বাংলাদেশের বনাঞ্চল ক্রমশ কমছে। এর মধ্যে অন্যতম কারণ গুজব। প্রতিনিয়ত গুজবে বণ্যপ্রাণী হত্যার শিকার হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে জীববৈচিত্র্য। কূটতথ্য ছড়িয়ে উজাড় হচ্ছে বন। ইনস্টিটিউট ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভলপমেন্টের (আইইডি) একটি গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।
সোমবার (২৫ মার্চ) রাজধানীর মোহাম্মদপুরে এইচকেএস আরেফিন কনফারেন্স হলে এক সেমিনার এ গবেষণা প্রকাশ করা হয়। দি এশিয়া ফাউন্ডেশনের সহায়তায় সেমিনারটির আয়োজন করে ইনস্টিটিউট ফর এনভায়রনমেন্ট এন্ড ডেভেলপমেন্ট (আইইডি)। আইইডির গবেষণা কনসালট্যান্ট কামরুশ শহীদ হাফিজ আদনানের নেতৃত্বে এ গবেষণা পরিচালিত হয়। গবেষণা দলের অন্য সদস্য হলেন পরিবেশ প্রকৌশলী তারিকুল ইসলাম ও সেন্ট স্টিফেন্স কলেজের (ভারত) রিসার্চ ফেলো সিয়াম সারোয়ার জামিল।
গবেষণাটিতে বাংলাদেশের টাঙ্গাইল (মধুপুর), কক্সবাজার (টেকনাফ), শেরপুর (ঝিনাইগাতী), চট্টগ্রাম (সিতাকুন্ডু) বাগেরহাট (মোংলা) ও রাংগামাটিতে (সদর) অর্থাৎ মোট ৬ জেলার বনাঞ্চল এলাকার ১০০ বাসিন্দার ওপরে এ গবেষণা করা হয়। এর মধ্যে ৫০ বাঙালি ও ৫০ জন ক্ষুদ্র নৃতাত্বিক গোষ্ঠীর সদস্যরা অংশ নেন। যাদের বয়স ১৮ থেকে ৫৫।
গবেষণায় দেখা গেছে, বন্যপ্রাণী নিয়ে আক্রান্ত, ভয় ও আতঙ্কের হার বনে বসবাসকারী আদিবাসী বা ক্ষুদ্র নৃতাত্বিক গোষ্ঠীর চেয়ে বনে বসবাস করা বাঙালিদের বেশি। গবেষণায় অংশ নেওয়া ৮৮ শতাংশ বাঙালিই বনের উপদ্রপ, বন্যপ্রাণীদের আক্রমণ নিয়ে উদ্বিগ্ন। তবে নৃতাত্বীক গোষ্ঠীর সদস্যদের মাত্র ১৭% উদ্বিগ্ন। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে
এসব মানুষের ৭২ শতাংশ গুজব কী- তা বোঝেন না। ৯২% শতাংশই ভুতে বিশ্বাস করেন। ৪৮% প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বন্যপ্রাণী হতার সঙ্গে জড়িত, যার ৮৮% বাঙালি। ১২% আদিবাসী বা ক্ষুদ্র নৃতাত্বিক গোষ্ঠীর সদস্য।
বনে বসবাসকারী এসব মানুষের ৪৮% বন্যপ্রাণীর'হামলার শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে বাঙালি ৬৭%, আদিবাসীদের এই হার ৩৩%। ৫৭% মূলত হাতির উপদ্রব নিয়ে আতংকিত, সাপ নিয়ে ৬২%। অন্যান্য প্রাণীর ২২ শতাংশ।
বনে ভুত আছে এমনটা মনে করেন ৭৫%, গাছ কাটলে বন উজাড় ভুত চলে যেতে পারে এমনটা মনে করেন ৩৩%। ৮৮ শতাংশ জানিয়েছেন, তারা প্রথমে বিশ্বাস করেছেন, এমন ঘটনা পরে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মিথ্যা হয়েছে।
৮৮ শতাংশ ইদুরকে মূল ক্ষতিকর প্রাণী বলে মনে করেন, ৬২ শতাংশ সাপকে। হাতিকে মনে করেন ৪৫%। অংশগ্রহণকারী ৯২% মানুষের সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্ট নেই। তবে ফেসবুকের নাম শুনেছেন ৪২%।
আইইডির নির্বাহী পরিচালক নুমান আহম্মেদ খানের সভাপতিত্বে সেমিনারে বক্তব্য রাখেন ডাকসুর সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও আইইডিসিআরের উপদেষ্টা এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা মোশতাক হোসেন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন আন্দোলনের (পরিজা) সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ উজ্জল, জাতীয় আদিবাসী ফোরামের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হরেন্দ্রনাথ সিং, পরিবেশ গবেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক ড ফাতেমা ইয়াসমিন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলকামা আজাদ, আইইডির জ্যেষ্ঠ সমন্বয়কারী জ্যোতি চট্রোপাধ্যায়। সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন তারিক হোসেন মিঠুল।