বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) আয়োজিত ‘বাজেট: গণমানুষের ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষসহ বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদরা বলেছেন- দ্রব্যমূল্য ও ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, খেলাপি ঋণ, অর্থপাচার- এসব অর্থনৈতিক সমস্যা নয়, লুটেরা রাজনীতির সংকট। এজন্য বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থার আমূল জরুরী। আসন্ন বাজেটে খাদ্য-কাজ-চিকিৎসা-শিক্ষা ও বাসস্থানের নিশ্চয়তার জন্য বরাদ্দ সুনিশ্চিত করতে হবে। একই সাথে ওই বরাদ্দের টাকা যাতে সংশ্লিষ্টদের জন্য দুর্নীতি, দলবাজী ও স্বজন প্রীতি ছাড়াই যাতে খরচ হয় সেই ব্যবস্থাই করতে হবে।
তারা বলেন, বাজেট এর আগে সরকার ব্যবসায়ী, শিল্পপতি ও বড়লোকদের সাথে সংলাপ করে। যারা দেশের টাকা পাচার করছে, ব্যাংকের টাকা নিয়ে শোধ করে না তাদের সাথে সংলাপ করে। অথচ দেশের অর্থনীতির চাকা যারা সচল রেখেছে সেই শ্রমজীবী মানুষের সাথে সংলাপ করে না। কমিউনিস্ট পার্টি আজকের এই আলোচনার আয়োজনের মধ্য দিয়ে প্রমাণ করলো তারা প্রকৃতপক্ষে গণমানুষের রাজনৈতিক দল। আমরা আশা করব আমাদের কথা দেশবাসী শুনবে এবং আমাদের হক প্রতিষ্ঠার জন্য সবাই একমত হয়ে আন্দোলন গড়ে তুলবে।
আজ ১৫ই মে ২০২৪, সকাল ১১ টায় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় কার্যালয় মুক্তিভবনের মৈত্রী মিলনায়তনে আয়োজিত এই আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম। সূচনা আলোচনা উত্থাপন করেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, সিপিবির কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যাপক এম এম আকাশ। বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক তাজুল ইসলাম, অধ্যাপক রাশেদ আল তিতুমীর, সিপিবি’র সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, সহকারী সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ, কৃষক আব্দুল বাতেন, শ্রমিক সোমা আক্তার, আব্দুল কুদ্দুস বস্তিবাসী কুলসুম বেগম, ক্ষেতমজুর তাজু মিয়া, আদিবাসী রাখি ম্রং, তরুণ নারী প্রতিনিধি প্রজ্ঞা পারমিতা, যুব প্রতিনিধি প্রীতম দাস, শিক্ষক এস এম সুমন, সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি বিমল মজুমদার, বিশিষ্ট চিকিৎসক ডাক্তার এম এ সাঈদ, ডাক্তার ফারুকী ও বিশিষ্ট লেখক রাজনীতিক মোস্তাক আহমেদ। সিপিবি’র প্রেসিডিয়াম সদস্য শাহীন রহমান, লক্ষ্মী চক্রবর্তী, অধ্যাপক এএন রাশেদা প্রমুখ নেতৃবৃন্দ এসময় উপস্থিত ছিলেন।
অধ্যাপক এমএম আকাশ তার বক্তব্যে বলেন, বাজেট যেহেতু সরকারের সামষ্টিক আয়-ব্যয়ের হিসাব, সে জন্য বাজেটে অর্থনৈতিক বাস্তবতা, সরকারের শ্রেণীগত পক্ষপাতিত্ব ও উন্নয়ন দর্শনের গতিমুখের একটি প্রতিফলন অনিবার্য ভাবে প্রতিফলিত হয়। তিনি বলেন, এবারের বাজেটে দুটি সংকট প্রধান: বাংলাদেশে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির হার অস্বাভাবিকভাবে উঁচু এবং ডলারের ক্রমবর্ধমান মূল্যের সমস্যা।
তিনি বলেন, বর্তমানে ঋণখেলাপী ও টাকা পাচারকারীরা ক্ষমতা কাঠামোয় যে রকম শক্তিশালী অবস্থানে পৌঁছে গেছেন, তাতে তাদেরকে ট্যাক্স এর আওতায় আনা না গেলে সরকারী বাজেটের আয় দিয়ে ব্যয় সংকুলান করা যাবে না। বিদেশী মুদ্রার রিজার্ভও কি পুনরুদ্ধার সম্ভব হবে? সম্প্রতি ক্ষমতাসীন সরকারের ঘনিষ্ঠজনই বলতে শুরু করেছেন যে, “বিদেশে অর্থ পাচারের সিংহভাগই (শতকরা ৯০ ভাগ) ঘটছে ব্যাংকিং চ্যানেলে। শুধু ২০২২-২৩ অর্থবছরেই ১৪১০৬ টি সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য মিলেছে যা আগের বছরের তুলনায় শতকরা ৬৫ ভাগ বেশী।”
তিনি বলেন, পাচারের টাকা ফেরত আনার ক্ষেত্রে কোন আইনগত বাধা নেই। এই বাজেটে তার প্রথম পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে। শীর্ষ খেলাপীদের নাম প্রকাশ ও তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হতে পারে। ১৯৯৯-২০০০ সালে শীর্ষ দশ খেলাপির তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছিল তখন খেলাপিরা মামলা করে তাদের ঋণখেলাপিত্বের অসুবিধা উঠিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। তবে তারা হেরে যান। কেন্দ্রীয় ব্যাংক তখন ঋণ খেলাপকে ‘সামাজিক’ সন্ত্রাস হিসাবে চিহ্নিত করেছিল। সেই বছর হাইকোর্টের আপিল বিভাগ ৫৭ জন খেলাপির বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংককে জয়ী ঘোষণা করেছিল। এখনও সেটা সম্ভব।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত যেটুকু প্রবৃদ্ধির সূচকের ও মানব উন্নয়ন সূচকের উন্নতি এ যাবৎ পরিদৃশ্যমান হয়েছে তার মূলে রয়েছে আমাদের পরিশ্রমী কৃষক, পোশাক শিল্পের নারী শ্রমিক, শ্রমঘন মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্পের অসংখ্য উদ্যোক্তাবৃন্দ এবং বিদেশী প্রবাসী শ্রমিকবৃন্দের অবদান। এই সব উৎপাদনশীল জনগোষ্ঠিকে আরো বিকাশের সুযোগ প্রদান ও ক্ষমতায়নের মাধ্যমে একটি অন্তর্ভুক্তিমুলক ও বৈষম্য-নিরসক উন্নয়ন প্রক্রিয়া চালু করার মধ্যেই নিহিত আছে বর্তমান সংকট নিরসনের প্রকৃত ইতিবাচক চাবিকাঠি।
অধ্যাপক তাজুল ইসলাম বলেন, বাজেটের লক্ষ্য স্থির না থাকায় সমস্যা হচ্ছে সমসাময়িক অবস্থা বিবেচনা করে বাজেট প্রণীত হচ্ছে। তাতে আসল সমস্যা সমাধান হচ্ছে না। এর মূল কারণ রাজনৈতিক। তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ডলার সংকট এগুলো আসলে মূল সংকটের বহিঃপ্রকাশ। ডলার দেশে যথাযথভাবে আসে না আবার ডলার দেশ থেকে চলে যায়। দেশের ভেতরের সম্পদ বাইরে নিতে চাইলে ডলার করে নেওয়া ফু দিয়ে বাইরে পাঠানো সহজ। এগুলো ঠেকাতে যথাযথ পরিকল্পনা ছাড়া সম্পদের লুটপাট ঠেকানো যাবে না। তিনি বলেন এক সময় শিক্ষা স্বাস্থ্য খাতকে উপেক্ষা করে উৎপাদনশীলতার বিকাশের নামে অনেক উন্নয়ন প্রকল্প নেয়া হতো। আসলে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মতো উৎপাদনশীল খাত আর নেই। এখানে ব্যয় করলে দেশের উৎপাদন বাড়ে আজ এটা বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। তিনি বলেন, শুধু সুরক্ষার নামে গরীবকে শুধু টেনে তোলা নয়, তার সব অধিকারও নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য ভূমি সংস্কার জরুরী বলে তিনি উল্লেখ করেন।
অধ্যাপক রাশেদ আল তিতুমীর বলেন, সাধারণ মানুষের ও সরকারের দায় বেড়েছে আয় কমেছে এটাই তো বাস্তব চিত্র। স্বাধীনতার পর যত ঋণ নেওয়া হয়েছে এই সরকারের আমলে তার থেকে বেশি ঋণ নেয়া হয়েছে। সরকারের সংকট এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে তারাই বলছে জ্বালানি খাতে ৩২ হাজার কোটি টাকা ঋণ পরিশোধ করতে পারছে না। এর জন্য দায়ী কে সেই প্রশ্ন করতে হবে। তিনি বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী নামে কয়েকটি খাতে শুধু বরাদ্দ দিয়ে দেশের মানুষের সংকট সমাধান করা যাবে না। তিনি বলেন, সার্বজনীন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি নিতে হবে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির মূল কথা হবে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সকল বিষয়ে মানুষের দায়িত্ব নেওয়া। আমাদের অর্থনীতি সেটা বহন করতে পারে। তিনি বলেন ইউনিয়ন পর্যায়ে ভূমি অফিস থাকলে কর কার্যালয় থাকবে না কেন? করের টাকা লুটপাট নয়, জনস্বার্থে ব্যবহার করতে হবে।
কৃষক আব্দুল বাতেন বলেন, প্রকৃত কৃষক জমি চাষ করে না, বর্গা চাষিরাই কৃষি কাজ করে। অথচ তারা ক্ষতিগ্রস্ত হলে সরকারি কোন প্রণোদনা পায় না। আমরা ফসলের লাভজনক দাম পাইনা। দিন দিন উৎপাদন খরচ বাড়ছে, ঠিকমতো বিদ্যুৎ পাইনা, সারের দাম বাড়তি, ভালো মানের কীটনাশক পাই না-এ বিষয়ে কৃষি বিভাগ থেকে ঠিকমতো পরামর্শ পাওয়া যায় না।
গার্মেন্টস শ্রমিক সুমা আক্তার বলেন, আমাদের নিয়ে অনেক কথা বলা হয় যে- আমরা নাকি দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছি। কিন্তু আমরা যে বেতন পাই তা দিয়ে ঠিক মত খেতে পারি না। হসপিটালে চিকিৎসা করাতে পারি না। পরিবার-পরিজনকেও দেখতে পারিনা। তিনি সকল শ্রমিকের জন্য জাতীয় ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ এবং সারাদেশে রেশনিং এর দাবি জানান। তিনি বলেন আমরা শুনেছি আমাদের জন্য নাকি বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হবে কিন্তু এগুলো তো দেখছি না।
আদিবাসী রাখি ম্রং বলেন দেশের ৮০ শতাংশ আদিবাসী অতি দরিদ্র। তাদের উন্নয়নে বরাদ্দ যথাযথ নয়। পার্বত্য এলাকায় পুলিশি খাতে যত বরাদ্দ দেওয়া হয় স্থানীয় জনগণের জন্য তত বরাদ্দ দেওয়া হয় না। তিনি আদিবাসীদের ভূমি সমস্যা সমাধানের পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান।
রিকশাচালক আব্দুল কুদ্দুস বলেন, যাদের টাকা নেই তাদের দিকে কেউ তাকায় না। দিন দিন তারা নিঃস্ব হচ্ছে। আমরা ঋণ করে ভাত খাই। গ্রামাঞ্চলে ঋণ করার পরে ওই কিস্তি পরিশোধের জন্য ঢাকায় আসতে হয়। তিনি বলেন, ব্যাংকের ঋণ নিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা মেরে দিচ্ছে অথচ আমাদের সাধারণ মানুষকে অল্প সুদে ঋণ দিলে আমরা নিজেরা বাঁচতে পারি, তা পরিশোধ করতে পারি-সেটা করা হচ্ছে না তিনি বলেন সরকার আমাদের সবাইকে কাজ দিতে না পারলেও আমরা হকারি করলে আমাদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে। আমাদেরকে এ দেশের মানুষ মনে করলে বাজেটে এইসব দরিদ্রদের জন্য বরাদ্দ দিতে হবে এবং প্রকৃত দরিদ্ররা যাতে সেই টাকা পায় তার ব্যবস্থা করতে হবে।
ক্ষেতমজুর তাজা মিয়া বলেন ১২ বছর বয়স থেকে ক্ষেতমজুরের কাজ করি। আজ আমার ৬২ বছর বয়স। আমাদের ক্ষেতমজুরি সবসময় কাজ থাকে না। ছেলেমেয়েরে লেখাপড়া করাতে পারেনা। তারাও ক্ষেতমজুর। আমাদের বারোমাস কাজ দেওয়া হোক। আমার সন্তানদের চিকিৎসা, শিক্ষা ও বাসস্থান দেওয়া হোক।
বস্তিবাসী কুলসুম বেগম বলেন, আগে বস্তিবাসী ছিলাম এখন ঝুপপি বস্তি রেল এলাকাবাসিতে পরিণত হয়েছি। আমরা আসলে এখন পথবাসী। আমাদের দেখার কেউ নেই। আমাদের জন্য কোন বরাদ্দ আছে কিনা জানিনা, আমরা তা পাই না। আমরা কাজ করে খেতে চাই। শুনছি সংবিধানে নাকি আমাদের কাজ ও মজুরি নিশ্চয়তার কথা বলা আছে। সেইটা দেওয়া হোক। আর গ্রাম থেকে শহরে এসে যাতে ঢাকায় এসে বস্তিবাসী না হতে হয় তার জন্য গ্রামেগঞ্জেও কাজ, শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হোক।
যুব প্রতিনিধি প্রীতম দাস বলেন দেড় কোটি যুবক বেকার। যারা কাজ পায়Ñ তাও মানসম্মত না। পরিকল্পিত শিক্ষা না থাকায় এবং পরিকল্পিত কর্মসংস্থান না থাকায় যুবসমাজের হাত কাজের হাতে পরিণত করা যাচ্ছে না। পরিকল্পিতভাবে যুবকদের কর্মসংস্থান করা এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা না পর্যন্ত পরিকল্পিতভাবে এই যুবকদের কিছু কাজ দিয়ে বেকার ভাতা দেওয়ার পরিকল্পনা থাকা দরকার। যুবকদের হাতকে যোগ্য করে গড়ে তুলতে আধুনিক প্রযুক্তিতে অভ্যস্ত করার জন্য পরিকল্পনা থাকা দরকার। যুবকদের বিদেশে পাঠাতে দক্ষ করে গড়ে তোলারও পরিকল্পনা এবং এজন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ থাকা দরকার।
প্রজ্ঞা পারমিতা বলেন নারী উন্নয়নে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করা ছাড়া নারী সমাজের অগ্রগতি নিশ্চিত করা যাবে না। বিভিন্ন খাতের বরাদ্দে যাতে নারীদের জন্য পৃথক বরাদ্দ ও তার যথাযথ ব্যবহার করা যায় সেজন্যে প্রতিমুহূর্তে নজরদারি করা জরুরি। তিনি নারীদের প্রজনন স্বাস্থ্যসেবায় পর্যাপ্ত বরাদ্দের দাবি জানান।
ডাক্তার ফারুকী বলেন স্বাস্থ্যখাতে প্রয়োজন অনুযায়ী বরাদ্দ নেই। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে পর্যাপ্ত বরাদ্দ এবং এর সুষম ব্যবস্থাপনা ছাড়া এসব খাতে অগ্রগতি ঘটানো যাবেনা। তিনি বলেন অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় এখন স্বাস্থ্য খাতে ১১ শতাংশ বরাদ্দের কথা অথচ ৭ শতাংশ বরাদ্দে থেমে থাকছে। তিনি বলেন গবেষণা খাতে যাও বরাদ্দ করা হয় তা পেতে ছয় মাস লেগে যায়। এই গবেষণা কাজের সময় পাওয়া যায় মাত্র ছয় মাস ফলে গবেষণা হয় না, টাকা ফেরত যায়।
ডাক্তার এম এ সাইদ বলেন পুরো উন্নয়ন দর্শনের পরিবর্তন ছাড়া ভালো বাজেট জনস্বাথের্র বাজেট আশা করে লাভ নেই। শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ সবার জন্য বাসযোগ্য মানবিক পৃথিবী গড়তেই বাজেটের লক্ষ্য রাখা উচিত।
মোস্তাক আহমেদ বলেন পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে, প্রতিরক্ষা খাতে বাজেট বরাদ্দ বাড়তে থাকে। অথচ কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বাড়ে না। গ্রামের মানুষ আজ নিজেদের স্বাস্থ্য রক্ষায় জমি বিক্রি করতে বাধ্য হয়। ২০১৬ সালে ভারতে চিকিৎসা করতে যেত পাঁচ লাখ মানুষ আর ২০২৩ সালে গেছে ২৫ লক্ষ মানুষ। চিকিৎসা প্রয়োজন হলে ঢাকায় দৌড়াতে হয় এ অবস্থার পরিবর্তন ছাড়া দেশের মানুষের অর্থনীতি এবং নিজস্ব স্বার্থ রক্ষা করা যাবে না।
সভায় সিপিবি নেতৃবৃন্দ বলেন পুরো বাজেটের রাজনৈতিক দর্শন এ বাজেটের জনস্বার্থের প্রতিফলন না ঘটিয়ে দেশি-বিদেশি লুটেরাদের স্বার্থের প্রতিফলন ঘটে। ‘আমি ও ডামি’ ভোটে তথাকথিত নির্বাচিত জাতীয় সংসদ কোটিপতিদের ক্লাবে পরিণত হয়েছে। তারা তাদের স্বার্থেই বাজেট ঘোষণা করবে। এই সংসদে বাজেট নিয়ে আলোচনা হয় না। এখানে নেতা নেত্রীদের পক্ষে কে কত বেশি গুনগান গাইতে পারে সেটি করা হয়। সরকারের ঋণের পরিমাণ বাড়ছে আবার ঋণ করে ঋণ শোধ করার ধারা চলার মধ্য দিয়ে ঋণের পরিমাণ আরো বেড়ে চলবে। আই এম এফ এবং কিছু দেশের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বর্তমান অর্থনৈতিক সমস্যার আপতত সমস্যার কিছু সমাধান করার চেষ্টা করা হবে কিন্তু এইসব শক্তির নির্দেশ উপেক্ষা করতে পারবে না।
নেতৃবৃন্দ বলেন, এবার সরাসরি আইএমএফ এর নির্দেশে বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি তুলে দেওয়ার নামে মূল্যবৃদ্ধির উৎসব দেখা যাবে। এই সমস্যা রাজনৈতিক। এর সমাধান করতে গেলে বাম গণতান্ত্রিক বিকল্প শক্তি সমাবেশ করতে হবে। যারা বিকল্প নীতি প্রণয়ন করবে যা হবে জনস্বার্থের কমিউনিস্ট পার্টি মুক্তিযুদ্ধের ধারায় বাজেট প্রণয়নের আহ্বান জানায়। কমিউনিস্ট পার্টি সমাজতন্ত্রের লক্ষ্যকে সামনে রেখে বিপ্লবী গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের যে কথা বলে আসছে সেই ধারায় বাজেট প্রণয়ন ছাড়া বাজেটে জনস্বার্থ নিশ্চিত করা যাবে না। নেতৃবৃন্দ বলেন এখনকার রাজনৈতিক কাঠামো দুর্বৃত্ত রাজনীতিবিদদের হাতে। ক্ষমতায় ক্ষমতার বাইরের শাসকগোষ্ঠীও এই ধারার সমর্থক। নেতৃবৃন্দ বলেন, আজকের এই আলোচনায় এটা আবার উচ্চারিত হয়েছে যে কাজ, খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান, মর্যাদার নিশ্চয়তা চায় সাধারণ মানুষ। অথচ শাসকরা এটা দিতে ব্যর্থ হয়েছে, হচ্ছে।
তাই এদের বিরুদ্ধে শাসকগোষ্ঠীর বিপরীতে ব্যবস্থা বদলের সংগ্রাম অগ্রসর করতে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষকে নিজেদের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণআন্দোলন, গণসংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে।