বাম জোটের সংবাদ সম্মেলন

একতরফা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলে হরতাল-অবরোধের ডাক বামজোটের

একতরফা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলে হরতাল-অবরোধের ডাক বামজোটের

বাম গণতান্ত্রিক জোট আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দেশের জনগণ ও গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে সংঘাত-সংঘর্ষের হাত থেকে দেশবাসীকে রক্ষার জন্য অবিলম্বে সরকারকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে নির্দলীয় তদারকি সরকারের রূপরেখা নিয়ে আলোচনা শুরু করার জন্য সরকার ও সকল রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাম গণতান্ত্রিক জোট এর সমন্বয়ক ও বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন ও উপস্থিত ছিলেন সিপিবির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম, সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)’র সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, বাসদ (মার্কসবাদ)’র সমন্বয়ক মাসুদ রানা, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির শহীদুল ইসলাম সবুজ ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আব্দুল আলী প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, নির্বাচনের গ্রহণযোগ্য পরিবেশ সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হওয়ায় সুষ্ঠু নির্বাচন অসম্ভব হয়ে পড়ছে। বরং নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার জনমত ও বিরোধী দলসমূহের দাবি উপেক্ষা কারে সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। যা নির্বাচনের পরিবেশকে বিঘিœত করে নির্বাচনকে অনিশ্চিত করে তুলেছে।

আরো বলা হয়, নির্বাচন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার একটি অন্যতম উপাদান। বুর্জোয়া উত্থানের কালে নিয়মতান্ত্রিক শাসন ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য নির্বাচন চালু হয়েছিল, যাতে জনগণ ভোট দিয়ে তাদের পছন্দমতো প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে, দেশ স্বাধীন হওয়ার ৫২ বছর পরেও একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য গণতান্ত্রিক নির্বাচনী ব্যবস্থা শাসকশ্রেণি গড়ে তুলতে পারেনি। সেজন্যই প্রতি ৫ বছর অন্তর অন্তর ভোটের আগে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কম বেশি সংঘাত-সংঘর্ষের পরিস্থিতি তৈরি হয়। এবারের পরিস্থিতি অনেক গভীর ও ভয়াবহ।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, নির্বাচন নিয়ে যে সংকট ও আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে শান্তিপূর্ণ উপায়ে তা নিরসনের উদ্যোগ না নিয়ে সরকার গ্রেপ্তার-দমনপীড়নের পথ বেছে নিয়ে একতরফা নির্বাচনের দিকে এগুচ্ছে যা দেশকে আরও গভীর সংকটে নিক্ষেপ করবে। নির্বাচন কমিশনও গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না থেকে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কথা বলে সরকারের তল্পীবাহক হিসেবে একতরফাভাবে তফসিল ঘোষণার পাঁয়তারা করছে যা দেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতকে অগতান্ত্রিক পথে ঠেলে দেবে। নির্বাচন কমিশন যে প্রকৃত অর্থে স্বাধীন নয়, তা তাদের একেবার একেক রকম বক্তব্য থেকে স্পষ্ট। সম্প্রতি প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকারের প্রতিনিধি নির্বাচন কমিশনের সচিবকে কমিশনের মুখপত্র হিসেবে বক্তব্য-বিবৃতি দেয়ার দায়িত্ব প্রদানের মাধ্যমে তা পুনর্বার প্রমাণিত হলো।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, দেশের অভ্যন্তরে গণতন্ত্রহীনতা, স্বৈরাচারী পন্থায় রাষ্ট্র পরিচালনা ও শাসকশ্রেণির নতজানু নীতির কারণে মার্কিন-ভারতসহ সা¤্রাজ্যবাদী আধিপত্যবাদী দেশসমূহ আমাদের দেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ পাচ্ছে। যা আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ। দেশের জনগণের প্রতি আস্থা না থাকায় এবং ক্ষমতায় থেকে গণবিরোধী কার্যক্রম পরিচালনা করার কারণেই শাসকশ্রেণির দলসমূহ বিদেশি শক্তির উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। শাসকশ্রেণি ক্ষমতায় থাকা ও ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য একদিকে সা¤্রাজ্যবাদের কাছে নতজানু থাকছে অপরদিকে মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক শক্তিকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে। অনুমতি পাওয়ার পরেও ২৮ অক্টোবর বিএনপি’র সমাবেশ প- হয়েছে অন্যদিকে অনুমতি না দিলেও জামায়াতকে নির্বিঘেœ সমাবেশ করতে দিয়েছে। বিদেশি সা¤্রাজ্যবাদী শক্তি ও ধর্মান্ধ মৌলবাদী অপশক্তি দেশকে অগণতান্ত্রিক শাসনে নিয়ে যাওয়ার অপতৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে। বাম গণতান্ত্রিক জোট সা¤্রাজ্যবাদী ও মৌলবাদী শক্তির অপতৎপরায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে দেশবাসীকে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সতর্ক থাকা ও সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে হামলা-মামলা-গায়েবী মামলা, গণগ্রেপ্তার বন্ধ করে বিরোধী নেতৃবৃন্দের মুক্তি দিয়ে আলোচনার পরিবেশ তৈরি করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

এছাড়া, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ, মুনাফাখোর সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, দুর্নীতি, লুটপাট, ঋণখেলাপী, অর্থপাচার রোধ করার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, দুর্নীতিবাজ, ব্যাংক ডাকাত, ঋণখেলাপী, অর্থপাচারকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, অধিকাংশ রাজনৈতিক দলসমূহকে বাইরে রেখে যে কোনভাবে গায়ের জোরে একতরফা নির্বাচন করার অর্থ হবে রাজনৈতিক সহিংসতা জিইয়ে রাখা। এর ফলে অর্থনীতি, রাজনৈতিক পরিবেশ ও সামাজিক শৃংখলা বিনষ্ট হয়ে সংঘাত ও সংঘর্ষ বৃদ্ধি পাবে। তাই একতরফা নির্বাচনের চিন্তা পরিহার করে সমঝোতা ছাড়া নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা না করার জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচি ঘোষণা করে বলা হয়, একতরফা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলে ঐ দিনই বাম জোটের পক্ষ থেকে দেশব্যাপী বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হবে। একই সাথে পর দিন থেকে হরতাল-অবরোধসহ কঠোর কর্মসূচি পালনের জন্য জোটের নেতাকর্মী ও সর্বস্তরের গণতন্ত্রকামী জনগণকে প্রস্তুত থাকার জন্য আহ্বান জানানো হয়। সভায় আগামী ১০ নভেম্বর থেকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত দেশব্যাপী বাম জোটের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ বিক্ষোভ অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়।