ঢাকায় সিপিবি’র সমাবেশ

ভাত ও ভোটের অধিকার রক্ষায় গণ প্রতিরোধ কমিটি গড়ে তোলার আহ্বান

ভাত ও ভোটের অধিকার রক্ষায় গণ প্রতিরোধ কমিটি গড়ে তোলার আহ্বান

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি সিপিবি’র নেতৃবৃন্দ বলেছেন, সরকার দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ। আবার বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির দাম বাড়ানোর চেষ্টা করছে। সফল হয়েছে ব্যবসায়ী, মধ্যস্বত্বভোগী আর মজুতদারদের স্বার্থ রক্ষায়। এই সরকারের আর গদিতে থাকার অধিকার নেই। নেতৃবৃন্দ সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি প্রবর্তনসহ নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার, নির্বাচনকে টাকা, পেশিশক্তি, প্রশাসনিক কারসাজি মুক্ত করা এবং নির্দলীয় তদারকি সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি জানান।

নেতৃবৃন্দ বলেন, এলাকায় এলাকায় প্রতিরোধ কমিটি গড়ে তুলে ভাত ও ভোটের অধিকার রক্ষা করতে হবে।

‘দাম কমাও, জান বাঁচাও, ভোটাধিকার ফিরিয়ে দাও’¬দাবিতে দেশব্যাপী ঘোষিত দাবি পক্ষের শেষ দিনে আজ ৩ জুন ২০২২, শুক্রবার, বিকেল ৪ টায় ঢাকার পুরানা পল্টন মোড়ে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।

সিপিবি সভাপতি কমরেড মোহাম্মদ শাহ আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সিপিবি’র সাবেক সভাপতি কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, সাধারণ সম্পাদক কমরেড রুহিন হোসেন প্রিন্স, সহকারী সাধারণ সম্পাদক কমরেড মিহির ঘোষ, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ডা. সাজেদুল হক রুবেল, জলি তালুকদার, হাফিজুল ইসলাম, আবিদ হোসেন প্রমুখ।

নেতৃবৃন্দ বলেন, সাধারণ মানুষের জীবন-মানের উন্নয়ন ও শোষণ বঞ্চনা থেকে মুক্তির জন্য চলমান দুঃশাসন হঠাতে হবে, ব্যবস্থা বদল করতে হবে। বাম গণতান্ত্রিক বিকল্প শক্তিই পারবে এই ব্যবস্থা বদল করতে।

নেতৃবৃন্দ শাসকশ্রেণির রাজনৈতিক দলগুলোর গালভরা বুলির ফাঁদে পা না দিয়ে নীতিনিষ্ঠ রাজনৈতিক দলের শক্তি সমাবেশ বাড়ানো এবং বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষকে নিজ নিজ দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

নেতৃবৃন্দ বলেন, মুক্ত বাজারের নামে বাজারে যেন চলছে লুটপাট, আবার বড়োলোকের স্বার্থ রক্ষা করা রাজনীতিতেও চলছে বাজারি রাজনীতি। এখানে কেনাবেচা হয়। জনগণের স্বার্থের কথা বলে নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় নানা তকমা হাজির করা হয়। এর বিপরীতে নীতিনিষ্ঠ রাজনীতির ধারাও আছে। দেশের মানুষকে এই নীতিনিষ্ঠ রাজনৈতিক ধারায় সমবেত হতে হবে। তাহলেই মুক্তি মিলবে।

নেতৃবৃন্দ বলেন, গ্রাম থেকে শহরে সর্বত্র দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে জনজীবন বিপর্যস্ত, ভোটাধিকার নেই। ভয়ের পরিবেশ চলছে। সাধারণ মানুষের প্রকৃত আয় কমে গেছে। কম খেয়ে বেঁচে আছে সাধারণ মানুষ। এই অবস্থা রেখে উন্নয়ন আর গণতন্ত্রের বুলি হাস্যকর। এর অবসান ঘটাতে সাহস করে মাঠে নামতে হবে। চলমান দুঃশাসন হটিয়ে ব্যবস্থা বদলের সংগ্রাম অগ্রসর করতে হবে। 

নেতৃবৃন্দ বলেন, ভরা মৌসুমে কৃষক ধানের দাম ঠিক মতো পাচ্ছে না, অথচ চালের বাজারে আগুন। বড়ো বড়ো কর্পোরেট গ্রুপ, দালাল আর মজুতদারদের হাতে তেলের ব্যবসার মত ধানের ব্যবসা জিম্মি। খোদ কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা, উৎপাদক সমবায় ও ক্রেতা সমবায় প্রতিষ্ঠা করা এবং কঠোর হাতে অসাধু ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণ না করলে এই পরিস্থিতি পাল্টানো যাবে না।

নেতৃবৃন্দ সারাদেশে রেশন ব্যবস্থা, ন্যায্য মূল্যের দোকান চালুর দাবি জানান। তার আগে ফ্যামিলি কার্ডের সংখ্যা ও পণ্য বাড়ানো এবং ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে সরবরাহের দাবি জানান।

নেতৃবৃন্দ বলেন, বিশ্ববাজারে ভোজ্য তেলের দাম কমলেও দেশের বাজারে দাম কমাতে সরকার নির্বিকার।

নেতৃবৃন্দ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়া ও সরকারের পদত্যাগ দাবি করেন। নেতৃবৃন্দ বলেন, নির্বাচন কমিশন নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কারে কাজ না করে, লোক দেখানো সংলাপ ও ইভিএম বিতর্ক সামনে আনছে। ইভিএম মেশিনের ব্যবহার ও ভোট কেন্দ্রে নির্ভয়ে মানুষ এটা ব্যবহার করতে পারবে-এখনও সে বিশ্বাসযোগ্যতা পায়নি। তাই এ নিয়ে টাকা খরচ ও অহেতুক বিতর্কের প্রয়োজন নেই।

সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।