গার্মেন্ট শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা ঘোষণা এবং সোয়েটার, জ্যাকার্ডসহ সকল গ্রেডে একই হারে মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের উদ্যোগে কেন্দ্রীয় শ্রমিক সমাবেশে বক্তারা বলেছেন, মালিকপক্ষ মজুরি বৃদ্ধির নামে শ্রমিকের প্রকৃত মজুরি কমিয়ে দেয়ার চক্রান্ত করছে। সরকার বাজার পরিস্থিতি বিবেচনা করে দ্রুত মজুরি বৃদ্ধির ঘোষণা দেয়ার পরিবর্তে নানান টালবাহানা করে চলেছে। সমাবেশ নেতৃবৃন্দ হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেন, অক্টোবর মাসের মধ্যে মজুরি বৃদ্ধি ও নিম্নতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা ঘোষণা না করা হলে নভেম্বরে সর্বাত্মক ধর্মঘটে যেতে বাধ্য হবে শ্রমিকরা।
আজ ২৯ সেপ্টেম্বর, শুক্রবার, বিকেল ৪টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বৃষ্টিবিঘিœত আবহাওয়া উপেক্ষা করে কেন্দ্রীয় শ্রমিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র’র সভাপতি শ্রমিক নেতা মন্টু ঘোষের সভাপতিত্বে, সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ শাহাজাহান ও দপ্তর সম্পাদক আজিজুল ইসলামের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন গার্মেন্ট টিইউসির প্রতিষ্ঠাকালীন উপদেষ্টা উপমহাদেশের প্রখ্যাত শ্রমিকনেতা, বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ মনজুরুল আহসান খান, সংগঠনের উপদেষ্টা জননেতা আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন, সাধারণ সম্পাদক সাদেকুর রহমান শামীম, সহ-সভাপতি জলি তালুকদার, জিয়াউল কবির খোকন, কেন্দ্রীয় নেতা দুলাল সাহা, আকলিমা আক্তার ডলি, আব্দুস সালাম বাবুল, শাহীন আলম, ময়না আক্তার প্রমুখ।
সমাবেশে মনজুরুল আহসান খান বলেন, মানুষের বাক্স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করে আন্দোলন দমন করা যাবে না। তিনি সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, দেশের শ্রমজীবী মেহনতি মানুষকে অভুক্ত রেখে তীব্র শোষণ বঞ্চনার মধ্য দিয়ে উন্নয়নের গৌরব করা হচ্ছে। মানুষের খাদ্য, চিকিৎসা ও সন্তানের লেখা-পড়ার অধিকার বঞ্চিত শ্রমিকরা তাদের হক আদায় করতে রাজনৈতিক সংগ্রামে নেমেছে। তিনি সমবেত সহস্রাধিক শ্রমিকের উদ্দেশ্যে বলেন, সরকার দাবি অনুযায়ী মজুরি বৃদ্ধিতে ব্যর্থ হলে অতীতের মতো রাজপথের সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অধিকার আদায় করতে হবে।
আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন বলেন, বর্তমানে দেশ লুটেরাদের স্বার্থে পরিচালিত হচ্ছে। দেশের ৯৫ ভাগ শ্রমিক মেহনতি মানুষ লুটপাট ও অর্থ পাচারের নির্মম পরিণতি ভোগ করছে। তিনি বলেন, এই পরিস্থিতিতে শ্রমিকশ্রেণির রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করাই মুক্তির পথ। তিনি আরও বলেন, দেশের শ্রম মন্ত্রণালয় থাকলেও সেটা শ্রমিকদের স্বার্থে কাজ না করে মালিকের স্বার্থ রক্ষা করে চলেছে। নামে মন্ত্রণালয় শ্রম মন্ত্রণালয় হলেও প্রকৃত অর্থে তা মালিক মন্ত্রণালয়ে পরিণত হয়েছে। তিনি গত ৬ মাসে গার্মেন্ট শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধিতে গঠিত মজুরি বোর্ডে মালিক ও তথাকথিত শ্রমিকপক্ষ কোনো প্রস্তাব পেশ না করায় ক্ষোভ ব্যক্ত করেন। মজুরি বোর্ড ঘেরাও করে ২৫ হাজার টাকা নিম্নতম মজুরি আদায় করার ঘোষণা দেন।
সমাবেশে গার্মেন্ট টিইউসির সভাপতি শ্রমিকনেতা মন্টু ঘোষ বলেন, বাংলাদেশের তুলনায় পৃথিবীতে এত কম মজুরি আর কোথাও দেয়া হয় না। তিনি প্রশ্ন করেন, পোশাক রপ্তানিতে আমরা যদি শীর্ষে থাকতে পারি, তাহলে মজুরি প্রদানে আমরা কেন সবার তলায় অবস্থান করছি? উৎপাদন ব্যয় বাড়লে যদি মূল্য সমন্বয় করা হয়, তাহলে উৎপাদনের অন্যতম প্রধান শক্তি শ্রমিকের মজুরি কেন বাড়বে না? তিনি সকল শিল্প এলাকায় মজুরি বৃদ্ধির দাবির সমর্থনে আন্দোলন সংগঠিত করতে সমবেত নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে আহ্বান জানান।
গার্মেন্ট টিইউসির সাধারণ সম্পাদক সাদেকুর রহমান শামীম বলেন, পোশাক শিল্পের মালিকরা অর্থনীতির চরম দুর্দিনে ডলারে তাদের মুনাফার অংক গুণছেন কিন্তু শ্রমিক মজুরি পাচ্ছে টাকায় এবং ৫ বছর আগে নির্ধারণ করা হিসাবে। তিনি বলেন, ২০১৮ সালে সর্বশেষ ঘোষিত নি¤œতম মজুরি সেসময়ের প্রেক্ষাপটে শ্রমিকদের প্রয়োজন, বাজারদর এবং দাবির সাথে সামান্যও সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিলো না। গত কয়েক বছরে জিনিসপত্রের দাম, বাড়ি ভাড়া বহু গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। শ্রমিকদের শুধু নয় বর্তমান পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের অবস্থা চরম বেগতিক। এই অবস্থায় বিদ্যমান মজুরি দিয়ে দেশের ৭৮ ভাগ রপ্তানি আয় করা পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের পক্ষে কোন রকম জীবন ধারণ করাও সম্ভব হচ্ছে না।
সমাবেশে গার্মেন্ট টিইউসির সহ-সভাপতি জলি তালুকদার বলেন, মানুষের অন্নের অধিকার ও বাঁচার মতো মজুরি দাবি করাই ন্যায়সঙ্গত। যারা ফ্যাসিবাদী কায়দায় নিরন্ন মানুষের প্রতিবাদের কন্ঠরোধ করার অপচেষ্টায় লিপ্ত তারা স্বৈরাচারী শাসকের দোসর। স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেই মানুষের ভাতের অধিকার আদায় করতে হবে। তিনি বলেন, আইন নির্ধারিত সময় ৮ অক্টোবরের মধ্যে সরকারের দিক থেকে নতুন মজুরি কাঠামো ঘোষণা করার কোনো পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। তিনি বলেন, অক্টোবরে ২৫ হাজার টাকা মজুরি ঘোষণা করা না হলে নভেম্বর মাসে সর্বাত্মক শ্রমিক ধর্মঘট করে দাবি আদায় করা হবে।
সমাবেশে শেষে একটি বিশাল মিছিল রাজধানীর কদমফুল ফোঁয়ারা, তোপখানা রোড, পল্টন মোড় হয়ে মুক্তিভবনে এসে শেষ হয়