শিরোনাম
অনলাইনে কুতথ্য প্রতিরোধে সফল ভূমিকা রাখছে আইইডি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সম্মেলন নিত্যপণ্যের দাম কমানো, রেশনিং ব্যবস্থা চালুর দাবিতে গাইবান্ধায় বাম জোটের বিক্ষোভ দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে জরুরী পদক্ষেপের দাবি বাম জোটের জ্বালানি খাতে এখনই ৪০ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় সম্ভব খাওয়ার স্যালাইনের সহ-উদ্ভাবক বাংলাদেশের বন্ধু রিচার্ড ক্যাশ মৃত্যু বরণ করেছেন বিসিএস পরীক্ষা দেওয়া যাবে তিনবার  কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে পদত্যাগের আলটিমেটাম  বাংলাদেশ থেকে পাচারকৃত টাকা ফেরাতে  আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক সহযোগিতায় রাজি শোষণ-বৈষম্যবিরোধী গণতান্ত্রিক জাগরণ যাত্রার ডাক সিপিবি’র

আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস - ২০২২

ঐতিহ্যগত জ্ঞান সংরক্ষণ ও বিকাশে আদিবাসী নারীর ভূমিকা

তারিক হোসেন মিঠুল


ঐতিহ্যগত জ্ঞান সংরক্ষণ ও বিকাশে আদিবাসী নারীর ভূমিকা

১৯৯৪ সাল থেকে প্রতি বছর ৯ আগস্ট বিশ্বব্যাপী পালন করা হয় ‘আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস’। এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলায় আদিবাসী শব্দ নিয়ে বাংলাদেশে বিতর্ক রয়েছে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে উপজাতি, নৃগোষ্ঠী, ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বা হিসেবে উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু এসকল জনজাতি নিজেদের আদিবাসী হিসেবে আখ্যায়িত করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। জাতিসংঘও তাদের দাপ্তরিক কাজে আদিবাসী শব্দটি ব্যবহার করে থাকে।

বৈচিত্র্য ও বহুত্বের একটি সমাজে জনজাতির আকাঙ্খা হলো, সকল ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বা একত্রে নিজেদের আদিবাসী হিসেবে পরিচয় দেবে। কিন্তু আজ অবধি নামের এবিষয়টি সমাধান করা যায়নি। এই আত্মপরিচয়ের মধ্য দিয়ে তারা তাদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, জীবনমানের উন্নয়ন এবং চিরায়ত জ্ঞান সংরক্ষণ ও বিকশিত করবে এটাই সকলের আশা। তারা মনে করেন, কোনো মানুষের ইচ্ছার বাইরে তার উপর কোনো পরিচয় চাপিয়ে দেয়া মানে তাকে অস্বীকার করা, তাকে ছোট করে দেখা ও তার সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ করা।

আদিবাসীদের আত্মপরিচয়, অধিকার ও মর্যাদা অর্জনের জন্য ‘আদিবাসী দিবস’। এই দিনে সকল জনজাতির মানুষ পথে নামেন অধিকার আদায়ের মিছিলে। সেখানে তারা নিজেদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি সুরক্ষা এবং প্রাণপ্রকৃতি রক্ষা করে জীবন ও জীবিকা উন্নয়নের দাবি তোলেন। এসব অর্জনে রাষ্ট্র ও সমাজের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

১৯৮২ সালের আগস্ট মাসে আদিবাসীদের মানবাধিকার, অধিকার ও স্বাধীনতা সংক্রান্ত বিষয়ে জাতিসংঘের ‘আদিবাসী জনগোষ্ঠী’ বিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্বের চল্লিশটিরও বেশি দেশে জনজাতির সংখ্যা প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ কোটির বেশি। বিভিন্ন দেশে জনজাতির বিভিন্ন নামে পরিচয় পাওয়া যায়, যেমন উপজাতি, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ইত্যাদি। ‘আদিবাসী’ শব্দটি নিয়ে বিভিন্ন বিতর্ক রয়েছে। তাদের অধিকার সংরক্ষণের জন্য দুটি ধারা রয়েছে। প্রথমটি ‘আদিবাসী ও ট্রাইবেল কনভেনশন ১৯৫৭ (১০৭)’ ও দ্বিতীয়টি ‘আদিবাসী জনগোষ্ঠী ট্রাভেল কনভেনশন ১৯৮৭ (১৬৯)’।

২৩ ডিসেম্বর ১৯৯৪ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ থেকে ৪৯/২১৪ বিধিমালায় ‘আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস’ পালনের স্বীকৃতি পায় ও ১৯৯৮ সাল থেকে প্রতি বছর ৯ আগস্ট দেশে দেশে দিবসটি পালিত হয়। বর্তমানে বিশ্বের ৯০টি দেশে প্রায় ৩৭০ মিলিয়ন মানুষ তাদের নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি, জীবনমানের উন্নয়ন, অধিকার ও নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য গুরুত্বের সাথে দিবসটি পালন করেন।

সারা বিশ্বে দিবসটি ১৯৯৮ সাল থেকে পালন করা হলেও বাংলাদেশে মূলত ২০০১ সালে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম গঠন হওয়ার পর থেকে বেসরকারিভাবে পালন করা শুরু হয়। পরবর্তীকালে ২০০৪ সালে জনজাতিসমূহের সংস্কৃতি ও অধিকারের স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য বাংলাদেশে সরকারিভাবে দিবসটি প্রথম পালিত হয়।

বাংলাদেশের রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের জেলাগুলিতে সাঁওতাল, শিং (গঞ্জু), ওঁরাও, মুন্ডা, বেদিয়া, মাহাতো, রাজোয়াড়, কর্মকার, তেলী, তুরী, ভুঁইমালী, কোল, কড়া, রাজবংশী, মালপাহাড়িয়া, মাহালী ইত্যাদি জাতিগোষ্ঠি বসবাস করছে। সিলেট বিভাগে মণিপুরি, খাসিয়া, পাত্রসহ চা জনগোষ্ঠী; ময়মনসিংহ বিভাগে গারো, হাজং, হদি, বানাই, বর্মণ; কক্সবাজার-পটুয়াখালি-বরগুনায় রাখাইন, সাতক্ষীরা-খুলনায় মুন্ডারা বাস করে। অন্যদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামে (রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান) চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা, মুরং বা ম্রো, খিয়াং, লুসাই, পাংখোয়া, বম, খুমী, চাক ও সাঁওতাল জনগোষ্ঠি বাস করছেন। এসব জনজাতির প্রায় ৩০ লক্ষের বেশি মানুষ তাদের নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য রক্ষা এবং শিক্ষা, কাজ, ভূমি অধিকার, সাংবিধানিক স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য প্রতিবছরই এ দিবসটি পালন করেন।

আইপি সমাজে বয়োবৃদ্ধদের সাথে সাথে নারীরা তাদের চিরায়ত লোকজ্ঞান ধারণ করে থাকেন। সব সমাজে নারী এই লোকজ্ঞান চর্চায় পারদর্শী। আদিবাসী সমাজও তার ব্যতিক্রম নয়। তারা তাদের জীবন ও সংস্কৃতি চর্চা, শিল্পকলা, সঙ্গীত, কবিতা, গল্প, কথামালা শ্রুতির মাধ্যমে সংরক্ষণ করেন ও প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে পৌঁছে দেন। শুধু তাই নয়, এছাড়া রয়েছে প্রাণ-প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় তাদের আন্তরিক ভূমিকা। এই ধারণার মধ্যে রয়েছে শিক্ষা, স্বাস্থ্যরক্ষা, জীবন-যাপন ও প্রকৃতি জ্ঞান। তাদের এই জ্ঞান সকল সমাজের সম্পদ। তার লিখিত রূপ না থাকার কারণে অনেক কিছু হারিয়ে যায় বা যাচ্ছে। তা হারিয়ে যাওয়া মানে একটি চিন্তা, ধারণা জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা চিরতরে হারিয়ে যাওয়া। তাই তার যথাযথ সংরক্ষণ ও বিকাশে সমাজের অনেক করণীয় রয়েছে। ঐতিহ্যিক ধারাবাহিকতা রক্ষায় তা পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেয়া, তার যথাসাধ্য ডকুমেন্ট করা ও মূল সমাজে নিয়ে আসার প্রয়োজন রয়েছে।

সেই সাথে বর্তমান পরিবর্তিত নতুন বাস্তবতায়, ডিজিটাল সমাজে আইপি জনগোষ্ঠীকে জীবনমান উন্নয়নে নানামাত্রিক সক্ষমতা ও দক্ষতা অর্জন করা জরুরি। দরকার শিক্ষা, নতুন দক্ষতা ও সক্ষমতা, যাতে নাগরিক হিসেবে নিজের, পরিবারের ও সমাজের কাজ করতে পারেন এবং সাথে সাথে আত্মপরিচয়, অধিকার ও মর্যাদা রক্ষা করে জীবন যাপন সম্ভব হয়।

 

লেখক: তারিক হোসেন মিঠুল

সদস্য সচিব, জনউদ্যোগ