বাজেট প্রতিক্রিয়া

প্রস্তাবিত শিক্ষাবাজেটে উপেক্ষিত ছাত্র-শিক্ষকের দাবি

সুমাইয়া সেতু


প্রস্তাবিত শিক্ষাবাজেটে উপেক্ষিত ছাত্র-শিক্ষকের দাবি

আমাদের জাতীয় সংসদে গত ৯ তারিখ, ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট পেশ করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় নীতি অনুযায়ী এই বাজেটের উপর আমাদের দেশের প্রতিটি খাতের আগামি দিনের ভবিষ্যৎ নির্ভর করে। গোটা বাজেটই যদিও বা সাধারণ মানুষের ভালো থাকার বাজেট নয় তাই সেই অনুযায়ী শিক্ষাখাতের বাজেট ও শিক্ষার্থী বান্ধব নয়। বাজেট পেশ হওয়ার পর থেকেই সর্বমহল থেকে এর সমালোচনা আমরা দেখতে পাচ্ছি, শিক্ষা বাজেট নিয়ে কথা বলছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

যদি এক নজরে আমরা শিক্ষাবাজেটের দিকে তাকাই দেখবো ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধিনে ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। গত বাজেটে বিরাদ্দ ছিলো ৭১ হাজার ৯৫৪ কোটি টাকা। এবারের বরাদ্দের হিসেবে মোট বাজেটের ১২.০১ শতাংশ প্রস্তাব করা হয়েছে, বিগত বাজেটের প্রস্তাবনা ছিলো ১১.৯২ শতাংশ, তার মানে কিছুটা টাকার অংক বেড়েছে তবে যদি একের পর এক পেছনের বাজেট গুলোর দিকে আমরা যেতে থাকি দেখতে পাবো ২০০০ সালে যে বাজেট প্রণয়ন হয়েছিলো তা ছিলো মোট বাজেটের ২০.৪৯ শতাংশ। পর্যালোচনা করতে হবে এখান থেকে, নিশ্চয়ই আমাদের জিডিপি ২০০০ সালের থেকে বেড়েছে, কিন্তু কমেছে আমাদের বাজেটে শিক্ষার বরাদ্দ। এবারের হিসেবেও যদি আমরা আসি দেখতে পাবো এবছর আমাদের শিক্ষাবাজেট জিডিপির ১.৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিলো জিডিপির ২.০৮ শতাংশ, ২০২০-২১ অর্থবছরে ছিলো ২.০৯ শতাংশ। তাই জিডিপি অনুপাতে চলতি বছরে শিক্ষাখাতে বাজেট বরাদ্দ কমেছে। আমরা যদি পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর কথা বিবেচনা করি দেখতে পাবো ২০২০-২০১ অর্থবছরে নেপালের শিক্ষাবাজেট ছিলো জিডিপির ৪ শতাংশ, ভারতে ছিলো ৩.০১ শতাংশ, ব্রাজিলে ৬ শতাংশ, ঘানায় ৪ শতাংশ। আর উন্নত দেশ গুলোতে এই সংখ্যা আরো বেশি, তাই বুঝতে বাকি থাকে না যে আমাদের দেশের উন্নয়নের প্রধান অন্তরায় আসলে কোন বিষয় কাজ করে। আবার এই গোটা বাজেট এর সাথে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতকে যুক্ত করে দিয়ে মোট বাজেটের ১৪.০৭ শতাংশ শিক্ষাখাতে বরাদ্দ দেখানো হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত ২০ বছরে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশেই শিক্ষাখাতে জিডিপির তুলনায় বরাদ্দ সবচেয়ে কম। দীর্ঘ দিন যাবত ইউনেস্কো থেকে শুরু করে এদেশের প্রগতিশীল মানুষ, ছাত্র সংগঠন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা শিক্ষাখাতে মোট বাজেটের ২০ শতাংশ মতান্তরে ২৫ শতাংশ দাবি করে আসছে, তারা জিডিপির ৬ শতাংশ মতান্তরে ৮ শতাংশ দাবি করে আসছে। আমাদের সরকারের মন্ত্রী এমপি'রাও বিভিন্ন দেশের অনুষ্ঠানে শিক্ষায় বরাদ্দ বৃদ্ধি করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে, কিন্তু প্রকৃত অর্থে এই বরাদ্দ বৃদ্ধির কোন ইচ্ছাই তাদের নেই। বাজেট ঘোষণার পরে আমাদের শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেছে যে তারা আগামীদিনে এই বরাদ্দের পরিমান বাড়াবে, এখন অনেক গুলো মেগা প্রজেক্ট চলছে সেগুলোতে বিনিয়োগ হচ্ছে। এর পর বিনিয়োগ হবে শিক্ষায়, আর সেটি হবে বড় মেগা প্রজেক্ট। এর থেকে আমরা আসলে কি বুঝতে পারি? সরকারের কাছে শিক্ষা একটি বড় মেগা প্রজেক্ট। তাই যেই মেগা প্রজেক্ট গুলোতে বেশি লাভ করার সুযোগ আছে সেগুলোতে তারা আগে বিনিয়োগ করতে বেশি উৎসাহী, আর শিক্ষার লাভ যেহেতু টাকার অংকে মাপা যায় না, শিক্ষায় যেহেতু চাহিদা ও সরবরাহের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ থাকে না তাই এই খাতে পরে বিনিয়োগ করলেও চলবে এমনটাই ভাবে ক্ষমতাসীন দলগুলো।

আমাদের দেশের শিক্ষামন্ত্রণালয়ের আমলা-মন্ত্রীরা এটা ভুলেই গেছে যে গত প্রায় দুই বছর করোনার কারনে আমরা শিক্ষা জীবনের বাইরে ছিলাম। তারা ভুলে গেছে যে এটি একটা বিশেষ সময় শিক্ষাখাতের জন্যে। এই চাহিদাকে উপেক্ষা করলে সামনের দিনে ভয়াবহ অবস্থায় যাবে আমাদের দেশ। করোনাকালীন সময়ের সংকট কাটিয়ে তোলার জন্যে কোন বরাদ্দ আমরা গত বাজেট বা এই বাজেটে দেখতে পাইনি। আমরা বলেছিলাম এই দুই বছরের ‘লার্নিং লস’ কে পুষিয়ে নেওয়ার জন্যে বিশেষ বিশেষ উদ্দ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। অফলাইনের পাশাপাশি অনলাইন ক্লাসের ব্যবস্থা করতে হবে, ঝরে পরা শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনে ফিরিয়ে আনার নানামাত্রিক উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। কিন্ডারগার্টেনের যে সকল শিক্ষকরা তাদের স্কুল পরিচালিত করতে পারছে না তাদেরকে অনুদান দিতে হবে। এই সকল কাজ করার জন্যে আমাদের বাজেটে কোন ধরনের বরাদ্দ নেই, এমনকি এই বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলাপ ও করা হয়নি শিক্ষাবাজেটে। আমরা বলেছিলাম হাওর অঞ্চল ও অন্যান্য দরিদ্র অঞ্চলে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের জন্যে এক বেলা পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার বা মিড ডে মিলের ব্যবস্থা করতে হবে, সেটি তো করাই হয়নি উল্টো যেসব জায়গায় মিড ডে মিল ছিলো তাও বন্ধ হয়ে গেছে করোনার কারনে। অন-লাইন ক্লাসের জন্যে শিক্ষকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ছিলো সময়ের দাবি কারণ করোনাকালীন সময়ে আমরা দেখেছি আমাদের দেশের শিক্ষকরা এই ব্যপারে মোটেও পারদর্শী নয়। সেই বিষয়েও নেই কোন আলোচনা। সরকারের পক্ষ থেকে করোনার এই বিশেষ অবস্থাকে যেন অস্বীকার করছে বার বার। এতে করে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা যে কোথায় যেয়ে ঠেকছে তা নিয়ে মাথাব্যথা নেই কর্তৃপক্ষের। আমরা দাবি করেছিলাম অনলাইন ক্লাসের জন্যে শিক্ষার্থীদের ল্যাপটপ বা মোবাইল ডিভাইস প্রদান করার জন্যে কিন্তু সে বিষয়ে উদ্যোগ না নিয়ে উল্টো এবারের বাজেটে ল্যাপটপ বা মোবাইল ফোনের উপর ১৫℅ মূল্য সংযোজন কর আরোপ করার প্রস্তাব করেছে আমাদের বাজেটে। তার মানে সরকারের পক্ষ থেকে তো দিবেই না উল্টো জনগনের নিজের টাকায় কিনতে হলেও বেশি টাকা খরচ করতে হবে। এখনো দেশের সব জায়গায় বিশেষ করে পার্বত্য অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের জন্যে ওয়াইফাই এর ব্যবস্থা রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে করা হয়নি। করোনার সময় আমরা দেখেছি ছাত্রদের গাছে উঠতে হয়েছে ক্লাস করার জন্যে, কিছু দিন আগে এক পরিসংখ্যানে দেখলাম ধীর গতির মোবাইল ইন্টারনেট সেবায় ১৪০ টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৭। বাংলাদেশের পেছনে রয়েছে ফিলিস্তিন,ভেনেজুয়েলার ও আফগানিস্তান।  তার মানে এই অবস্থার উন্নয়ের সাথে অবশ্যই শিক্ষা সম্পর্কিত।

আমরা কিছু দিন আগে দেখলাম আমাদের শিক্ষামন্ত্রী নতুন পাঠ্যক্রম প্রস্তাব করেছে, যা নাকি ২০২৩ সাল থেকে বাস্তবায়ন হবে। অথচ এই ব্যপারে বিস্তারিত আলোচনা শিক্ষাবাজেটে করা হয়নি। নেই কোন বিশেষ বরাদ্দ, যেটি দিয়ে শিক্ষক- শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে এই নতুন বিষয়ের সাথে খাপখাওয়ানোর জন্যে। তার মানে বোঝা যায় যে সামনে কি ভয়াবহ দিন অপেক্ষা করছে শিক্ষার্থীদের জন্যে।

আমারা দেখতে পাই প্রতি বছর এই শিক্ষাখাতের সাথে প্রযুক্তিখাতকে যুক্ত করে দিয়ে মেগা মেগা দূর্নীতির দায় শিক্ষাখাতের বাজেটের উপর দিয়ে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমারা ভুলে যাইনি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কথা, সেখানকার বালিস কান্ডের দূর্নীতির দায় ও আমাদের শিক্ষাখাতকে বহন করতে হয়েছে। এবারেও আমরা এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখতে পাবো, ইতিমধ্যে আমরা জেনেছি লালমনিরহাটের বঙ্গবন্ধু এভিয়েশন অ্যান্ড এরোস্পেস  বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট করা হয়েছে ১০ কোটি টাকার, যার মধ্যে ২১% শুধু গাড়ি কেনার পেছনে ব্যয় করা হবে। তার মানে এই মেগা প্রজেক্টের দূর্নীতি বুঝতে আর সাধারণ জনগনের বাকি থাকেনা। শিক্ষাখাতে বরাদ্দকৃত অর্থের বেশিরভাগ খরচ হয় আবকাঠামোগত উন্নয়ন ও বেতন-ভাতা দিতে। প্রকৃত শিক্ষার উন্নতি সেখানে অসম্ভব। আমরা দেখি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বরাদ্দকৃত অর্থের একটা বড় অংশ সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠনকে ঈদ সেলামি দিতেই চলে যায়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা সেটি প্রত্যক্ষ করেছি। আমরা বিভিন্ন জরিপের মাধ্যমে দেখতে পাই আমাদের প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের যেই টাকা উপবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে তার বড় অংশ দূর্নীতির কবলে পরে যায়, শিক্ষার্থীদের হাতে পৌছায়না উপবৃত্তির টাকা। প্রত্যেকটি স্কুল,কলেজ,বিশ্ববিদ্যালয়ের আলাদা আলাদা বাজেট থেকে একটা বড় অংশ দূর্নীতির কবলে পরে যায়। যার কোন তদারকি নেই সরকারের পক্ষ থেকে, বরং এই কাজ গুলো সরকারি আমলা, মন্ত্রীরাই করে থাকে।

গোটা শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষকদের ভালো মতো বেঁচে থাকার জন্যে যে পরিমান বেতন দেওয়া প্রয়োজন সেটিও এই বাজেট থেকে দেওয়া সম্ভব না, তাই অনেক শিক্ষক বাধ্যহয়ে কোচিং, বা অন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ক্লাস করানোর দিকে মনোযোগ দিচ্ছে, ব্যহত হচ্ছে প্রকৃত শিক্ষা। বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে গবেষণা করার জন্যে নিজস্ব অর্থায়নের উপর নির্ভর করতে হয় শিক্ষকদের, নাম মাত্র গবেষণায় বরাদ্দ থাকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে। উচ্চতর ডিগ্রি নেওয়ার জন্যে শিক্ষকরা নিজের টাকায় দেশের বাইরে যায় এমনকি বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা তাদের সহোযোগিতা করে কিন্তু দেশের সহায়তা তারা পায়না। শিক্ষকরা তাদের জাতীয়করণ ও সুযোগ সুবিধার জন্যে মাসের পর মাস জাতীয় প্রেসক্লাবের রাস্তায় আন্দোলন করে, শুধু আশ্বাসেই থেকে যায় জাতীয়করণ প্রকিয়া ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা। যাদের কে আবার জাতীয়করণ প্রক্রিয়ার আওতায় আনা হয়েছে তাদের নিয়েও রয়েছে অনেক প্রশ্ন। মান সম্মত শিক্ষকদেরকে না এনে অন্যান্য বিবেচনায় বা সরকারের দলীয় স্বার্থের কথা মাথায় রেখে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। মান সম্মত শিক্ষকের অভাবে মান সম্মত শিক্ষা পাওয়া মুশকিল হয়ে পড়েছে, শিক্ষকদের নিয়োগ বানিজ্য এই সময়ে আলোচিত একটি বিষয়, বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর ভিসির আসন দখল করে থাকে সরকার দলীয় লোকজন। তাই শিক্ষার্থী বান্ধব হয়ে ওঠেনা আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলো। শিক্ষার মান ধরে নেওয়া হয় পাসের হার বা জিপিএ কত জন পেয়েছে তার উপর, প্রকৃতঅর্থে এটি শিক্ষার মান নির্ধারণের কোন মাপকাঠি হতে পারে না। বিশ্ব র‍্যাংকিংয়ে আমাদের দেশের প্রতিষ্ঠান নেই ১৫০০ এর ঘরেও। সর্বশেষ মাদ্রিদ ভিত্তিক শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়েবম্যাট্রিক্স তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর র‍্যাংকিং। যেখানে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ১৫৮৯ তম, আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১৬৩৫ তম। অথচ এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্যে যেই বরাদ্দ আমাদের দরকার গবেষণাখাতে সেগুলো দিতে পারছেনা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। কারন খুজলে বের হবে শিক্ষা বাজেটে বরাদ্দ কম। এখানে শিক্ষার্থী প্রতি মাথা পিছু বাজেট ও অনেক কম। আবার নানা ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকায় শিক্ষার্থীরা স্বীকার হয় বৈষম্যের, যেমন একজন মাদ্রাসার শিক্ষার্থীর পেছনে যা টাকা বরাদ্দ হয় তার থেকে বেশী হয় বাংলা মিডিয়ামের শিক্ষার্থীদের পেছনে। তার থেকে বেশি হয় ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের পেছনে, আর সব থেকে বেশি হয় ক্যাডেট শিক্ষার্থীদের পেছনে। এতো এতো বৈষম্য উপেক্ষা করে প্রকৃতঅর্থে শিক্ষার্থী বা শিক্ষক কেউই গবেষণা করতে পারেনা এই ব্যবস্থায়।

বাজেটের একটা বড় সমালোচনা হলো এই বাজেটে আমাদের দেশের প্রান্তিক বা আদিবাসী শিক্ষার্থীদের জন্যে আলাদা করে কোন আলোচনা করা হয়নি এবং বরাদ্দ করা হয়নি। অথচ আমরা জানি আদিবাসীরা প্রকৃত শিক্ষা থেকে সবচেয়ে বেশি বঞ্চিত। আমরা দীর্ঘদিন ধরে আদিবাসী শিক্ষার্থীদের জন্যে মাতৃভাষায় শিক্ষা নিশ্চিত করার দাবি করে যাচ্ছিলাম, যেটা করতে হলে আদিবাসী ভাষার বই প্রণয়ন, শিক্ষক নিয়োগ সহ অন্যান্য বিষয় নিশ্চিত করতে হবে, যার জন্যে প্রয়োজন হবে অর্থের। যেসকল আদিবাসীরা দারিদ্রসীমার নিচে বাস করে তাদের জন্যে বিশেষ বরাদ্দ রাখতে হবে যাতে তাদের শিক্ষাজীবন ব্যহত না হয়। এই সকল বিষয় আমরা প্রস্তাবিত বাজেটে দেখতে পাইনি।

সামগ্রিক বিষয় বিশ্লেষণ করলে আমরা বুঝতে পারি আমাদের সংবিধান অনুযায়ী আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা গণমুখী,বিজ্ঞানভিত্তিক হওয়ার কথা থাকলেও বার বার নতুন শিক্ষানীতিতে প্রচলিত তিন ধারাকে জায়েজ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়িয়ে মানুষকে উন্নত, মানবিক বোধ সম্পন্ন গড়ে তোলার কোন চেষ্টাই নেই ক্ষমতাসীন কোন দলের। কারন মানুষ যত উন্নত হবে তত তাদের অন্যায়, অনিয়ম নিয়ে প্রশ্ন তুলবে, তত তাদের সীমাহীন দূর্নীতি নিয়ে কথা বলবে আর এই সুযোগটি সরকারের পক্ষ থেকে দিতে চায় না। তাই প্রতি বছর অন্য সকল লাভজনক খাতে বরাদ্দের পর যতটুকু অবশিষ্ট থাকে তাই জোটে শিক্ষাখাতের কপালে। এই অবস্থার পরিবর্তন করতে হলে প্রয়োজন শিক্ষক, শিক্ষার্থী সহ সকল শ্রেনী পেশার মানুষের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন। যেমনি করে ৬২' র শিক্ষা আন্দোলন গড়ে তোলা হয়েছিলো। আর সেই আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারলে আস্তে আস্তে আমাদের দেশের শিক্ষার মান আরো নিচের দিকেই নামবে, মানুষ হয়ে উঠবে এক বিবেকহীন বস্তু...

লেখক: সাংগঠনিক সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন