তামাক কর বাস্তবায়ন করলে ৯ লাখ অকালমৃত্যু রোধ সম্ভব

তামাক কর বাস্তবায়ন করলে ৯ লাখ অকালমৃত্যু রোধ সম্ভব

জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাক ব্যবহার নিরুৎসাহিত করতে কর বৃদ্ধির মাধ্যমে তামাকপণ্যের মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। আসন্ন ২০২২-২৩ অর্থবছরে শতকরা হিসাবে নিম্নস্তরের সিগারেটের দাম সর্বোচ্চ পরিমাণে বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবিত এই তামাক কর বাস্তবায়িত হলে ১৩ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক সিগারেট ব্যবহার ছেড়ে দেবেন ও ৯ লাখ তরুণ সিগারেট ব্যবহার শুরু করা থেকে বিরত থাকবেন। এছাড়া প্রায় নয় লাখ (৮ লাখ ৯০ হাজার) অকালমৃত্যু রোধ করা যাবে। একইসঙ্গে সিগারেট বিক্রি থেকে বাড়তি রাজস্ব আদায় হবে ৯ হাজার ২০০ কোটি টাকা।

বৃহস্পতিবার (২৬ মে) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ঢাকা আহছানিয়া মিশন আয়োজিত ‘জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় আসন্ন ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে তামাক কর প্রস্তাবনা’ শীর্ষক প্রাক-বাজেট সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা বলেন।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য ডা. মো. হাবিবে মিল্লাত। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মানস’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ডা. অরূপ রতন চৌধুরী, সিটিএফকে-বাংলাদেশের লিড পলিসি অ্যাডভাইজার মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের সাধারণ সম্পাদক (ইআরএফ) এস এম রাশেদুল ইসলাম। ঢাকা আহছানিয়া মিশনের স্বাস্থ্য ও ওয়াশ সেক্টরের পরিচালক ইকবাল মাসুদের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে তামাকবিরোধী সংগঠনের প্রতিনিরা উপস্থিত ছিলেন।

 

ঢাকা আহছানিয়া মিশনের তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের প্রোগ্রাম অফিসার শারমিন আক্তার রিনির সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন উন্নয়ন সমন্বয়ের পরিচালক (গবেষণা) আবদুল্লাহ নাদভী।

 

মূল প্রবন্ধে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী ২০১৬ সালে ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত দেশ গঠনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলেন। এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য ‘বর্তমান শুল্ক কাঠামো সহজ’ করা এবং এ অঞ্চলের সর্বোত্তম ব্যবস্থা থেকে শিক্ষা নিয়ে সরকারের শুল্ক আয় বৃদ্ধি করার নির্দেশনা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী।

 

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাক ব্যবহার নিরুৎসাহিত করার জন্য কর বৃদ্ধির মাধ্যমে তামাকপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি আন্তর্জাতিকভাবে অনুসৃত একটি পদ্ধতি। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত ‘২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ’ অর্জনে সহায়ক ভূমিকা রাখার জন্য আসন্ন ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে তামাকপণ্যের কর ও মূল্য বৃদ্ধি করা জরুরি।

বক্তারা বলেন, কার্যকরভাবে করারোপের অভাবে বাংলাদেশে তামাকপণ্য অত্যন্ত সস্তা এবং সহজলভ্য হয়ে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সিগারেটের ব্যবহার প্রায় একইরকম রয়েছে। উপরন্তু বর্তমান তামাক কর কাঠামো অত্যন্ত জটিল, যা তামাকের ব্যবহার নিরুৎসাহিত করার পথে একটি বড় বাধা। আর এজন্য এই কর কাঠামোকে সহজ করতে হবে। এটা করে যথাযথ পদ্ধতিতে কর বৃদ্ধি করলে তামাকের ব্যবহার কমাতে তা কার্যকরী ভূমিকা রাখবে।

সংবাদ সম্মেলনে সংসদ সদস্য ডা. মো. হাবিবে মিল্লাত বলেন, জনস্বার্থে তামাক আইন সংশোধন ও ই-সিগারেট বন্ধে গত বছর ১৫৩ জন সংসদ সদস্য প্রধানমন্ত্রী বরাবর ডিও দিয়েছেন। স্বাস্থ্যের আইন যুগোপযোগী করার জন্য ১৫২ জন সংসদ সদস্য স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন। তামাক কর কাঠামো বাস্তবায়নের জন্য অর্থমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছিলেন ৫২ জন সংসদ সদস্য। চিঠি দেওয়ার পর কিছুটা বাস্তবায়িত হয়েছে, তবে আমরা যতটুকু আশা করেছিলাম ততটুকু হয়নি। চলতি বছরও ৮৬ জন সংসদ সদস্য চিঠি দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী ও অর্থসচিবকে। প্রধানমন্ত্রী ২০১৬ সালে ঘোষণা দেন ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত দেশ গঠনের। গত ছয় বছরে কিছুটা হয়েছে। হাতে আছে আর ১৮ বছর। যদি সবার সহযোগিতা না পাওয়া যায় তাহলে ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত দেশ গঠন করা সম্ভব নাও হতে পারে।

 

অনুষ্ঠানে অধ্যাপক ডা. অরূপ রতন চৌধুরী বলেন, বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ৮০ লাখ মানুষ তামাকের কারণে মারা যায়। প্রতি ছয় সেকেন্ডে একজন করে মৃত্যুবরণ করছে তামাকের জন্য। তামাকের কারণে যে মৃত্যু হচ্ছে তা নিয়ে কোনো খবর প্রকাশ হচ্ছে না। কিন্তু কোনো বিমান দুর্ঘটনায় কেউ মারা গেলে আন্তর্জাতিক মিডিয়া ফলাও করে খবর প্রকাশ করতে থাকে আর আমরা তা দেখতে থাকি। পৃথিবীর একটি পণ্যের কারণে এতগুলো মানুষ মারা যাচ্ছে, এ থেকে আমাদের সচেতন ও সজাগ হতে হবে। আমাদের একটি রোডম্যাপ চাই। যে রোডম্যাপ আমাদের দেখাতে পারে ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত দেশ। পৃথিবীর অন্য কোনো দেশের রাষ্ট্রপ্রধান তামাকমুক্ত দেশের ঘোষণা করেননি, আমাদের প্রধানমন্ত্রীর তামাকমুক্ত দেশের ঘোষণা দিয়েছেন। এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রশাসনকে আরও সচেতন চাই।

 

আসন্ন বাজেটে তামাক কর প্রস্তাবনাগুলো বাস্তবায়নের সম্ভাব্য ফলাফল হিসেবে বলা হয়, সরকার যদি তামাক কর বৃদ্ধি করে তবে সিগারেট ব্যবহারকারীর অনুপাত ১৫.১ শতাংশ থেকে ১৪.০৩ শতাংশ হবে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে শতকরা হিসাবে নিম্ন স্তরের সিগারেটের দাম সর্বোচ্চ পরিমাণে বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরের হিসাব অনুসারে মোট যে সিগারেট বিক্রি হয় তার সবচেয়ে বড় অংশ (৭৫ শতাংশ) হলো নিম্নস্তরের সিগারেট।