দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে সংগতি রেখে মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে মৌলভীবাজারের জুড়ী ও লংলা ভ্যালির ৭০টি চা-বাগানে দ্বিতীয় দিনের মতো শ্রমিকেরা কর্মবিরতি পালন করেছেন। আজ বুধবার সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টা এ কর্মবিরতি পালিত হয়। এ সময় কয়েকটি স্থানে শ্রমিকেরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।
শ্রমিকদের সূত্রে জানা গেছে, চা-শ্রমিক ইউনিয়নের সঙ্গে চা-বাগানের মালিকপক্ষের সংগঠন বাংলাদেশীয় চা-সংসদের করা চুক্তি অনুযায়ী চা-শ্রমিকদের মজুরিসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নির্ধারণ করা হয়। দুই বছর পরপর এ চুক্তি নবায়নের কথা। সর্বশেষ ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি দ্বিপক্ষীয় চুক্তি সম্পাদন করা হয়। ওই চুক্তিতে শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। পরে আর নতুন করে চুক্তি হয়নি। সম্প্রতি চা-শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে চা-সংসদ মজুরি ১৪ টাকা বৃদ্ধির প্রস্তাব দেয়। কিন্তু শ্রমিকনেতারা এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। শ্রমিকদের মজুরি ৩০০ টাকা করার দাবি জানান তাঁরা।
শ্রমিকদের বর্ধিত মজুরি নির্ধারণসহ অন্যান্য দাবিদাওয়া পূরণের বিষয়ে ১ আগস্ট চা-শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে বাংলাদেশীয় চা-সংসদের কাছে চিঠি দেওয়া হয়। চিঠিতে দাবি মেনে নিতে সাত দিনের সময়সূচি বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে দাবি না মানায় সংগঠনের পক্ষ থেকে কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
জুড়ী, বড়লেখা ও কুলাউড়া উপজেলার মোট ৩৬টি বাগানে কর্মবিরতি পালিত হয়েছে। কাল বৃহস্পতিবারও এ কর্মসূচি চলবে।
আজ সকাল ১০টার দিকে দেখা যায়, জুড়ীর রত্না চা-বাগানের কারখানার সামনে ৭০০ থেকে ৮০০ শ্রমিক নারী-পুরুষ জড়ো হয়ে কর্মবিরতি পালন করেন। সেখানে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন রত্না বাগান শ্রমিক পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি সুমন ঘোষ ও এলাপুর ফাঁড়ি বাগান কমিটির সভাপতি চন্দন চাষা। পরে শ্রমিকেরা জুড়ী-বটুলি শুল্ক স্টেশন সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এ সময় মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে তাঁরা বিভিন্ন স্লোগানও দেন।
চা-শ্রমিক ইউনিয়নের জুড়ী ভ্যালি কমিটির সভাপতি কমল চন্দ্র ব্যানার্জি বলেন, তাঁদের আওতাধীন জুড়ী, বড়লেখা ও কুলাউড়া উপজেলার মোট ৩৬টি বাগানে কর্মবিরতি পালিত হয়েছে। কাল বৃহস্পতিবারও এ কর্মসূচি চলবে। এরপর সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী কর্মসূচি নেওয়া হবে।
সংগঠনের লংলা ভ্যালি কমিটির আওতায় কুলাউড়া উপজেলার ৩৪টি বাগান রয়েছে। ভ্যালি কমিটির সাধারণ সম্পাদক সঞ্জু গোস্বামী বলেন, বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম দিন দিন বেড়ে চলেছে। বেড়েছে অন্যান্য খরচও। কিন্তু তাঁদের মজুরি বাড়েনি। মজুরি ৩০০ টাকা নির্ধারণ করতে হবে। অন্যথায় কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে তিনি হুঁশিয়ারি করেন।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশীয় চা-সংসদের চেয়ারম্যান মো. শাহ আলম মুঠোফোনে বলেন, ‘আমাদের ক্যাপাসিটি অনুযায়ী মজুরি ১৪ টাকা বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছিলাম। অনেক বাগান লসে আছে। চায়ের বাজার ভালো নয়। এখন জ্বালানি তেলের দামও বেড়ে গেছে। শ্রমিকদের রেশনের আটা দেওয়া হয়। প্রতি কেজি গমের দাম ১৪ টাকা থেকে বেড়ে ২৮ টাকা হয়ে গেছে। এসবও তো ভাবতে হবে।’