সেনা অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত মিয়ানমারের গৃহবন্দি নেত্রী অং সান সুচিকে দুর্নীতির দায়ে ৬ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন দেশটির আদালত।
মামলার সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সোমবার (১৫ আগস্ট) দুর্নীতির চারটি মামলায় সু চিকে দোষী সাব্যস্ত করে এ সাজা দেওয়া হয়।
স্বাস্থ্য ও শিক্ষার প্রচারে নিজের প্রতিষ্ঠিত সংস্থা ডাও খিন কি ফাউন্ডেশনের তহবিলের অপব্যবহার, সরকারি মালিকানাধীন জায়গা বিশেষ ছাড়ে লিজ নেওয়া এবং নিয়ম লঙ্ঘন করে বাড়ি তৈরির অভিযোগে সু চি এ সাজা পেয়েছেন।
মামলার রায়ের বিষয়ে মন্তব্যের জন্য মিয়ানমারের সামরিক সরকারের মুখপাত্র জ্য মিন তুনের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
তবে যথাযথ প্রক্রিয়া মেনেই স্বাধীন বিচার বিভাগ সু চির মামলা পরিচালনা করছে বলে জানিয়েছিলেন তিনি। একই সঙ্গে মামলাগুলোয় বিদেশিদের সমালোচনাকে হস্তক্ষেপের শামিল বলেও দাবি করেন তিনি।
৭৭ বছর বয়সী এ নোবেলজয়ী নেত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি থেকে নির্বাচনী আইন-নীতিমালা লঙ্ঘনসহ কমপক্ষে অন্তত ১৮টি অপরাধের অভিযোগ এনেছে মিয়ানমারের জান্তা সরকার। সবগুলো মামলার রায়ে দোষী সাব্যস্ত হলে সু চির ১৯০ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।
যদিও তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করেছেন অং সান সুচি। সু চির সমর্থকদের দাবি, তার বিরুদ্ধে হওয়া মামলাগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
এরই মধ্যে অন্যান্য মামলায় দোষী প্রমাণিত হওয়ায় মিয়ানমারের রাজধানী নেইপিদোর একটি নির্জন কারাগারে কারাবন্দি গণতন্ত্রকামী নেত্রীকে ১১ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
অং সান সুচি এর আগেও সামরিক শাসনের বিরোধিতার করার জন্য গৃহবন্দি ছিলেন। ২০১০ সালে মুক্তি পাওয়ার পর ২০১৫ সালের নির্বাচনে তার দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) জয়লাভ করে।
২০২০ সালের নভেম্বরের নির্বাচনে সু চির দল পুনরায় জয়লাভ করলেও ভোট কারচুপির অভিযোগ আনে সামরিক বাহিনী। নির্বাচন কমিশন সে সময় সামরিক বাহিনীর অভিযোগ খারিজ করে দেয়।
সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ও লড়াইয়ে শত শত মানুষ নিহত হওয়ার পর থেকে মিয়ানমারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। এ সময় হাজার হাজার মানুষকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে এবং অনেককে নির্যাতন, মারধর বা হত্যা করা হয়েছে- যেগুলোকে মানবতাবিরোধী অপরাধ বলে অভিহিত করেছে জাতিসংঘ।
বিভিন্ন দেশের আন্তর্জাতিক সংস্থা মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং সু চির গোপন বিচারকে প্রহসনমূলক বলে অ্যাখ্যা দিয়েছে।
সু চির রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) কথা উল্লেখ করে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া অঞ্চলের উপ-পরিচালক ফিল রবার্টসন বলেছেন, মামলার রায় সু চির অধিকারের ওপর ভয়ানক হামলা এবং তাকে ও এনএলডিকে চিরতরে শেষ করে দেওয়ার প্রচেষ্টার অংশবিশেষ।