দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের দাবিতে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ঢাকা মহানগর দক্ষিণ কমিটির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে গত বৃহস্পতিবার অল্প বৃষ্টিতে ব্যাপক জলাবদ্ধতা এবং মিরপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ৪ জনের প্রাণহানির ঘটনা উল্লেখ করে নেতৃবৃন্দ বলেন, সরকারের চরম দুঃশাসনে মানুষের জীবন সস্তা ব্যয়যোগ্য বস্তুতে পরিণত হয়েছে। অন্যদিকে দ্রব্যমূল্যের চরম ঊর্ধ্বগতি সাধারণ মানুষের জীবিকাকে সাধ্যের অতীতে পরিণত করেছে। নেতৃবৃন্দ বলেন, তথাকথিত আকাশছোঁয়া উন্নয়নের বুলি মানুষের পেটে খাদ্যের যোগান দিতে পারছে না। উল্টো দুর্বিষহ দারিদ্র্যতা শ্রমজীবী মানুষকে গ্রাস করেছে।
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, সিন্ডিকেট ভাঙা, সারাদেশে রেশন ব্যবস্থা ও ন্যায্যমূল্যের দোকান চালুসহ উৎপাদক ও ক্রেতা সমবায় গড়ে তোলার দাবিতে সিপিবি কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষিত দুইদিনের দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, শনিবার, সকাল ১১টায় রাজধানীর পুরানা পল্টন মোড়ে সিপিবি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ কমিটির উদ্যোগে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
সিপিবি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ কমিটির সম্পাদকম-লীর সদস্য আক্তার হোসেনের সভাপতিত্বে ও সাইফুল ইসলাম সমীরের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সিপিবি কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার, সম্পাদকম-লীর সদস্য ত্রিদিব সাহা, সেকেন্দার হায়াৎ প্রমুখ।
বিক্ষোভ সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, চিরকাল দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের পথ হিসেবে সিন্ডিকেট ও মজুতদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণকেই সমাধানের পথ হিসেবে সবাই জেনে এসেছে। স্বৈরাচারী সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী আজ দেশবাসীকে সবক দিচ্ছেন সিন্ডিকেট মজুতদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করলে গোটা বাজার ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হবে। নেতৃবৃন্দ বলেন, এই ‘বেহায়া’ বাণিজ্যমন্ত্রীকে অপসারণ না করে প্রধানমন্ত্রী জানান দিয়েছেন নিত্যপণ্যের বাজারে চলমান অবাধ লুটপাট ও নৈরাজ্যের তিনিও একজন হোতা। বড় বড় অর্থনীতিবিদগণ নানান নসিহত প্রদান করলেও পরিস্থিতির কোনো হেরফের হচ্ছে না কারণ রাজনৈতিক পরিবর্তন ব্যতিত দ্রব্যমূল্যের বাজার জনসাধারণের নাগালের মধ্যে রাখার কর্মসূচি গ্রহণ সম্ভবপর নয়।
সমাবেশ থেকে নেতৃবৃন্দ বাজার নিয়ন্ত্রণ, সিন্ডিকেট ভাঙা, রেশন ব্যবস্থা ও পর্যাপ্ত ন্যায্যমূল্যের দোকান চালু করে মানুষের জীবন ও জীবিকার নিশ্চয়তা বিধান করতে দেশবাসীর প্রতি চলমান আওয়ামী দুঃশাসন অবসান ঘটানোর আহ্বান জানান।
মিরপুরের প্রাণহানি প্রসঙ্গে নেতৃবৃন্দ বলেন, এমন মর্মান্তিক ঘটনায় সরকার ও কর্তৃপক্ষের কারও কোনো ভ্রুক্ষেপ পরিলক্ষিত হয় না। ক্ষমাপ্রার্থনা দূরের কথা তাদের গাফিলতিতে নিরীহ মানুষের প্রাণহানির দায়টুকুও কেউ স্বীকার করছে না। এই অবস্থায় সাধারণ মানুষের জীবন ও জীবিকা রক্ষায় চলমান গণআন্দোলনকে গণঅভ্যুত্থানে রূপান্তরিত করতে হবে।
নেতৃবৃন্দ সমাবেশে আরও বলেন, ব্যাংক ও আর্থিক খাতে ব্যাপক লুটপাট এবং ইতিহাসের সর্বোচ্চ অর্থ পাচারের মধ্য দিয়ে দেশের অর্থনীতি চূড়ান্ত রকম ঝুঁকির মুখে পড়েছে। নিকট ভবিষ্যতে আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো সুনিশ্চিত রিজার্ভ নেই। এই অবস্থায় কৃষি উৎপাদনে, পোশাক শিল্পে, রেমিট্যান্স ও ফরেন ইনভেস্টমেন্ট এর দিক থেকেও কোনো আশা দেখা যাচ্ছে না। যার প্রধান কারণ দেশে প্রতিনিধিত্বশীল শাসন না থাকা। নেতৃবৃন্দ বলেন, পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটাতে গণতন্ত্র, সুশাসন ও মৌলিক ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনাটা জরুরি।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করেন, বর্তমান সরকার একদিকে প্রচলিত ব্যবস্থা বহল রেখে মুক্তবাজারের নামে সবকিছু বাজারের উপরে ছেড়ে দিয়ে, সিন্ডিকেট ও মজুতদার লুটেরাদের তোষণ করে চলেছে। অন্যদিকে ভোক্তা অধিকার প্রতিষ্ঠার নামে হম্বি-তম্বি করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করার লোক দেখানো চেষ্টা করে যাচ্ছে।
সমাবেশ থেকে নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে কারখানার শ্রমিকসহ সকল সংগঠিত ও অসংগঠিত খাতের শ্রমিক-কর্মচারি ও সাধারণ শ্রমজীবী মানুষের মজুরি ও আয় বৃদ্ধির দাবি জানান।