গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে লটারির নামে জুয়ার জমজমাট আসর

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে লটারির নামে জুয়ার জমজমাট আসর

সুন্দরগঞ্জে সরকারি উচ্চ বালক বিদ্যালয় মাঠে লটারির নামে জুয়ার জমজমাট আসরের কারণে ব্যহত শিক্ষার পরিবেশ, সর্বশান্ত হচ্ছেন শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ।

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আব্দুল মজিদ সরকারি উচ্চ বালক বিদ্যালয় ও সুন্দরগঞ্জ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে বীর মুক্তিযোদ্ধা হস্ত কুঠির শিল্প ও পণ্য মেলার নামে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে লটারির নামে জুয়া চালানোর অভিযোগ উঠেছে। এতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠদান ও ২ জুন থেকে অর্ধ বার্ষিক, এসএসসি প্রাক-নির্বাচনী পরীক্ষার পরিবেশ মারাত্মক বিঘ্নিত হচ্ছে। পাশাপাশি পুরস্কার পাওয়ার আশায় লটারির নামে লাখ লাখ টাকার টিকেট কেটে সর্বশান্ত হচ্ছেন এলাকার সাধারণ মানুষ।

জানা গেছে, কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ায় সুন্দরগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড ইউনিটের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডারের দায়িত্বে আছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আল-মারুফ। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড ইউনিটের আর্থিক সহায়তার জন্য তিনি যশোহর জেলার জাহাঙ্গীর হোসাইন নামে এক ব্যক্তির সহযোগিতায় জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে অনুমোদন সাপেক্ষে হস্ত কুঠির শিল্প ও পণ্য মেলার আয়োজন করেন। গত ১৯ মে একমাস ব্যাপী মেলার উদ্বোধন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ব্যারিষ্টার শামিম হায়দার পাটোয়ারী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক আফরুজা বারী। মেলা উদ্বোধনের প্রথম দিন থেকেই ২ থেকে ৩টি মোটর সাইকেলসহ বিভিন্ন পুরস্কারের প্রলোভন দিয়ে লটারীর নামে জুয়া চলছে রমরমা ভাবে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সুন্দরগঞ্জ আব্দুল মজিদ সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ ঘেষে সুন্দরগঞ্জ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। মেলার গেটে ব্যবহার করা হয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি। মাঠে ঢুকেই উত্তর দিকে একটি এতিমখানা এবং চারদিকে আবাসিক এলাকা। স্কুলের সামনে অবস্থিত শহীদ মিনার। এই রকম পরিবেশে মুক্তিযোদ্ধাদের নাম জড়িয়ে জুয়ারিদের বিশাল প্যান্ডেলে লটারির আসর। গত ১৪ দিনে মেলায় কয়েকটি ফুচকা-চটপটির দোকান ছাড়া হস্ত কুঠির শিল্প ও পণ্যের কোন স্টল বসে নাই। লটারি নামে জুয়ার কিছু টিকেট/কুপন সংগ্রহ করে দেখা গেছে, তাতে মুজিব বর্ষের লোগো ব্যবহার করেছে জুয়ারিরা। লাল, লীল ও হলুদ রংগের টিকিটের চারটি অংশ রয়েছে। একটি অংশ অফিসের জন্য, একটি গ্রাহক অংশ, একটি কুপন বাক্সের জন্য এবং একটি অংশ গেট পাস হিসেবে ব্যবহার করার জন্য।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আব্দুল মজিদ সরকারি উচ্চ বালক বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষক জানান, বিদ্যালয় মাঠে মেলার আয়োজন করে শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত করা হচ্ছে। এছাড়া কোমলমতি শিক্ষার্থীরা টিফিনের টাকা দিয়ে লটারির টিকেট কিনছেন। তারা লটারির টিকেট কেটে জুয়ার প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে। তারা আরও বলেন, আগামী ২ জুন থেকে বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণির অর্ধবার্ষিক ও প্রাক নির্বাচনী পরীক্ষা। এসএসসি পরীক্ষা ১৯ জুন থেকে শুরু হবে। এই অবস্থায় বিদ্যালয় মাঠে মেলার নামে লটারি চালিয়ে কোমলমতি শিশুদের শিক্ষার পরিবেশ বিঘিœত করা হয়েছে।

উপজেলার যুবলীগ লীগ নেতা শহিদুল ইসলাম বলেন, জুয়ারিদের লোকজন প্রতিদিন প্রায় ৬০/৭০ টি অটো রিকসা ও ভ্যানে লটারির টিকেট এবং বক্স নিয়ে বেরিয়ে পরে প্রতিটি ইউনিয়নের গ্রামে-গঞ্জে। মাইকিং করে আকর্ষণীয় পুরষ্কারের লোভ দেখিয়ে টিকিট বিক্রি করেন তারা। প্রতিটি টিকেটের মুল্য ২০ টাকা। পুরস্কার পাওয়ার আশায় নারী-পুরুষ, শিশু, স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা ২০ থেকে ৩০টি এমনকি ১০০টি পর্যন্ত টিকেট ক্রয় করে সর্বশান্ত হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, জুয়াড়িরা সাংবাদিকসহ প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতাদের ম্যানেজ করে এসব করছেন। পুরস্কারের আশায় লটারিতে টাকা হেরে যেকোন মুহূর্তে অঘটন ঘটতে পারে।

মেলায় লটারি পরিচালনাকারি জে.বি ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মালিক জাহাঙ্গীর হোসাইন বলেন, তাদের মেলার অনুমতি আছে। তবে লটারির অনুমতি নেই। মেলার মাঠে হস্ত কুঠির শিল্প ও পণ্য মেলার কোন স্টল নেই কেন? এমন প্রশ্নের উত্তর তিনি বলেন, কেউ স্টল না দিলে আমাদের করার কি আছে। তারপরও ২ জুনের মধ্যে মধ্যে স্টল বসানো হবে বলে তিনি জানান। লটারির নামে জুয়া বন্ধ হবে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, প্রশাসন বাধা দিলে তা বন্ধ করা হবে।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আল-মারুফের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তিনি ফোন রিসিভ করেন নাই। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোঃ অলিউর রহমান বলেন, মেলায় লটারি বন্ধ করার জন্য ইউএনওকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোনভাবেই সেখানে লটারি চালানোর কথা না। তারপরও বিষয়টি দেখছি।