান করে  যুব নেতৃবৃন্দ বলেন, এটি সরকারি আমলা নির্ভর ও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে দীর্র্ঘসূত্রিতার নতুন পথ উন্মোচন করে তোলার পাঁয়তারা। অধিদপ্তর করা হলে সরকারি অর্থ নষ্ট করার আরেকটি দৃষ্টান্ত স্থাপন হবে। আমলা নির্ভরতার কারনে কর্মসংস্থান ব্যাংক অকার্যকর হয়ে রয়েছে। যুব সমাজ সেখান থেকে কোনো উপকৃত হয়নি। যুব ইউনিয়ন স্বাধীন ‘জাতীয় কর্মসংস্থান কমিশন’ গঠনের দাবি জানাচ্ছে।

তারা আরও বলেন, ৩৬% ঘাটতি ও ৫.৯ মূল্যস্ফীতি নিয়ে যে বাজেট দেয়া হয়েছে সেখানে ৭.৫% প্রবৃদ্ধির আশা করা অবাস্তব। দেশে ধনী-গরীবের বৈষম্য এখন বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে বাফার স্টক গড়ে তোলা, রেশনিং ব্যবস্থা চালু , টিসিবির কর্মসূচির সম্প্রসারণসহ যেসকল পদক্ষেপ নেওয়ার কথা, বাজেট প্রস্তাবে তা অনুপস্থিত। দরিদ্র-অসহায় মানুষের জন্য ওএমএসের ১০ টাকা কেজির চালের দাম বাড়িয়ে ১৫ টাকা করার কোনো যৌক্তিকতা দেখা যাচ্ছে না। সাধারণ মানুষের প্রকৃত আয় যেখানে ক্রমশঃ নিম্নগামী সেখানে করমুক্ত আয় সীমা না বাড়িয়ে সাধারণ করদাতাদের চোখ রাঙানো হচ্ছে। চাল, ডাল তেল, ঔষধসহ নিত্যপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করে জনজীবনে স্বস্তি দেয়ার মতো কোন প্রচেষ্টাা নেওয়া হয়নি। অন্যদিকে টাকা পাচারকারীদের কালো টাকা বৈধ করতে মাত্র ৭% কর প্রস্তাব করে পাচারকারীদেরকে ছাড়ের পথ তৈরি করা হয়েছে। বাজেটে ব্যাংক থেকে লুট হয়ে যাওয়া এবং খেলাপি ঋণের লাখ কোটি টাকা আদায়ে কোনো পরিকল্পনা নেই। স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের আগাম কর ছাড় দেওয়া হয়েছে সরকারের ভেতরের বিশেষ মহলকে খুশি করতে।

যুব নেতৃবৃন্দ বলেন, করোনা বিপর্যয়ের নির্মম অভিজ্ঞতা থেকে স্বাস্থ্যখাতে প্রতিবছর বরাদ্দ বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা থাকলেও এবার তা আরও কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষাখাতে টাকা বাড়লেও গতবছরের বিবেচনায় বরাদ্দ কমানো হয়েছে। দেশে যেখানে সাম্প্রদায়িকতার সামাজিকীকরণ হয়েছে, সেখানে সংস্কৃতিখাতে বরাদ্দ সর্বনি¤œ পর্যায়ে নামিয়ে আনা উদ্বেগজনক। প্রকারন্তরে কারিগরি শিক্ষার বরাদ্দের সঙ্গে মাদ্রাসা শিক্ষা একত্রিত করে মাদ্রাসা শিক্ষায় উল্লেখযোগ্য বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ না বাড়ানোয় প্রকৃত বরাদ্দ আরও হ্রাস পেয়েছে। প্রতিবন্ধীদের ভাতা নামমাত্র ১০০ টাকা বাড়িয়ে তাদের সঙ্গে একধরনের পরিহাস করা হলো। অথচ চলমান মেগা প্রকল্পসমূহে নতুন করে ৫৮ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়িয়ে দেয়া হলো।

নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, সরকার বিগত ১৩ বছর জাতীয় বাজেটে যুবকদের বঞ্চিত করেছে। এভাবে চলতে পারে না। এবার জাতীয় বাজেটের কর্মসংস্থান সঙ্কট সমাধানে পরিকল্পিত দৃশ্যমান বরাদ্দ দিতে হবে। যুব ইউনিয়ন এ দাবি আদায়ে সর্বাত্মক আন্দোলন গড়ে তুলবে।