মুজিববর্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য বর্তমান সরকারের দেওয়া প্রতিশ্রুত বাস্তবায়নে আরও ২৬ হাজার ২২৯টি পরিবারকে জমিসহ পাকা ঘর হস্তান্তর করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্য দিয়ে দেশের ৫২টি উপজেলা গৃহহীন ও ভূমিহীনমুক্ত হিসেবে ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী।
বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পাঁচটি আশ্রয়ন প্রকল্পে যুক্ত হয়ে এই ঘরগুলো হস্তান্তর করেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় গণভবন প্রান্তে অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন প্রধানমন্ত্রী মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ডিজিটাল উপস্থাপনা করেন আশ্রয়ণ প্রকল্প-২’র প্রকল্প পরিচালক আবু সালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান প্রমুখ। প্রকল্পএলাকাতে অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকরা।
প্রধানমন্ত্রী সংযুক্ত হওয়া পাঁচটি আশ্রয়ন প্রকল্পগুলো হলো— লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরকলাকোপা আশ্রয়ন প্রকল্প, বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার গৌরম্ভা আশ্রয়ন প্রকল্প, ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার চর ভেলামারী আশ্রয়ন প্রকল্প, পঞ্চগড় সদর উপজেলার মাহান পাড়া আশ্রয়ন প্রকল্প এবং মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার জঙ্গালিয়া আশ্রয়ন প্রকল্প।
প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা দেওয়া ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত ৫২টি উপজেলা হলো— ঢাকার নবাবগঞ্জ; মাদারীপুরের মাদারীপুর সদর; শরীয়তপুরের ডামুড্যা; কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী; টাঙ্গাইলের গোপালপুর; মানিকগঞ্জের ঘিওর ও সাটুরিয়া; রাজবাড়ীর কালুখালী; ফরিদপুরের নগরকান্দা; নেত্রকোনার মদন; ময়মনসিংহের ভালুকা, নান্দাইল, ফুলপুর ও ফুলবাড়িয়া; জামালপুরের বক্সীগঞ্জ; চট্টগ্রামের পটিয়া, কর্ণফুলী, সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া; লক্ষ্মীপুরের রায়পুর ও রামগঞ্জ; ফেনীর ফেনী সদর, ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী ও পরশুরাম।
এই তালিকায় আরও রয়েছে— গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ; পঞ্চগড়ের আটোয়ারী, পঞ্চগড় সদর, দেবীগঞ্জ, তেঁতুলিয়া ও বোদা; দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ; ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী; নীলফামারীর ডিমলা; নওগাঁর রাণীনগর; জয়পুরহাটের পাঁচবিবি; রাজশাহীর মোহনপুর, চারঘাট ও বাঘা; বগুড়ার নন্দীগ্রাম ও দুপচাঁচিয়া; নাটোরের বাগাতিপাড়া; পাবনার ঈশ্বরদী; চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ; ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু; সাতক্ষীরার তালা; মাগুরার মাগুরা সদর, শ্রীপুর, মহম্মদপুর ও শালিখা; ঝালকাঠির কাঠালিয়া; এবং পটুয়াখালী দশমিনা।
মুজিববর্ষ উপলক্ষে গৃহীত বিশেষ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ২ শতক জমিসহ সেমিপাকা একক ঘর দেওয়া হচ্ছে ভূমি ও গৃহহীন একেকটি পরিবারকে। প্রথম পর্যায়ে ২০২১ সালের ২৩ জানুয়ারি জমির মালিকানাসহ ৬০ হাজার ১১১টি ঘর হস্তান্তর করা হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে একই বছরের ২০ জুন জমির মালিকানাসহ হস্তান্তর করা হয় ৫৩ হাজার ৩০০টি ঘর। প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে নির্মিত মোট একক ঘরের সংখ্যা ১ লাখ ১৭ হাজার ৩২৯টি।
চলমান তৃতীয় পর্যায়ে (২০২১-২২) মোট বরাদ্দ করা ঘরের সংখ্যা ৬৭ হাজার ৮০০টি। এর মধ্যে গত ২৬ এপ্রিল হস্তান্তর করা হয় ৩২ হাজার ৯০৪টি ঘর। আর আজ বৃহস্পতিবার হস্তান্তর হলো ২৮ হাজার ২২৯টি ঘর। এর বাইরে নির্মাণাধীন রয়েছে ৮ হাজার ৬৬৭টি ঘর।
সব মিলিয়ে তিন পর্যায়ে ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত বরাদ্দ করা মোট একক ঘরের সংখ্যা ১ লাখ ৮৫ হাজার ১২৯টি। এর জন্য অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৪ হাজার ২৮ কোটি ৯৬ লাখ টাকা।
আশ্রয়ন প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, তৃতীয় পর্যায়ে চরাঞ্চলের জন্য বিশেষ নকশায় তৈরি করা হয়েছে ১ হাজার ২৪২টি ঘর। আর সার্বিকভাবে গৃহহীনদের জন্য ঘর তৈরি করে দিতে সারাদেশে খাস জমি উদ্ধার করা হয়েছে ৫ হাজার ৫১২ একর। এর আনুমানিক স্থানীয় বাজারমূল্য ২ হাজার ৯৬৭ কোটি ৯ লাখ টাকা। এর বাইরেও সারাদেশে ১৯১ দশমিক ৭৯ একর জমি কিনেছে সরকার। এর জন্য ব্যয় হয়েছে ১৩৪ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। কেনা জমিতে পুনর্বাসিত ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের সংখ্যা ৮ হাজার ৪৬২টি।