২০২২-২৩ অর্থবছরের খসড়া বাজেট গতকাল (৯ জুন, ২০২২) মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন লাভ করে। বরাবরের মতই এবারও শিক্ষাখাতে সরকার তাদের দেওয়া প্রতিশ্রুত বরাদ্দ নিশ্চিত করে নাই।
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি মো: ফয়েজ উল্লাহ এবং সাধারণ সম্পাদক দীপক শীল এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, "শিক্ষাখাতে বাজেট বৃদ্ধি সংক্রান্ত নানান গালভরা গল্প আমরা প্রতিবছর বাজেটের সময়ই দেখে আসি। এবারও তার ব্যতিক্রম হয় নাই। শিক্ষাখাতে যে বাজেট বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে তা অপ্রতুল। সরকার বিভিন্ন আন্তর্জাতিক শিক্ষা কনভেনশনে করা প্রতিশ্রুতিই রক্ষা করতে পারছে না। নিজেদের পকেট ভরার বাজেট করতে যেয়ে শিক্ষাখাত বরাবরই উপেক্ষিত থেকে যায়। এবারের বাজেটেও শিক্ষাখাতের সাথে প্রযুক্তি খাতকে যুক্ত রাখা হয়েছে, অথচ শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছিলো শিক্ষাখাত থেকে অন্যান্য খাতগুলোকে আলাদা করার। সরকারের মেগা প্রজেক্টের দূর্নীতির ভার এসে শিক্ষাখাতেই পড়বে এবারের বাজেটের মধ্যদিয়ে। শিক্ষা উপকরণসমূহের দাম কমানোর কোন প্রস্তাব আমরা বাজেট থেকে দেখতে পাইনি। আমরা বার বার বলে আসছিলাম ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে ১৬ ভাগ বরাদ্দ দিয়ে ক্রমান্বয়ে ২৫ ভাগ বরাদ্দের দিকে আগাতে হবে। কিন্তু এই দাবি বরাবরের মতো এবারো উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। করোনা পরিস্থিতিতে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবনে ফিরিয়ে আনার বিশেষ কোন উদ্দ্যোগ পরিলক্ষিত হয়নি বাজেটে। শিক্ষাকে পণ্যে পরিণত করার এই পাঁয়তারা দীর্ঘদিনের। এবারের বাজেটেও শিক্ষাকে বেসরকারিকরণেই উৎসাহিত করা হয়েছে।
শিক্ষাব্যবস্থায় খুব সুচতুরভাবে শ্রেণিব্যবস্থা বিদ্যমান রেখেছে সরকার। ধনীর জন্য এক ধরনের শিক্ষা, গরীবের জন্য এক ধরনের শিক্ষা এই নিয়মে চলছে শিক্ষাব্যবস্থা। টাকা যার শিক্ষা তার--এই নীতি, যা '৬২ সালে, '৮৩ সালে এদেশের ছাত্রসমাজ প্রত্যাখ্যান করেছিল, সেই নীলনকশা বাস্তবায়নের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। শিক্ষা সংকোচন নীতিতে তারা অটুট রয়েছে। একের পর এক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে উচ্চশিক্ষার মানকে প্রশ্নবিদ্ধ করে ফেলেছে, সেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত না করেই আরেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে। গবেষণায় অপ্রতুল বরাদ্দের কারনে বিশ্ববিদ্যালগুলো পিছিয়ে পড়ছে। দেশের প্রাইমারি বিদ্যালয়গুলোর বেহাল দশা; শিক্ষক সংকট, ক্লাসরুমের অভাব! একটি দেশে কয়েকধরনের শিক্ষাব্যবস্থার প্রচলন থাকতে পারে না। আমরা সর্বদাই একটি অসাম্প্রদায়িক, বিজ্ঞানভিত্তিক একমুখী শিক্ষাব্যবস্থা প্রচলনের দাবি জানিয়ে আসছি। একইসাথে আমরা জাতীয় বাজেটের ২৫ ভাগ বা জাতীয় আয়ের ৮ ভাগ শিক্ষাখাতে বরাদ্দের দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু কোন দাবির প্রতিই সরকারের কর্ণপাত নেই। শিক্ষাখাতে পর্যায়ক্রমে জাতীয় বাজেটের ২৫ ভাগ বরাদ্দ দিতে হবে। একটি একমুখী শিক্ষাব্যবস্থা দেশে প্রচলন করতে হবে। নতুবা ছাত্র ইউনিয়ন সেই ৬২, ৮৩ এর ন্যায় ছাত্রদের সংগঠিত করে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে।