ঢাকার উত্তরায় বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত নাট্যকার অধ্যাপক রতন সিদ্দিকীর বাসায় হামলার পেছনে স্বাধীনতাবিরোধী ও মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক অপশক্তি’র ‘হত্যার উদ্দেশ্য’ ছিল বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে।
উত্তরা পশ্চিম থানায় শুক্রবার মধ্যরাতে রতন সিদ্দিকীর স্ত্রী উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফাহমিদা হক এই অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা দুই থেকে তিনশ জনকে আসামি করা হয়েছে ।
শুক্রবার জুমার নামাজের পর উত্তরা ৫ নম্বর সেক্টরের ৬/এ সড়কে বাসায় ঢোকা নিয়ে একদল লোক হামলা করে বলে ঘটনার দিন বিকালে অধ্যাপক রতন সিদ্দিকীর পরিবার অভিযোগ করে। পুলিশ তখন বলেছিল, মোটরসাইকেল রাখাকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের মধ্যে ঝগড়া হয়েছে, পরে বিষয়টি ‘মিটমাট’ হয়ে যায়।
পরে রাতে দায়ের করা মামলায় রতন সিদ্দিকীর স্ত্রী ফাহমিদা হক শুক্রবার পৌনে দুইটার দিকের ওই ঘটনার বর্ণনা তুলে ধরেন।
তার অভিযোগ, স্বামী ও ভাইকে নিয়ে নিজেদের গাড়িতে করে উত্তরার বাসায় ঢোকার সময় গেইটে মটরসাইকেল পার্কিং করা দেখতে পান। ফলে গাড়ি নিয়ে ঢুকতে পারছিলেন না। মটরসাইকেলের মালিককে খুঁজে না পেয়ে তাদের গাড়িচালক ‘আস্তে’ করে হর্ন দেন। তখন মসজিদ থেকে বেরিয়ে আসা এক ব্যক্তি হর্ন দেওয়ার কারণ জানতে চেয়ে তাদের সঙ্গে তর্ক জুড়ে দেন।
এজাহারে অভিযোগ করা হয়, “এরপর ওই ব্যাক্তি মুসল্লীদের ক্ষেপিয়ে তুলে এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। পরে বাসায় ঢুকে গেইটে তালা লাগিয়ে দেওয়া হলে গেটের বাইরে থেকে হাত ঢুকিয়ে রতন সিদ্দিকীকে ঘুষি মারে।
মামলায় ফাহমিদা হকের অভিযোগ, “পরে তাদের ডাকাডাকিতে দুইশ থেকে তিনশ লোক জড়ো হয়ে ‘মবের’ সৃষ্টি করে। তারা গেইট ভাঙ্গার চেষ্টার পাশপাশি ইটপাটকেল ছোঁড়ে এবং নারায়ে তাকবির বলে শ্লোগান দেয়।
“এক পর্যায়ে আমাকে ‘জুতার মালা পরে মাফ চাওয়ার কথা বলে’। তা না হলে গেইট ভেঙ্গে আমাদের উপর আক্রমণ করবে বলে হুমকি দেয়।”
পরে পুলিশ ও র্যাব আসলে তারা কৌশলে সরে যায় বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
এজাহারে বলা হয়, “আমরা দৃঢ়ভাবে ধারণা করছি যে, উল্লেখিত আসামিরা স্বাধীনতাবিরোধী ও মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক অপশক্তি। সামাজিকভাবে লাঞ্চিত করাসহ ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং হত্যার উদ্দেশ্যে বেআইনিভাবে জনতাবদ্ধ হয়ে এই ঘটনা ঘটিয়েছে।“
পুলিশ কর্মকর্তা ইয়াসিন জানান, মামলাটি ১৪৩, ৩৪১, ৩২৩, ৩০৭, ৫০৬, ৫০৯ ধারায় নথিভুক্ত করা হয়েছে।
এজাহারে ফাহমিদা হক নিজের পরিচয় হিসেবে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করা ছাড়াও উদীচী শিল্পী গোষ্ঠির সদস্য, দুইবার কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাচিত সদস্য হিসাবে উল্লেখ করেছেন। একই সঙ্গে তিনি বঙ্গবন্ধু পরিষদ উত্তরা শাখার সহ সভাপতি এবং ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির উত্তরা শাখার সভাপতির দায়িত্বে আছেন বলে উল্লেখ করেছেন।