রোববার সকাল ৬টা থেকে সর্বসাধারণের পদ্মা সেতুতে যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়ায় মাওয়া প্রান্তের টোল প্লাজা ঘিরে যানবাহনের লম্বা লাইন ছিলো। পদ্মা সেতুতে টার্গেট অতিক্রম করে প্রথম ৮ ঘন্টায় ১৫ হাজার ২০০ যানবাহন পারাপার করেছে। এতে আয় ৮২ লাখ ১৯ হাজার ৫০ টাকা।
অপরদিকে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাট ছিল আজ অনেকটা ফাঁকা। শিমুলিয়া মাঝিরকান্দি রুটে সকাল থেকে কোন ফেরি ছেড়ে যায়নি বা মাঝিরকান্দি থেকেও শিমুলিয়া ঘাটে কোন ফেরি আসেনি।
সেতুর মাওয়া প্রান্তে টিকিট কেটে প্রথম পার হয়েছেন এক মোটরসাইকেল আরোহী। তাঁর নাম আমিনুল ইসলাম (৩৫)। এসেছেন ঢাকার কামরাঙ্গীরচর এলাকা থেকে। তিনি জানান, তাঁর সঙ্গে শতাধিক মোটরসাইকেল আরোহী রয়েছেন। ভোর থেকেই টোলপ্লাাজা হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলগামী মানুষ গাড়ি নিয়ে পদ্মা সেতু পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছেন। উচ্ছ্বসিত যাত্রীরা আর যানবাহনের চালকরা দিনভর যেন উৎসব করছে সেতুতে। রাত থেকেই পদ্মা সেতুর টোল প্লাজা ঘিরে চলছে উৎসব। যাত্রী ও যানবাহনের লম্বা লাইন তৈরি হয়। ট্রাক-বাস ও কারের লাইনের সাথে বিপুল সংখ্যক মোটরসাইকেল পার হচ্ছে। পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তের টোল প্লাজা ঘিরে যানবাহনের লম্বা লাইন থাকলেও বিরক্তি ছিল না কারো মধ্যে। স্বপ্নজয়ের সেতুতে করে প্রথম দিনই পদ্মা পার হতে ব্যাকুল তারা।
মাওয়া প্রান্তের ৬টির মধ্যে ৫টি বুথ দিয়ে টোল আদায় করা হচ্ছে। পদ্মা সেতুতে টার্গেট অতিক্রম করে প্রথম ৮ ঘন্টায় ১৫ হাজার ২০০ যানবাহন পারাপার করেছে। আয় ৮২ লাখ ১৯ হাজার ৫০ টাকা।
ট্রাক-বাস ও কারের লাইনের সাথে বিপুল সংখ্যক মোটরসাইকেলও পার হচ্ছে। রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে দলবেঁধে আসে টোল প্লাজার লাইনে। সেতুর টোল আদায় আরও দ্রুততর করার দাবি তাদের।
কর্তৃপক্ষ বলেছে, প্রথম দিনের কারণে কিছুটা চ্যালেঞ্জ। তবে আধুনিক প্রক্রিয়ার অটোমেটিক ট্রানজ্যাকশন চালু করলে চাপ বেশি থাকলেও লাইন লম্বা হবে না। সেতু বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ও পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) ড. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘‘পদ্মা আমাদের স্বপ্নের সেতু। এদশের গর্বের সেতু। সকাল ৬টায় গাড়ি চলাচল শুরু করার কথা থাকলেও আমারা কিন্তু এর আগে শুরু করেছি। মানুষ এবং যানবাহন রাত থেকেই ভিড় করছে। আমরা মাওয়া প্রান্তে ভোর পৌণে ৬টায় এবং জাজিরা প্রান্তে ৫ টা ৪০ মিনিটে সেতু সাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। সকাল থেকে এখানে গাড়ির অনেক চাপ ছিল। কিন্তু এটা স্বাভাবিকতা না। আজকে অনেকেই সেতু পার হতে এসেছে প্রথম দিনের সাক্ষী হতে। আমরা দেখেছি অনেকে সারারাত রাস্তায় ছিল ভোর হতে পদ্মা সেতু পার হবে। সবাই উস-খুস ছিল কখন পার হবে। মজার ব্যাপার হচ্ছে সব বয়সী মানুষের ভিড় কিন্তু ছিল। নারী পুুরুষ সবাই ছিল। আমাদের এখানে ৫টি লেনে টোল নেয়া হচ্ছে। সরকারের নির্ধারিত হারে এই টোল নেয়া হচ্ছে এবং কম্পিউটারে রিসিট দেওয়া হচ্ছে। তিনি আরও জানান সেতু সংশ্লিষ্ট সবাই স্বত:স্ফূর্তভাবে কাজ করছেন।
প্রথম সুযোগেই সেতু পার হওয়ার জন্য রাত থেকে পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তে ছিল গাড়ির দীর্ঘ সারি। মাওয়া টোলপ্লাজায় ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে টোল আদায় করায় সময় একটু বেশি লাগছে। মাওয়া প্রান্তের ৬টির মধ্যে ৫টি বুথ দিয়ে টোল আদায় করা হচ্ছে।
পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ রজব আলী জানান, প্রথম প্রথম একটু সমস্যা হচ্ছে, সেই সাথে সময়ও একটু বেশি লাগছে। দু'একদিন গেলে সব ঠিক হয়ে যাবে। তিনি আরও জানান, নির্ধারিত টোল পরিশোধ করে থ্রি-হুইলার ছাড়া যেকোনো গাড়ি পার হতে পারছে।
সরকারের নির্ধারণ করা টোল হার অনুযায়ী, ছোট বাসে ১৪০০ টাকা, মাঝারি বাসে ২০০০ টাকা এবং বড় বাসে ২৪০০ টাকা টোল দিতে হবে। ছোট ট্রাকের টোল ১৬০০ টাকা, মাঝারি ট্রাকে ২১০০-২৮০০ টাকা, বড় ট্রাকে ৫৫০০ টাকা। পিকআপের টোল ১২০০ টাকা। কার ও জিপের টোল ধরা হয়েছে ৭৫০ টাকা, মাইক্রোবাসে ১৩০০ টাকা এছাড়া মোটরসাইকেলে ১০০ টাকা।
এর আগে শনিবার পদ্মা সেতু আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে করে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। যোগাযোগের ক্ষেত্রে তৈরি হয়েছে যুগান্তকারী সাফল্য। পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তের টোল প্লাজায় ৬টি লেনের মধ্য একটি করে লেনে অটোমেটিক ট্রানজ্যাকশন সিস্টেম রাখা হয়েছে। তবে এখনো তা চালু হয়নি। পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তের টোল প্লাজার ৬টি লেনের মধ্য ৫ লেনে প্রতি ঘন্টায় গড়ে ১২০টি যান টোল পরিশোধ করে সেতু উঠছে।
এদিকে পদ্মা সেতুতে যান চলাচলের পর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার প্রবেশদ্বার মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাট ছিল অনেকটা ফাঁকা। এতদিন এই ঘাট দিয়েই ওই অঞ্চলের যাত্রীরা লঞ্চ, স্পিডবোট বা ফেরি করে পাড়ি দেয় উত্তাল পদ্মা। ঘাট ছিল সরগরম। কিন্তু আজকে চিত্র পুরোটাই উল্টো। শিমুলিয়া মাঝিরকান্দি রুটে সকাল থেকে কোন ফেরি ছেড়ে যায়নি বা মাঝিরকান্দি থেকেও শিমুলিয়া ঘাটে কোন ফেরি আসেনি। এই তথ্য দিয়ে শিমুলিয়া ঘাটের সহ মহাব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম জানান, সকাল থেকে এই ঘাটে কোন ধরনের যান আসেনি। এমনকি কোন পণ্যবাহী কোন পিকাপ, ট্রাকও আসেনি। একটিও কোন ধরনের আজ ঘাটে আসেনি। এই ঘাটের ইতিহাসে এটা বিরল ঘটনা। তাই কোন ঘাট থেকে ফেরি ছেড়ে যায়নি।
শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর রোববার ভোর ৫টা ৫০ মিনিট থেকে যান চলাচলের জন্য তা খুলে দেয়া হয়। এর প্রভাব পড়েছে ফেরি, লঞ্চ ও স্পিডবোট ঘাটে। ঘাট এলাকা অনেকটাই যানবাহন শূণ্য ও কোলাহলমুক্ত দেখা গেছে।