বাংলাদেশে ফরেন কারেন্সি কনভার্সন রেট মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছেছে। সাধারণ মানুষ হিসেবে আপনি বাংলাদেশ ব্যাংক কিংবা শিডিউল ব্যাংকগুলোর ওয়েব সাইটে গেলে যে কনভার্সন রেটটা পাবেন (৮৭.৬০/USD) এটা মূলত এখন ডামি এক্সচেঞ্জ রেট। ইম্পোর্ট পেমেন্টের বড় অংশ এই এক্সচেঞ্জ রেটে হচ্ছে না মার্কেটে। বড় ইম্পোর্ট বিল সেটেলমেন্ট হচ্ছে এরাউন্ড ৯৫ টাকা/ডলারে।
কী কারণ?
কারণ ফরেন কারেন্সি মার্কেট ইজ টু মাচ ড্রাই নাউ। মার্কেটে ডলারের সংকট আছে। ডিমান্ড সাপ্লাই গ্যাপ বড় হচ্ছে দিন দিন। আমদানি ব্যয় ইতোমধ্যে বেড়েছে ৪৬%, বছর শেষে সেটি কোথায় গিয়ে থামবে বলা যাচ্ছে না। ৫০% তো অবশ্যই। মানে আপনি ২০২১ সালে ১০০ ডলারের আমদানি ব্যয় পরিশোধ করলে ২০২২ এর শেষে করবেন ১৫০ ডলার। আমরা ডলার ছাপাই না। ডলার আয় করি রেমিটেন্স এবং রপ্তানি আয় থেকে। সমস্যাটা হলো আমদানি ব্যয় যে হারে বেড়েছে সে হারে রপ্তানি কিংবা রেমিটেন্স আয় বাড়েনি। বছর শেষে ধারণা করা হচ্ছে ১৩ থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলারের একটা গ্যাপ তৈরি হবে ফরেন কারেন্সি ম্যানেজমেন্টে, আই মিন কারেন্ট একাউন্টে। সেটি চাপে ফেলবে রিজার্ভকে। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যমে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে। সামনে আরো নিয়ন্ত্রণ আসবে।
কী হবে সামনে?
এটি আগাম অনুমান করা কষ্টসাধ্য। তবে এটুকু বলা যায় আমদানিকৃত পণ্যের মূল্য বাড়বে। মুদ্রাস্ফীতি বাড়বে। অর্থনীতি ঝামেলায় পড়বে।
উপায়?
এটিরও সুনির্দিষ্ট সমাধান দেয়া দুরূহ। রপ্তানি আয় হুট করে বৃদ্ধি করার সুযোগ সীমিত। যেই সুযোগটুকু আছে সেটি হলো রেমিট্যান্সকে ব্যাংকিং চ্যানেলে আনার ব্যাপারে আরো পদক্ষেপ নেয়া। এখনো প্রচুর রেমিট্যান্স হুন্ডিতে আসে। প্রচুর।
কেন আসে?
আসে কারণটা বুঝবেন টপ টেন রেমিট্যান্স আনয়নকারী ব্যাংকের দিকে তাকালে। আমি দুটি ছবি দিচ্ছি পোস্টের সাথে।
চিত্রঃ ০১
এগুলোর দিকে তাকালে দেখবেন দেশের সবচে' বড় ব্যাংক সোনালী ব্যাংক, যাদের দেশ ব্যাপী প্রচুর শাখা আছে তারা টোটাল রেমিটেন্সের মাত্র ৬% পেমেন্ট করে। অন্য বেসরকারি ব্যাংকের দিকে তাকান। বুঝতে পারবেন কেন গ্রামের মানুষ হুন্ডিতে রেমিট্যান্স আনে।
এই ছবির সাথে পরের ছবিটি দেখুন।
চিত্রঃ ০২
সবচে বেশি রেমিটেন্স আসে মধ্যপ্রাচ্য থেকে এবং এই মধ্যপ্রাচ্যে যেসব প্রবাসীরা আছেন তাঁদের অধিকাংশের পরিবার থাকে গ্রামে। যেখানে শাখা আছে সরকারী ব্যাংকের। কিন্তু সেই সব ব্যাংক এই রেমিটেন্স আনতে পারছে না। পারছে না কারণ কারো রেমিটেন্স আসলেই একটা উপরি চাওয়ার প্রচলন আছে গ্রামের শাখাগুলোতে। সেই সাথে বাজে ব্যবহার বোনাস। এই যায়গাটা যদি সুনির্দিষ্টভাবে এবং যথেষ্ট মনিটরিং এর মাধ্যমে নিশ্চিত করা যায়, আমি মনে করি রেমিটেন্স প্রবাহ ব্যাংকিং চ্যানেলে বাড়বে।
এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে রেমিটেন্স আহরণকারী এক্সচেঞ্জ হাউজে কাস্টমার বান্ধব লোকবল পাঠানোর ব্যবস্থা করা যেতে পারে। খুব বেশি স্মার্ট, শিক্ষিত লোক দরকার নেই। এমন লোক দরকার যে প্রবাসী শ্রমিকদের কাছে গিয়ে ভাই-বাপ-চাচা বলে বুকে জড়িয়ে ধরতে পারবে। যে সম্পর্ক গড়তে গিয়ে শ্রমিকের ঘামের গন্ধে ছিটকে আসবে না। যে দায়িত্ব নিয়ে রেমিট্যান্স আহরণের কাজটা করবে।
সেই সাথে প্রণোদনার মাত্রা বাড়ানোর কথাও ভাবা যেতে পারে। কিংবা রেমিট্যান্সের জন্য ভাবা যেতে পারে আলাদা কনভার্সন রেটের কথাও। মনে রাখবেন এক্সপোর্ট বাড়ানো সময় সাপেক্ষে। আর এক্সপোর্ট বাড়লেও সেটার বিপরীতে ব্যাক টু ব্যাক এলসিতে ইম্পোর্ট পেমেন্ট বাবদ ডলার আবার বাইরে চলে যাবে একটা বড় অংশ। আমাদের এক্সক্লুসিভ রপ্তানি পণ্য পাট বা পাটজাতীয় পণ্যের মাজা আমরা ভেঙ্গে ফেলেছি একের পর এক পাটকল বন্ধ করে। ফলে হাতে অপশন খুব কম। অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে রেমিটেন্সেই মনোযোগ দিতে হবে।