শিরোনাম
নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থী ধ্রুবব্রত দাস ধ্রুব’র অস্বাভাবিক মৃত্যুর সঠিক তদন্তের দাবিতে মানববন্ধন অনলাইনে কুতথ্য প্রতিরোধে সফল ভূমিকা রাখছে আইইডি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সম্মেলন নিত্যপণ্যের দাম কমানো, রেশনিং ব্যবস্থা চালুর দাবিতে গাইবান্ধায় বাম জোটের বিক্ষোভ দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে জরুরী পদক্ষেপের দাবি বাম জোটের জ্বালানি খাতে এখনই ৪০ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় সম্ভব খাওয়ার স্যালাইনের সহ-উদ্ভাবক বাংলাদেশের বন্ধু রিচার্ড ক্যাশ মৃত্যু বরণ করেছেন বিসিএস পরীক্ষা দেওয়া যাবে তিনবার  কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে পদত্যাগের আলটিমেটাম  বাংলাদেশ থেকে পাচারকৃত টাকা ফেরাতে  আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক সহযোগিতায় রাজি

ইসির ইভিএমে কারসাজির সুযোগ নেই: জাফর ইকবাল

ইসির ইভিএমে কারসাজির সুযোগ নেই: জাফর ইকবাল

এক দল প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞকে ইভিএম দেখিয়ে ভোটগ্রহণে তা ব্যবহারের সম্মতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তাদের এই মতের উপর আস্থা রাখতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল।

বুধবার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স ও প্রকৌশল বিভাগের একদল শিক্ষক, গবেষক ও প্রযুক্তিবিদ; নির্বাচন কমিশনের ইভিএম সংশ্লিষ্ট সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তাদের নিয়ে মতবিনিময় করে ইসি।

সভার পর অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল এবং এ কায়কোবাদ সাংবাদিকদের বলেন, ইসির ইভিএম দেখে তারা সন্তুষ্ট হয়েছেন যে এতে কারসাজির কোনো সুযোগ নেই।

বাংলাদেশের নির্বাচনে ভোটগ্রহণে এক যুগ আগে ইভিএম ব্যবহারের শুরু থেকেই রাজনৈতিক অঙ্গনে তা নিয়ে চলছে বিতর্ক। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে হলেও তার ঘোর বিরোধী বিএনপি।

ইভিএমে ভোটগ্রহণে ফল দ্রুত আসে বলে সরকারি দলের নেতারা এর পক্ষপাতি। অন্যদিকে সরকারবিরোধী দলটির নেতাদের ভাষ্য, যন্ত্রের মাধ্যমে ভোটগ্রহণে ব্যাপক কারচুপির সুযোগ রয়েছে।

কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন নতুন ইসি এ বছরের শুরুতে দায়িত্ব নেওয়ার পর দেড় বছর বাদে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সম্ভাব্যতা যাচাই করছে।

 

ইভিএমের সব দিক বিশ্লেষণ করে মতবিনিময় সভা শেষে জাফর ইকবাল বলেন, “ইভিএম নিয়ে ডেমনস্ট্রেশন পুরোটাই দেখেছি। তার ভেতরের খুঁটিনাটি, টেকনিক্যাল বিষয় যা আছে, তাও জেনে নিয়েছি। সবশেষ আমাদের জন্য রাখা মেশিনটি খুলে দেখেছি। ব্যক্তিগতভাবে আমি কনভিন্সড হয়েছি। অত্যন্ত চমৎকার মেশিন।”

বাংলাদেশ প্রযুক্তিগত বিষয়ে অনেক এগিয়ে আছে দাবি করে তিনি বলেন, বায়োমেট্রিকসহ এনআইডি পৃথিবীর কম দেশেই আছে। তাই নিজের দেশের উপরে আস্থা রাখতে হবে।

“যেহেতু আমাদের ডেটা রয়েছে, ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে অত্যন্ত নিখুঁতভাবে করা সম্ভব। একজন মানুষ অন্যের পরিবর্তে ভোট দেওয়ার বিষয়টি মোটামুটিভাবে অসম্ভব কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে।… আপাতত ম্যানিপুলেশনের জায়গা নেই। সে ম্যানিপুলেশন করতে হলে যে লেভেলে যেতে হবে, সে লেভেলে যাওয়া কারও পক্ষে সম্ভব না।”

ইভিএমের বিরোধিতাকারী রাজনৈতিক দলকেও প্রতিও যন্ত্রটি ব্যবহারের পক্ষে সায় দেওয়ার অনুরোধ রাখেন।

জাফর ইকবাল বলেন, “সেসব দলকে বলব, খবরের কাগজে দেখেছি তাদের মতো করে নতুন কমিশনও চায়; সে রাজনৈতিক দলকে বলব, আপনাদের মতো করে নতুন কমিশন তৈরি করতে পারেন, তাদেরকে অনুরোধ করব ইভিএম মেশিনটা ব্যবহার করেন।”

কম্পিউটার বিজ্ঞানের এই শিক্ষক বলেন, ইভিএমে কাস্টমাইজেশন দলের প্রতিনিধি, ভোট গ্রহণ কর্মকর্তার উপস্থিতিতে হয়।

“এখন বিশ্বাস করবে কি না, তা রাজনৈতিক ব্যাপার। আমি টেকনিক্যাল বিষয়টা বলেছি। টেকনিক্যাল পয়েন্ট থেকে এর ভেতরে ম্যানিপুলেট করা সম্ভাবনা নেই। ম্যালফাংশন করতে পারে যে কোনো যন্ত্র। তা হলে রিপ্লেস করার সে প্রযুক্তি রয়েছে।”

“আমি কনভিন্সড হয়েছি। এটা একদম পারফেক্ট একটা মেশিন । আমাদের দেশের জন্য সহজভাবে চালানো সম্ভব।”

ইভিএমে একজনের ভোট অন্যজনের কাছে পাঠানো সম্ভব কি না- প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, “এ মেশিনে সেটা সম্ভব না। ভেতরে ঢুকে ম্যানিপুলেট করা ইম্পসিবল। মেশিন হলে কখনও বলবেন না, বলা উচিত না যে শতভাগ হবে। আমরা বলতে পারি যে, কতটুকু পারফেকশনে পৌঁছেছে। যারা ম্যানিপুলেশনের কথা বলে তাদের অনুরোধ করব, তারা যেন সুনির্দিষ্টভাবে লিখিতভাবে বলেন।”

 

বুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক এ কায়কোবাদ ইভিএমের প্রতি আস্থা রাখার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন এভাবে, এর প্রতিটি অংশ এমনভাবে কাস্টমাইজড, একজন ইচ্ছে করলে সেখানে পরিবর্তন করতে পারবে না।

“কোনো মেশিনকে শতভাগ বিশ্বাস করা যাবে না। তবে এখানে যেটা করা হয়েছে মেশিন লেভেলে আর কোনো কাজ নেই, আর ম্যানিপুলেশনের কোনো সুযোগ নেই।”

রাজনৈতিক দল ও যে কোনো নাগরিকের বোঝার জন্য ইভিএম টেস্ট করার সুযোগ রাখতে পরামর্শ দেন তিনি।

এ প্রযুক্তিবিদ বলেন, “আমি আশা করি, এটা ডিসপ্লে করা হবে। যে কেউ টেস্ট করতে পারবে। ইসি এ কাজ করবে। যে কোনো নাগরিক এসে টেস্ট করতে পারবে, এটা সঠিক হয়েছে দেখতে পারবে।”

 

মতবিনিময় সভায় অংশ নেন বিএমটিএফ’র এমডি মেজর জেনারেল সুলতানুজ্জামান মো. সালেহ উদ্দীন, সেনা কল্যাণ সংস্থার চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম, ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক একেএম হুমায়ূন কবীর, আইডিএ প্রকল্প-২ এর প্রকল্প পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল কাশেম মো. ফজলুল কাদের, ইভিএম প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক কর্নেল সৈয়দ রাকিবুল হাসান, ইসির সিস্টেম ম্যানেজার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন, বুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মাহফুজুল ইসলাম, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মতিন সাদ আবদুল্লাহ, এশিয়া প্যাসেফিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক অলোক কুমার সাহা, আহসান উল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. ওমর ফারুক, এমআইএসটি-এর কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সিনিয়র ইন্সট্রাকটর গ্রুপ ক্যাপ্টেন মো. আব্দুল হালিম, এশিয়া প্যাসেফিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. রাজিবুল ইসলাম, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. রণি কুমার সাহা প্রমুখ।

নির্বাচন কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আহসান হাবিব খান, রাশেদা সুলতানা, মো. আলমগীর, মো. আনিছুর রহমান এবং ইসি সচিব হুমায়ুন কবীর খোন্দকার উপস্থিত ছিলেন এ সভায়।