নড়াইলে সম্প্রদায়িক হামলা ও অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদে বাসদ (মার্কসবাদী)’র মিছিল সমাবেশ

নড়াইলে সম্প্রদায়িক হামলা ও অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদে বাসদ (মার্কসবাদী)’র মিছিল সমাবেশ

১৮ জুলাই ২০২২ সোমবার দুপুর ১২ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় নির্বাহী ফোরামের উদ্যোগে নড়াইলে সম্প্রদায়িক হামলা ও অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদে মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। দলের সমন্বয়ক কমরেড মাসুদ রানার সভাপতিত্বে ও সদস্য সীমা দত্তের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সদস্য শফিউদ্দিন কবির আবিদ। 

বক্তারা বলেন, “এক হিন্দু তরুণের বিরুদ্ধে ফেসবুকে কথিত ইসলাম ধর্ম অবমাননার অভিযোগ এনে নড়াইলের লোহাগাড়ার দিঘলীয়া গ্রাামে পুলিশ প্রশাসনের উপস্থিতিতে গতকাল হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, পূজামন্ডপ ও দোকানপাটে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর এবং সাম্প্রদায়িক হামলা হয়েছে, তা চরম ন্যাক্কারজনক। গত ১৪ জুলাই ও ১৫ জুলাই দিনভর এ নিয়ে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি ক্রমাগত বাড়তে থাকলেও তা নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের চরম ব্যর্থতা ও নিষ্ক্রিয়তার কারণে  গতকাল সন্ধ্যায় এ সাম্প্রদায়িক হামলা ঘটতে পেরেছে। নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে কথিত ধর্ম অবমাননার অভিযোগে জুতার মালা পড়ানোর ন্যাক্কারজনক ঘটনার পরপরই আবার একই জেলায় এ সাম্প্রদায়িক হামলার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারলো। দুটি ক্ষেত্রেই প্রশাসনের উপস্থিতি ও নিষ্ক্রিয়তা লক্ষণীয়। ধর্ম অবমাননার কথিত অভিযোগে এবছর মার্চে  মুন্সিগঞ্জে বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় মন্ডলের ওপর পরিকল্পিত হামলা, মামলা, ২০১৬ সালে নারায়ণগঞ্জের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে জনসমক্ষে এমপি কর্তৃক কান ধরে ওঠবস করানো, ২০২০ সালের অক্টোবরে পাটগ্রামের বুড়িমারিতে শুধু একটা গুজবের ওপর ভর করে একদা শিক্ষক, গ্রন্থাগারিক, নিরীহ এবং কিছুটা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত শহিদুন্নবী জুয়েলকে দিনে দুপুরে সবার সামনে পিটিয়ে মারা হয়। ২০১২ সালে কক্সবাজারের রামুতে বৌদ্ধবিহার ও পল্লীতে হামলা, ২০১৬ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দু গ্রামে হামলা, ২০১৭ সালে  রংপুরের গঙ্গাচড়াতে ফেসবুক  থেকে ছড়ানো গুজবের জের ধরে এক জনের মৃত্যুসহ বিগত এক দশকে সারাদেশে অসংখ্য সাম্প্রদায়িক নির্যাতন ও  লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে শুধু  ফেসবুকে ইসলাম অবমাননার অজুহাতে! প্রায় প্রতিটি ঘটনায় স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মী, জনপ্রতিনিধি এবং পুলিশ ও সরকারি প্রশাসন অতি সক্রিয় হয়ে ‘আশু’ বিচারের ব্যবস্থা করেছেন। প্রায় প্রত্যেকটি ঘটনায় পরে প্রমাণিত হয়েছে যে কাউকে পরিকল্পিত উপায়ে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ফাঁসানোর জন্য তার ফেসবুক হ্যাক করে ফটোশপকৃত ছবি বা উস্কানিমূলক বক্তব্য পোস্ট করা হয়েছিল। গতবছর দুর্গাপূজার সময় কুমিল্লার পূজামন্ডপে কোরান রেখে দিয়ে অবমাননার অভিযোগ তুলে সারাদেশে পূজামন্ডপে ও হিন্দুদের ওপর হামলা করা হয়। পরে উদঘাটিত হয় — দেবীমূর্তির পায়ের কাছে পরিকল্পিতভাবে কোরান রেখে এসেছে একজন মুসলিম।

বক্তারা অরো বলেন, “প্রায় সব ক্ষেত্রে মামলা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বা কিছু ক্ষেত্রে মামলা হওয়ার আগেই পুলিশ তথাকথিত অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে এবং স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে। এসব হামলার ঘটনায় আক্রান্ত ও নির্যাতিত সংখ্যালঘুরা সাহস করে যদি মামলা করেনও, কিছুদিনের মধ্যে সমস্ত আসামির জামিন হয়। এ পর্যন্ত সংঘটিত সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনাগুলোর কোনটারই বিচার না হওয়ায়, এ সাম্প্রদায়িক হামলা উত্তরোত্তর বাড়ছে। আওয়ামীলীগ সরকার তার ফ্যাসিবাদী শাসন টিকিয়ে রাখতে তার আশ্রয় ও প্রশ্রয়ে সাম্প্রদায়িকতার বিস্তার ঘটাচ্ছে, জনগণের মধ্যে এ সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ও বিভেদ সৃষ্টি ও জিইয়ে রাখতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ভূমিকা পালন করছে। ফলে অবিলম্বে সংঘটিত সাম্প্রদায়িক হামলার সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানানোর পাশাপাশি আমরা সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সকল গণতন্ত্রমনা মানুষকে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহবান জানাই।”