শিরোনাম
চট্টগ্রাম বন্দরের নিয়ন্ত্রণ বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আগামীকাল শাহবাগে প্রতিবাদ সমাবেশে চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের ইজারা দিলে দেশের নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব হুমকীতে পড়বে গ্রামীণ মজুরদের কাজ, ন্যায্য মজুরির নিশ্চয়তা দিতে হবে মিরপুরে আগুনে পুড়িয়ে শ্রমিক হত্যার প্রতিবাদে মশাল মিছিল জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করছেনা সিপিবিসহ চার বামদল জুলাই জাতীয় সনদের সর্বশেষ সংস্করণ সংশোধন না হলে স্বাক্ষর সম্ভব নয় আগুনে পুড়িয়ে মানুষ হত্যার তদন্ত ও বিচার করতে হবে  মিরপুরের আনোয়ার ফ্যাশন ও কেমিক্যাল গোডাউনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে সিপিবি ঢাকা মহানগর উত্তরের শোক ও সমবেদনা চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের লিজ দিতেই অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় বসেছে - সিপিবি এই সনদে সংবিধানের চার মূল নীতিকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে

নোবেল শান্তি পুরষ্কার পাওয়া কে আসলে এই মারিয়া মাচাদো?

ড. মঞ্জুরে খোদা টরিক


নোবেল শান্তি পুরষ্কার পাওয়া কে আসলে এই মারিয়া মাচাদো?

এবারের নোবেল শান্তি পুরষ্কার পেলেন ভেনিজুয়েলার শিল্পপতির মেয়ে মারিয়া কোরিনা মাচাদো। মারিয়া মাচাদো কেন পেলেন শান্তি পুরষ্কার? তাঁর অবদান কি? তার অবদান তিনি ভেনিজুয়েলার মার্কিন আগ্রাসন বিরোধী বামপন্থী যে সরকার ক্ষমতায় আছে’ তাকে অবৈধভাবে, ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করতে চান। মার্কিন নকশায় যিনি ভেনিজুয়েলাতে আত্মগোপনে থেকে নিরলসভাবে এই কাজ করছেন, তিনিই হচ্ছেন এই ২০২৫এ শান্তিতে নোবেল বিজয়ী মারিয়া কোরিনা মাচাদো।

মারিয়া কোরিনা মাচাদো আসলে কে?

তিনি একজন কট্টর ডানপন্থী রাজনীতিবিদ, যিনি ২০০২ সালে এক সামরিক অভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছিলেন এবং সেই সময় এমন একটি ডিক্রিতে স্বাক্ষর করেছিলেন যা ভেনিজুয়েলার গণতান্ত্রিক সংবিধান ও সব সরকারি প্রতিষ্ঠান বিলুপ্ত করে দেয়। পরবর্তিতে তিনি আরেকটি সরকারবিরোধী অভ্যুত্থান প্রচেষ্টায় অংশ নেন এবং তিনি ছিলেন তার মূল কুশীলবদের অন্যতম একজন। সেই সময় সহিংস সড়ক অবরোধে মানুষও নিহত হয়।

শান্তিতে নোবেল পাওয়া এই মাচাদো’র কৃতিত্ব কি জানুন—

১। তিনি নিজ দেশ ভেনিজুয়েলায় বার বার যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছেন,

২। ভেনিজুয়েলার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আরোপের দাবি করেছিলেন, যার পরিপ্রেক্ষিতে সে দেশ প্রায় দশ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা গেছেন,

৩। তিনি গাজায় জায়নবাদীদের গণহত্যার প্রতি প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়ে আলোচিত হয়েছেন।

৪। ভেনিজুয়েলায় সামরিক অভ্যুত্থান ও আগ্রাসনের জন্য তিনি গণহত্যাকারী নেতানিয়াহুর সমর্থন চেয়েছিলেন,

৫। ভেনিজুয়েলা থেকে নৌকায় অভিবাসনের যাওয়া সাধারণ মানুষদের যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যার ঘটনায় উল্লাস প্রকাশ করেছিলেন।

তাহলে এই রকম একজন ব্যক্তি কীভাবে শান্তিতে নোবেল পান..?

কারন:

ভেনিজুয়েলা বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রমাণিত তেল মজুতের দেশ (প্রায় ৩০০ বিলিয়ন ব্যারেল)। যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে সেখানে তেল আমদানির উপর নির্ভরশীল ছিল। কিন্তু হুগো শাভেজ ও পরবর্তীতে নিকোলাস মাদুরো সরকার রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে তেল কোম্পানি পরিচালনা করে এবং মার্কিনের অধিকাংশ কোম্পানিকে দেশ থেকে বের করে দিয়েছেন।

ওয়াশিংটন চায় সেখানে একটি প্রো-আমেরিকান সরকার প্রতিষ্ঠা করতে যাতে করে ভেনিজুয়েলার রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানীগুলোর নীতি ও বিনিয়োগ তাদের শর্তে করা যায় কিন্তু ভেনিজুয়েলার বর্তমান নির্বাচিত বাম সরকার তা হতে দিতে চায় না।

সমাজতান্ত্রিক ও বামপন্থী শাভেজ ও মাদুরো “বলিভারিয়ান বিপ্লব” চালু করেন, যা মার্কিন “নিওলিবারেল” নীতির বিপরীত। সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে ভেনিজুয়েলাকে মার্কিন বিরোধী সরকার হিসেবে নানা তৎপরতায় লিপ্ত আছে।

 ওয়াশিংটন ভিত্তিহীন অভিযোগে দাবি করে যে, মাদুরো সরকার নির্বাচনে কারচুপি, বিরোধীদের দমন ও মানবাধিকার লঙ্ঘন করে গণতন্ত্র ধ্বংস করেছে। সুতরাং তারা ’গণতন্ত্র উদ্ধারে’ সরকার বিরোধী মার্কিনপন্থীদের ক্ষমতায় আনতে অগণতান্ত্রিক পথ অনুসরণ করছে। এ লক্ষ্যে তারা বিরোধী নেতা হুয়ান গুয়াইদোকে ২০১৯ সালে “অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট” হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

ভেনিজুয়েলার অর্থনীতিকে পঙ্গু করতে আমেরিকা তাদের তেল রপ্তানিতে কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এর মাধ্যমে মাদুরো সরকারকে দুর্বল ও প্রতিনিয়ত জনঅসন্তোষ উসকে দেয়ার চেষ্টা করছে। এমন কি তাদের আঞ্চলিক সমুদ্র যুদ্ধ জাহাজ পাঠিয়ে নজরদারীও করছে। এই নিয়ে উভয় দেশের মধ্যে উত্তেজনাও বিরাজমান অনেক দিন ধরে। জাতীয় নিরাপত্তায় ভেনিজুয়েলা রাশিয়া ও চীনের কাছ থেকে ঋণ, অস্ত্র ও প্রযুক্তি সহায়তা নিচ্ছে এতেও যুক্তরাষ্ট্র তাদের উপর ক্ষিপ্ত হয়েছে।

মার্কিন বাণিজ্যিক অবরোধের কারণে- ভেনিজুয়েলার মুদ্রাস্ফীতি ও জনজীবনে কিছু সংকট তৈরী করছে যুক্তরাষ্ট্র ও পাশ্চাত্য দেশগুলো এই সংকটকে মাদুরো বিরোধী প্রোপাগান্ডায় ব্যবহার করছে।

ট্রাম্পকে শান্তি পুরস্কার না দেওয়ায় নোবেল কমিটিকে নিন্দা জানিয়েছে হোয়াইট হাউস। যদিও ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিবর্তে ভেনেজুয়েলার কথিত গণতন্ত্রপন্থী এক নেতাকে নোবেল পুরষ্কার দেয়ায় হোয়াইট হাউস মানে ট্রাম্পে এই পুরষ্কারকে "শান্তিকে ছাড়িয়ে রাজনীতি" করার অভিযোগ তুলেছেন। যদিও ট্রাম্প নোবেল শান্তি পুরষ্কার না পাওয়ায় অনেক আনন্দ করছেন। কিন্তু তিনি এই পুরষ্কার না পেলেও তাদেরই এক অনুগত সহযোগী সেটি পেয়েছেন। মাচাদো আবার এই পুরষ্কার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে উৎসর্গ করেছেন! কি বুঝলেন? এটাই নোবেলের রাজনীতি।

বাংলাদেশের পত্রিকা শিরোনাম করেছে, বিলাসী জীবন ছেড়ে গণমানুষের নেতা হওয়া মারিয়া কোরিনা মাচাদোকে নোবেল দেয়া হলো। দেশের গণমাধ্যমও হয়েছে পশ্চিমা মিডিয়া যা বমি করে তাই তারা চেটে তোলে। এর ভাল-মন্দর বিচার বোধও তারা হারিয়েছে, নয়তো তারা তাদের সহযাত্রী মাত্র। গণমানুষের নেতা তো আসলে কলাম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো- যিনি জাতিসংঘের ভিতরে-বাইরে ফিলিস্তিনের শাস্তির পক্ষে কথা বলে আমেরিকা থেকে বহিষ্কার হয়েছেন! তাকে কি পুরষ্কার দেবে নোবেল কমিটি?

শান্তিতে নোবেল জয়ী এই ডানপন্থী মাদাচোও হয়তো একদিন মার্কিন ও পশ্চিমা শক্তির মেটিকুলাস ডিজাইনের কোন কালার রেভ্যুশেশনে- ভেনিজুয়েলার ত্রাণ কর্তা হিসেবে আবির্ভূত হবেন। তেল ও খনিজসম্পদ সমৃদ্ধ জেনিজুয়েলা মার্কিন কর্পোরেটের ভাগ-বাটোয়ারা ও শোষনের শিকার হবে, সে কথা ভেবেই আৎকে উঠি।

লেখকঃ ড. মঞ্জুরে খোদা টরিক

লেখক-গবেষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক