নারীরা বেশি নিগ্রহের শিকার গণপরিবহনে

নারীরা বেশি নিগ্রহের শিকার গণপরিবহনে

বাস, লঞ্চ বা ট্রেনের মতো গণপরিবহন ও টার্মিনালে নারীরা সবচেয়ে বেশি নিগ্রহের শিকার হন। অনেক নারী একাধিকবার নিগ্রহের শিকার হন। তাঁদের মধ্যে শিক্ষার্থী বেশি।

 

জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) এবং আওয়ামী লীগের গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) এক যৌথ জরিপে এমন চিত্র উঠে এসেছে। চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত দেশের ৮ বিভাগের ২৪ জেলায় এ জরিপ চালানো হয়। ই-মেইল, ফেসবুক ও মুঠোফোনে বার্তা পাঠিয়ে জরিপ চালানো হয়। এতে ৫ হাজার ১৮৭ তরুণী ও নারী অংশ নেন।

 

অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৪৩ শতাংশের বয়স ২৫ থেকে ৩৪ ও ৩৫ শতাংশের বয়স ১৮ থেকে ২৪ বছর। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৩৮ শতাংশের শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতকোত্তর, ৩২ শতাংশ শিক্ষার্থী।

ইউএনডিপির হিউম্যান রাইটস প্রোগ্রামের জেন্ডার বিশেষজ্ঞ বীথিকা হাসান  বলেন, দুটি উদ্দেশ্যে এই জরিপ। প্রথমত, জনপরিসরে নারী নিগ্রহের বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো। দ্বিতীয়ত, এ বিষয়ে নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ।

জরিপের ফলাফলে বলা হয়, নারী ও তরুণীদের ৬৬ শতাংশ বলেন, তাঁরা একাধিকবার নিগ্রহের শিকার হয়েছেন। প্রায় নিয়মিত নিগ্রহের শিকার হন, এমন নারী ৭ শতাংশ।

নিগ্রহের নানা ধরন রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৪২ শতাংশ ইভ টিজিংয়ের শিকার হন। এর মধ্যে আছে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য, শিস দেওয়া বা শরীরের সংবেদনশীল অংশে হাত দেওয়া। অশোভন আচরণের শিকার হন ১৫ শতাংশ নারী। এর মধ্যে আছে অশ্লীলতা প্রদর্শন ও অনাকাঙ্ক্ষিত চাহনি। ১২ শতাংশ নারী প্রকাশ্যে শারীরিক স্পর্শের শিকার হন। নিগ্রহের শিকার হলেও এর ধরন বলতে রাজি হননি ১৫ শতাংশ নারী।

 

৩৬ শতাংশ নারী বাস, রেল, লঞ্চসহ বিভিন্ন গণপরিবহনে নিগ্রহের শিকার হন। ৫৭ শতাংশ নারী মনে করেন, তাঁদের জন্য গণপরিবহন সবচেয়ে অনিরাপদ। সড়কেও নিগ্রহের শিকার হন ২৩ শতাংশ নারী। অন্যান্য জায়গার মধ্যে আছে দোকান বা শপিং মল, ফেসবুক, মেসেঞ্জার, ইনস্টাগ্রাম বা টুইটারের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম।

বিকেলে সবচেয়ে বেশি ২৩ শতাংশ নিগ্রহের ঘটনা ঘটে।

নিগ্রহের ঘটনা ঘটার পর কী করেন—এমন প্রশ্নের জবাবে ৩৫ শতাংশ বলেন, তাঁরা প্রতিবাদ করেন। ৩৪ শতাংশ কোনো প্রতিবাদ করেননি। মাত্র ১ শতাংশ নারী জানিয়েছেন, তাঁরা ৯৯৯–এ ফোন করেছিলেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানানোর হারও ১ শতাংশ।

সিআরআইয়ের সহকারী সমন্বয়ক ইশরাত ফারজানা বলেন, ‘জরিপে আমরা নারীদের নিগ্রহসংক্রান্ত অনুধাবনের বিষয়গুলো জানার চেষ্টা করেছি। সুরক্ষার ক্ষেত্রে তাঁদের মতের প্রতিফলনও উঠে এসেছে জরিপে।’

জরিপে অংশ নেওয়া ৪৮ শতাংশ নারী মনে করেন, নারীর প্রতি সম্মানের অভাবে নিগ্রহের ঘটনা ঘটে। ৬৪ শতাংশ নারী মনে করেন, এসব ঘটনার প্রতিবাদ করা উচিত। তাঁরা মনে করেন, নিগ্রহ বন্ধে সঠিক পারিবারিক শিক্ষা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা ও আইনের যথাযথ প্রয়োগ দরকার।

জানতে চাইলে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য জেসমিন আরা বেগম বলেন, ‘আমাদের দেশে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে সুনির্দিষ্ট কোনো আইন নেই। আমরা আইনের একটি খসড়া আইন মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছি। এটা নিয়ে কাজ হচ্ছে।’