বঙ্গোপসাগরের সেন্ট মার্টিন দ্বীপে সাগরের পানিতে নেমেছে সৈয়দা লারিসা রোজেন। বয়স ১০ বছর ৪ মাস। তবে আর ১০ জনের মতো নিছক বেড়াতে আসেনি সে। উদ্দেশ্য বাংলা চ্যানেল পাড়ি দেওয়া। আজ রোববার তারই অনুশীলন চলছে। লারিসাসহ এবার বাংলা চ্যানেল পাড়ি দিতে নামবেন ৮০ সাঁতারু।
‘১৬তম ফরচুন বাংলা চ্যানেল সাঁতার-২০২১’ অনুষ্ঠিত হবে আগামীকাল সোমবার সকাল ১০টায়। কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার শাহ্পরীর দ্বীপের পশ্চিম সৈকত থেকে এই সাঁতার শুরু হবে। ১৬ দশমিক ১ কিলোমিটার দূরত্বের বাংলা চ্যানেল পাড়ি দিয়ে সাঁতার শেষ হবে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে। সাঁতারের আয়োজন করেছে ‘ষড়জ অ্যাডভেঞ্চার’ ও ‘এক্সট্রিম বাংলা’।
ছোট্ট লারিসা সফল হলে বাংলা চ্যানেল পাড়ি দেওয়া কনিষ্ঠ সাঁতারু হবে সে। কেমন লাগছে, এমন প্রশ্নের জবাবে জানায়, ‘একটু ভয় ভয় করছে। তবে আশা করি আমি পারব। আজ সবার সঙ্গে প্র্যাকটিস করলাম। ঢাকাতেও নিয়মিত সাঁতরাই।’ লারিসার সঙ্গে সাঁতারে অংশ নিচ্ছেন তার বাবা সৈয়দ আক্তারুজ্জামান ও বড় ভাই সৈয়দ আরবিন আয়ানও। বাবা ও দুই সন্তানের একসঙ্গে অংশ নেওয়াটাও বাংলা চ্যানেলে একটা রেকর্ড।
নানা কারণে এবারের বাংলা চ্যানেল সাঁতার বিশেষ হয়ে উঠছে বলে জানান ষড়জ অ্যাডভেঞ্চারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লিপটন সরকার। এখন পর্যন্ত ১৭ বার বাংলা চ্যানেল পাড়ি দিয়েছেন তিনি। কাল সফল হলে টানা ১৮ বার বাংলা চ্যানেল পাড়ি দেওয়ার রেকর্ড গড়বেন। তিনি জানান, এবার সর্বোচ্চ ৮০ জন সাঁতারু অংশ নেবেন। গত বছর ৪৩ জন সাঁতারু অংশ নিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে ৩৯ জন সফল হয়েছিলেন।
লিপটন সরকার বলেন, ‘এই সাঁতার আন্তর্জাতিক রীতি মেনে পরিচালনা করা হচ্ছে। নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। এবারও একজন বিদেশি সাঁতারু অংশ নিচ্ছেন। আমরা বাংলা চ্যানেল সাঁতারকে আন্তর্জাতিক করতে পেরেছি। গতবারের চেয়ে এবার প্রায় দ্বিগুণসংখ্যক সাঁতারুর অংশগ্রহণ বলে দিচ্ছে বাংলাদেশে দূরপাল্লার সাঁতার জনপ্রিয় হচ্ছে।’
যুক্তরাষ্ট্রে ‘আয়রনম্যান ৭০.৩ ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ’–এ প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ‘আয়রনম্যান’ চ্যালেঞ্জ শেষ করা মো. সামছুজ্জামান আরাফাত আটবারের মতো বাংলা চ্যানেল সাঁতারে নামছেন। তিনি বলেন, ‘এবারে এই সাঁতারের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে চাই।’
বঙ্গোপসাগরে দূরপাল্লার সাঁতারের উপযোগী ১৬ দশমিক ১ কিলোমিটার দূরত্বের বাংলা চ্যানেল আবিষ্কার করেন প্রয়াত কাজী হামিদুল হক। ২০০৬ সালে প্রথমবারের মতো বাংলা চ্যানেল সাঁতার অনুষ্ঠিত হয়। সেবার সাঁতারে অংশ নিয়েছিলেন লিপটন সরকার, ফজলুল হক সিনা ও সালমান সাইদ। ফজলুল হক সিনার বয়স এখন ৬০ বছর। এবার তিনি সবচেয়ে বেশি বয়সী সাঁতারু।
১১ বারের মতো সাঁতারে নামছেন মো. মুনিরুজ্জামান। বাংলাদেশি হিসেবে প্রথমবারের মতো বাংলা চ্যানেল এপার–ওপার পাড়ি (ডাবল ক্রস) দেওয়া মো. সাইফুল ইসলাম রাসেলও রয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আট ছাত্র এই সাঁতারে অংশ নিচ্ছেন। তাঁদের মধ্যে আছেন প্রথম আলোর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভার আলী রওনক ইসলাম। গত বছরও বাংলা চ্যানেল পাড়ি দেন তিনি।
১৬তম বাংলা চ্যানেল সাঁতারের প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে আছে বাংলাদেশ এডিবল অয়েল লিমিটেডের ব্র্যান্ড ফরচুন। রেসকিউ পার্টনার হিসেবে রয়েছে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড। অংশীদার হিসেবে আরও আছে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন, ইউনাইটেড সিকিউরিটিজ, সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক লিমিটেড, ষড়জ, ভিসা থিং ও স্টুডিও ঢাকা।