ন্যূনতম মজুরি ২০ হাজার টাকার দাবীতে টিইউসির শ্রমিক সমাবেশ

ন্যূনতম মজুরি ২০ হাজার টাকার দাবীতে টিইউসির শ্রমিক সমাবেশ

১৭ জুন ২০২২ শুক্রবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের উদ্যোগে শ্রমিক সমাবেশ ও মিছিলের কর্মসূচি পালিত হয়েছে।

সমাবেশে সংগঠনের সভাপতি এদেশের শ্রমিক আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা প্রবীণ শ্রমিকনেতা সহিদুল্লাহ চৌধুরীর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খান, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল মালেক, সহ-সভাপতি মো. আব্দুর রাজ্জাক, দপ্তর সম্পাদক সাহিদা পারভীন শিখা, অর্থ সম্পাদক কাজী রুহুল আমীন, কেন্দ্রীয় নেতা হাফিজুল ইসলাম প্রমুখ। সমাবেশ পরিচালনা করেন মেহেদী হাসান নোবেল।

সভাপতির বক্তব্যে প্রখ্যাত শ্রমিকনেতা সহিদুল্লাহ চৌধুরী বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় রচিত সংবিধানে বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে ন্যায্য মজুরি এবং সার্বজনীন সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করার কথা থাকলেও সস্তা শ্রম ও লুটপাটের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠা নব্য ধনিক শ্রেণি অবৈধ পুঁজির দাপটে তা না করে উপরন্তু একচেটিয়াভাবে শোষণ নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। রাষ্ট্রায়াত্ত্ব কল-কারখানা বন্ধ এবং লুটপাট করা হচ্ছে। সরকার এবং এ সকল পুঁজিপতিরা শ্রমিকদের খাইয়ে পরিয়ে বাঁচিয়ে রাখার মত ন্যূনতম দায়িত্ব পালন করছে না। বরং ন্যায্য মজুরি ও আইনানুগ সুযোগ সুবিধার কথা বললে চরমভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে।

এমতাবস্থায় তিনি বলেন যে, শ্রমিক, শিল্প ও জাতীয় স্বার্থকে বিবেচনায় নিয়ে এদেশের সকল শ্রমিক কর্মচারীদের পক্ষ থেকে উত্থাপিত স্থায়ী মজুরি কমিশন গঠন করে জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ২০ হাজার টাকা ঘোষণা, মহার্ঘ্য ভাতা প্রদান এবং প্রতিবছর মজুরি বৃদ্ধির করার দাবি অবিলম্বে মেনে নিতে হবে। 

সভাপতি আন্তর্জাতিক বাজারে বিপুল চাহিদা এবং আধুনিকায়ন করে চালালে লাভজনক শিল্প হিসাবে অগ্রসর হওয়ার নিশ্চয়তা থাকা সত্তে¡ও দুর্নীতি, ভুলনীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে এবং লুটপাটের লক্ষ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত¡ পাটকল বন্ধ করে দেয়ার দায়ে দায়ী পাটমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেন। একই সাথে বন্ধকৃত রাষ্ট্রায়ত্ব পাট, সুতা, বস্ত্র ও চিনিকল আধুনিকায়ন করে চালু করার দাবি জানান।

সাধারণ সম্পাদক ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খান বলেন যে, ১৯৪৫ সাল থেকে দীর্ঘদিন যাবৎ শ্রমিকদের জন্য চালুকৃত রেশনিং প্রথা স্বৈরাচার এরশাদ বন্ধ করে দিয়েছে। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির ফলে অনাহারে-অর্ধাহারে থাকা শ্রমিকদের বাঁচিয়ে রাখতে শ্রমিক ও স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য অতীতের ন্যায় রেশনিং-প্রথা চালু করতে হবে। চট্টগ্রামের বিএম কন্টেইনার ডিপো, সেজান ফুড, রানা প্লাজা ও তাজরীন ফ্যাশনসহ শতাধিক প্রতিষ্ঠানে হাজার হাজার শ্রমিক হত্যার দায়ে দায়ী অতি মুনাফালোভী মালিক এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বরতদের শাস্তি দিতে হবে। নিহত শ্রমিকদের আইএলও কনভেনশন অনুসারে ভবিষ্যৎ জীবনের আয়ের সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ, আহতদের পুনর্বাসন ও সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে।

সমগ্র শিল্প প্রতিষ্ঠানে অতিসত্বর বিশেষ তদারকি সাপেক্ষে বিল্ডিং এবং অগ্নিসহ সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সহ-সভাপতি মাহাবুব আলম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, প্রচার সম্পাদক মোবারক হোসেন, কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাড. মণ্টু ঘোষ, ইদ্রিস আলী, সাদেকুর রহমান শামীম প্রমুখ।

সমাবেশ শেষে লাল পাতাকা মিছিল জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে পুরানা পল্টন, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, গুলিস্তান হয়ে শহীদ নূর হোসেন স্কয়ারে এসে শেষ হয়।