বগুড়ার সোনাতলায় যুবদল নেতা রাশেদুল হাসান রাশেদ হত্যাকাণ্ডে নতুন করে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ফোন আলাপকে কেন্দ্র করে হত্যার নির্দেশদাতার নাম প্রকাশ হওয়ার দাবি উঠেছে। ওই অডিওতে রাশেদ হত্যা মামলার প্রধান আসামি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আব্দুল হান্নান বাটালু এবং জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি মাজেদুর রহমান জুয়েলের কথোপকথন রয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে।
ভাইরাল হওয়া অডিওতে প্রধান আসামি হান্নান বাটালুকে অভিযোগ করতে শোনা যায় যে, সোনাতলা উপজেলা বিএনপির সভাপতি একেএম আহসানুল তৈয়ব জাকির তাকে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করেছিলেন। তিনি কথোপকথনে বলেন, “আমি জাকির ভাইকে অনেক বুঝানোর চেষ্টা করেছি। উনি আমাকে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করেছে। শুধু স্ট্রোক করা বাকি ছিলো। তারপর বাধ্য হয়ে আমি রাশেদের দুর্ঘটনা (হত্যা) ঘটাইছি।”
উল্লেখ্য, ২০২৫ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সোনাতলায় বিএনপি নেতা হান্নান বাটালু ও তার সহযোগীদের হামলায় গুরুতর আহত হয়ে মারা যান যুবদল নেতা রাশেদুল হাসান (২৭)। তবে এর আগেই, ৭ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় পাকুল্লা বাজারে তাকে লক্ষ্য করে প্রথম হামলার ঘটনাটি ঘটেছিল। নিহতের পরিবার অভিযোগ করে জানায়, ওইদিন ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হান্নান বাটালু ও তার লোকজন রাশেদের ওপর হামলা চালান। হান্নান বাটালু দীর্ঘদিন ধরে উপজেলা বিএনপির সভাপতি জাকির হোসেনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, পাকুল্লা বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে এলাকায় ত্রিমুখী বিভক্তি সৃষ্টি হয়। এক পক্ষের নেতৃত্বে ছিলেন ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হান্নান বাটালু, অন্য দুই পক্ষের নেতৃত্বে ছিলেন ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি আলী হাসান নারুন ও সাবেক জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি মাজেদুর রহমান জুয়েল। এই রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যেই ৭ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় জুয়েল প্রায় ২৫–৩০টি মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে পাকুল্লা বাজারে মহড়া দেন। হান্নান দাবি করেন, জুয়েল তার বাড়িতে আক্রমণ করতে গিয়েছিলেন এবং সেই বহরে যুবদল নেতা রাশেদও ছিলেন।
বিএনপি নেতা আলী হাসান জানান, সেদিন সন্ধ্যায় রাশেদ মোটরসাইকেলযোগে যাওয়ার সময় হান্নান বাটালুর নেতৃত্বে থাকা লোকজন তাকে ধাওয়া করে। একপর্যায়ে রাশেদ এক বাড়িতে আশ্রয় নিলে সেখানে ঢুকেই তাকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
এদিকে হত্যার নির্দেশদাতার বিষয়ে ফোনালাপকে কেন্দ্র করে উঠা অভিযোগ দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করেছেন সোনাতলা উপজেলা বিএনপির সভাপতি একেএম আহসানুল তৈয়ব জাকির। তিনি দাবি করেন, এটি সম্পূর্ণ ভুয়া ও পরিকল্পিতভাবে ছড়ানো একটি অডিও। তিনি বলেন, “অডিওটি একেবারেই ভুয়া। অনেক আগেই এমন একটি অপপ্রচার ছড়ানো হয়েছিল। বিষয়টি নিয়ে আমি ওই ইউনিয়নের সভাপতিকে জিজ্ঞেস করলে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, আমার সঙ্গে তার কখনোই এ ধরনের কথোপকথন হয়নি।”
জাকির আরও বলেন, রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগতভাবে তাকে হেয় করার উদ্দেশ্যে কুচক্রী মহল বারবার এসব অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি জানান, দীর্ঘদিন উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করায় তার স্বাভাবিকভাবেই কিছু শত্রুপক্ষ আছে, যারা তার সামাজিক অবস্থান ক্ষুণ্ণ করতে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করছে।
মনোনয়ন নিয়ে অসন্তোষের গুঞ্জন প্রসঙ্গে জাকির জানান, তিনি দলীয় মনোনয়ন চাইলেও কখনোই দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার মতো কাজ করেননি। তিনি বলেন, “আমি মনোনয়ন চাই। আগেও চেয়েছি, এবারও চেয়েছিলাম। না পেলেও দলের মনোনীত ব্যক্তির বিরুদ্ধে কাজ করা আমার নীতি নয়।”
অডিও নিয়ে বিভ্রান্ত না হতে সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে জাকির বলেন, “এটি একটি পরিকল্পিত অপপ্রচার, যার সঙ্গে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।”
