শহীদ তাজুল দিবস পালিত

শহীদ তাজুল দিবস পালিত

১ মার্চ শহীদ তাজুল দিবসে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি আয়োজিত শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে অনুষ্ঠিত সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেছেন, রাজনীতি এক দুঃসময় অতিক্রম করছে। নীতিহীন রাজনীতি জনগণের কাঁধে চেপে বসেছে,  মুক্তবাজারের নামে রাজনীতিতে লুটপাটের ধারা প্রধান হয়ে উঠেছে। সিপিবি নীতিনিষ্ঠ রাজনীতিকে অগ্রসর করে ভোটাধিকার, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, দুঃশাসনের অবসান ও শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম অগ্রসর করে নিয়ে যাবে।

আজ ১ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার, সকাল ১০টায় সিপিবির কেন্দ্রীয় কার্যালয় মুক্তিভবনের সামনে শহীদ তাজুল স্মরণে স্থাপিত অস্থায়ী বেদীতে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিসহ বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তিবর্গ পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে শহীদ তাজুলের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে।

শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সিপিবি সভাপতি কমরেড মোহাম্মদ শাহ আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শ্রমিক নেতা হাফিজুল ইসলাম, শহীদ তাজুলের সন্তান তৌফিকুল ইসলাম। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সংগঠক কৃষকনেতা জাহিদ হোসেন খান।

সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, স্বৈরাচারী এরশাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সংগ্রামে যারা নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন তাদের মধ্যে কমরেড তাজুল ইসলাম অন্যতম। ১৯৯০ এ স্বৈরাচারী শাসককে উৎখাত করতে পারলেও স্বৈরাচারী ব্যবস্থা উৎখাত করা যায়নি।

স্বৈরশাসক এরশাদের পতনের পর থেকে পালাক্রমে যারা ক্ষমতায় এসেছে এবং এখনো আছে তারা এসব শহীদদের রক্তের সাথে বেইমানি করে গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠিয়েছে। বর্তমান সরকার জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে দেশে একদলীয় কর্তৃত্ববাদী স্বৈরাচারী ব্যবস্থা কায়েম করেছে। মুক্তবাজারের নামে চলমান অর্থনীতি হলো এই স্বৈরাচারী ব্যবস্থার ভিত্তি।

আজ তাই দেশে চলছে অবাধে অর্থ পাচার, খেলাপি ঋণের পরিমাণ ক্রমাগত বেড়ে চলছে, দুর্নীতি লুটপাট সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। সরকার এসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে জনগণের পকেট কাটার নীতি গ্রহণ করেছে। মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। একদিকে নিত্য পণ্যের মূল্য বৃদ্ধিতে জনগণ দিশেহারা অন্যদিকে আবার বিদ্যুতের মূল্য বাড়িয়ে জনগণের জীবনকে আরও কঠিন করে তোলা হচ্ছে। নেতৃবৃন্দ চলমান দুঃশাসনের অবসান, ব্যবস্থা বদল ও বাম গণতান্ত্রিক বিকল্প গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে বলেন, চলমান দ্বি-দলীয় ধারার রাজনীতির অবসান ছাড়া মানুষের মুক্তি নেই।

এজন্য বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষকে নিজস্ব দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণতন্ত্র, ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা, দুঃশাসনের অবসান ও ব্যবস্থা বদলের সংগ্রামকে বেগবান করতে হবে।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি নীতিনীষ্ঠ অবস্থানে থেকে এই আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। কোন অপশক্তি কমিউনিস্ট পার্টিকে এই পথ থেকে বিচ্যুত করতে পারবে না।

সকাল ১০টায় অস্থায়ী বেদীতে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবন্ধনের মধ্য দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন পর্ব শুরু হয়। এরপর শ্রদ্ধা নিবেদন করে বাম গণতান্ত্রিক জোট, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাসদ মার্ক্সবাদী, বাংলাদেশ জাসদ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টি, বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), গণতন্ত্রী পার্টি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি ঢাকা মহানগর উত্তর কমিটি, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ কমিটি, ঢাকা জেলা, নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটি, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, জাতীয় শ্রমিক কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদ, বাংলাদেশ কৃষক সমিতি, বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর সমিতি, সিপিবি নারী সেল, বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, বাংলাদেশ হকার্স ইউনিয়ন, রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক শ্রমিক ইউনিয়ন, গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, বস্তিবাসী ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফন্ট, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, যুব মৈত্রী, সিপিবি সূত্রাপুর থানা, সিপিবি ধানমন্ডি থানা, সিপিবি পল্টন থানা, সিপিবি মিরপুর থানা, সিপিবি মোহাম্মদপুর থানা, সিপিবি হাজারীবাগ থানা, সিপিবি শ্যামপুর শাখা, সিপিবি পল্টন শাখা, সিপিবি ডেমরা শাখা, সিপিবি শান্তিনগর শাখা, সিপিবি হাতিরঝিল শাখা, ছাত্র ইউনিয়ন ঢাকা মহানগর কমিটি, ছাত্র ইউনিয়ন সূত্রাপুর থানা কমিটি, সাপ্তাহিক একতা, সিপিবি অফিস শাখা, শহীদ তাজুলের পরিবারের পক্ষথেকে তার পুত্র ও পুত্রবধুসহ বিভিন্ন রাজনৈতকি গণসংগঠন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে বেইলি রোডে ভয়াবহ অগ্নিকা-ে নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

আন্তর্জাতিক সংগীতের মধ্য দিয়ে পুরো কর্মসূচির সমাপ্তি ঘটে।