গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে সাহেবগঞ্জ বাণিজ্যিক খামারে রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা (ইপিজিড) স্থাপনের পরিকল্পনা বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই জমিকে পৈত্রিক সম্পত্তি দাবি করে মঙ্গলবার সকালে উপজেলার কাটামোড় এলাকায় এই কর্মসূচি পালন করে আদিবাসী সাঁওতাল ও বাঙালিরা। সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, আদিবাসী-বাঙালি সংহতি পরিষদ, গাইবান্ধা সামাজিক সংগ্রাম পরিষদ এই বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে। ‘সাঁওতাল ভূমিতে ইপিজেড নয়’ উল্লেখ করে বক্তারা সাঁওতালদের রক্তে ভেজা তিন ফসলি জমি নষ্ট করে ইপিজেড স্থাপনের পরিকল্পনা বাতিলের দাবি জানান।
সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক ফিলিমন বাস্কের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য দেন, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল বারাকাত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক রুবায়েত ফেরদৌস, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন, এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা সভাপতি গোলাম মারুফ মনা, জেলা বার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারাণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বাবু, বাসদ নওগাঁ জেলা আহ্বায়ক জয়নাল আবেদিন মুকুল, গাইবান্ধা সামাজিক সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর কবীর তনু, আদিবাসী-বাঙালি সংহতি পরিষদের নেতা গোলাম রব্বানী মুসা, প্রবীর চক্রবর্তী এবং অন্যান্যের মধ্যে দিপায়ন খিসা, আফজাল হোসেন, মৃনাল কান্তি বর্মণ প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, তিন সাঁওতাল হত্যার বিচারের দাবিতে ছয় বছর ধরে আদালতসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের দ্বারস্থ হলেও সবাই বিচারের নামে শুধু টালবাহানা করে যাচ্ছে। সাঁওতাল হত্যা মামলার আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাঁদের কেউ গ্রেপ্তার করে না। এ নিয়ে সাঁওতালদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তারা সরকারের প্রতি তিন সাঁওতাল হত্যায় জড়িতদের দ্রæত গ্রেপ্তার করে বিচার এবং জমি ফেরতের পাশাপাশি বসতবাড়িতে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর, লুটপাটের ঘটনায় ক্ষতিপূরণের দাবি জানান। বক্তারা আরও বলেন, সাঁওতালদের রক্তে ভেজা জমিতে ইপিজেড করতে দেওয়া হবে না।
উল্লেখ্য, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাহেবগঞ্জ এলাকায় রংপুর চিনিকলের আওতায় ১ হাজার ৮৪২ একর জমি আছে। এই জমিতে উৎপাদিত আখ রংপুর চিনিকলে মাড়াই হতো। ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর চিনিকল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ এসব জমিতে উচ্ছেদ করতে গেলে সাঁওতালদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এতে তিন সাঁওতাল শ্যামল হেমব্রম, রমেশ টুডু ও মঙ্গল মার্ডি নিহত হন। এই পরিস্থিতিতে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (বেপজা) কর্তৃপক্ষকে ইপিজেড বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়। বেপজা সাহেবগঞ্জ এলাকায় ইপিজেড স্থাপনের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু স্থানীয় সাঁওতালরা এখানে ইপিজেড না করার জন্য আন্দোলন করছেন।