রাহুলকে দফায় দফায় জেরা ইডির

রাহুলকে দফায় দফায় জেরা ইডির

ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলায় অর্থনৈতিক দুর্নীতির অভিযোগের তদন্তে নিযুক্ত ভারত সরকারের কেন্দ্রীয় সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) দপ্তরে হাজিরা দিলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। এই মামলায় তাঁকে জেরার জন্য সমন জারি করেছিল ইডি। আজ সোমবার দুই দফায় এই জেরা চলে। আগামী বুধবারও রাহুলকে ইডি দপ্তরে যেতে হবে বলে জানা গেছে।

 

 কংগ্রেস নেতাদের ওপর সমন জারির প্রতিবাদ জানাতে সোমবার দিল্লিসহ দেশের বিভিন্ন রাজ্যে কংগ্রেস নেতা ও সমর্থকেরা আন্দোলনে নামেন। দিল্লিতে শীর্ষস্থানীয় নেতাদের গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া হয় তুঘলক রোড থানায়। এই মামলায় সমন জারি করা হয়েছে কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর ওপরও। কোভিডে আক্রান্ত সোনিয়া বর্তমানে দিল্লির গঙ্গারাম হাসপাতালে ভর্তি। ২৩ জুন ইডি দপ্তরে তাঁর হাজির হওয়ার কথা।

কংগ্রেস আগেই ঘোষণা করেছিল, সমন মেনে ইডি দপ্তরে রাহুলের হাজিরার দিন সারা দেশে সত্যাগ্রহ পালন করা হবে। সেই অনুযায়ী বিভিন্ন রাজ্যে কংগ্রেস নেতা–কর্মীরা সত্যাগ্রহ আন্দোলনে শামিল হন। কংগ্রেসের দাবি, পুরোনো এই মামলা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু রাজনৈতিক হয়রানির উদ্দেশ্যে ইডি নতুন করে মামলার তদন্ত শুরু করেছে। সে কারণে সোনিয়া ও রাহুলের ওপর সমন জারি হয়েছে।

ঘোষণা অনুযায়ী আজ সকালে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারা আকবর রোডে কংগ্রেস সদর দপ্তরে উপস্থিত হন। সেখান থেকে বেলা সাড়ে ১০টা নাগাদ তাঁরা হেঁটে এ পি জে আবদুল কালাম রোডে ইডির নতুন অফিসের উদ্দেশে রওনা হন। রাহুলের সঙ্গে মিছিলে অংশ নেন তাঁর বোন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী, মল্লিকার্জুন খাড়গে, পি চিদাম্বরম, জয়রাম রমেশ, কে সি বেনুগোপাল, রণদীপ সিং সুরজেওয়ালা, রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট, ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী ভুপেশ বাঘেল, লোকসভা সদস্য অধীর চৌধুরী, দেপিন্দর সিং হুডা, দলের অন্যতম মুখপাত্র পবন খেরাসহ অনেকে।

 

কিছুটা পথ যাওয়ার পর দিল্লি পুলিশ মিছিলের পথ আটকায়। রাহুল–প্রিয়াঙ্কা গাড়িতে চেপে ইডি অফিসে চলে যান। কংগ্রেসের শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া হয় তুঘলক রোড থানায়। কোনো কোনো নেতাকে নিয়ে যাওয়া হয় ফতেপুর খেরিতে। বাধা পেয়ে কংগ্রেস কর্মীরা সেখানেই অবস্থান সত্যাগ্রহ শুরু করেন।

 

দিল্লির অন্যত্রও কংগ্রেস নেতা–কর্মীরা সত্যাগ্রহে অংশ নেন। কেউ কেউ টুইট করে বলেন, দিল্লির জেল ভরে যাবে কিন্তু কংগ্রেস আন্দোলন থামাবে না। রাহুল ইডি অফিসে যাওয়ার পর প্রিয়াঙ্কা যান তুঘলক রোড থানায়, দলের শীর্ষ নেতাদের যেখানে আটক করে রাখা হয়েছিল। দিল্লি পুলিশ জানায়, বিভিন্ন কারণে মিছিল করার অনুমতি কংগ্রেসকে দেওয়া হয়নি। বিনা অনুমতিতে মিছিল করার জন্য নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ইডি দপ্তরে রাহুল পৌঁছান বেলা ১১টা নাগাদ। বেলা সোয়া দুইটা নাগাদ ইডি দপ্তর থেকে রাহুল বেরিয়ে আসেন। পরে জানা যায়, রাহুল–প্রিয়াঙ্কা গিয়েছিলেন গঙ্গারাম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সোনিয়ার কাছে। বিকেল পৌনে চারটার সময় রাহুল দ্বিতীয় দফায় হাজির হন ইডি দপ্তরে।

শীর্ষ কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে আজও বলেছেন, এই মামলা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ছাড়া অন্য কিছু নয়। শাসক দল রাজনীতি করছে বলেই আট বছর ধরে তদন্তের নামে প্রহসন চালাচ্ছে। এভাবে এই সরকার বিরোধীদের হয়রানি করে। বিজেপি যথারীতি কংগ্রেসকে আক্রমণ করেছে। দলের মুখপাত্র সম্বিত পাত্র বলেছেন, শিগগিরই সত্য প্রকাশিত হবে। অন্যদিকে আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা বলেছেন, এভাবে মিছিল করে ইডি দপ্তরে যাওয়ার মধ্য দিয়ে রাহুল বুঝিয়ে দিলেন তিনি ভয় পেয়েছেন। সত্য চাপা দিতে চান। কোনো অন্যায় না করলে এই নাটকের প্রয়োজন হতো না।