বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপন

আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপিদেরও ছাড়

আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপিদেরও ছাড়

ব্যাংকের মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি গ্রাহকদের ঋণও নিয়মিত করার শর্ত শিথিল করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাদের আবারও ঋণ পুনঃ তফসিলের ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদই এখন নিয়ম মেনে যেকোনো ঋণ নিয়মিত করার অনুমোদন দিতে পারবে। এ জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো অনুমতি নিতে হবে না।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন নীতিমালায় আর্থিক প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকদের যেকোনো ঋণ চারবার পর্যন্ত পুনঃ তফসিল করার সুযোগ রাখা হয়েছে। আর ঋণ পরিশোধে ছয় মাস বিরতি দেওয়া যাবে। আগে তিনবার ঋণ পুনঃ তফসিল করা যেত এবং পরিশোধে কোনো বিরতি ছিল না। বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল রোববার আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ পুনঃ তফসিল ও পুনর্গঠনসংক্রান্ত এই নীতিমালা জারি করেছে।

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনার কাজ বাংলাদেশ ব্যাংক করবে না, এই উদ্যোগের অংশ হিসেবেই নতুন নীতিমালা জারি করা হয়েছে। নতুন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার যোগ দিয়েই উদ্যোগটি নেন।

নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, প্রথমবার পুনঃ তফসিলে মোট বকেয়ার ৪ শতাংশ অথবা মেয়াদোত্তীর্ণ কিস্তির কমপক্ষে ৭ শতাংশের মধ্যে যা কম, তা জমা দিতে হবে। আগে মোট বকেয়ার ১০ শতাংশ বা মেয়াদোত্তীর্ণ কিস্তির ১৫ শতাংশের মধ্যে যা কম, তা নগদ জমা দিতে হতো। ঋণের নতুন মেয়াদ হবে ছয় বছর।

দ্বিতীয়বার পুনঃ তফসিলে মোট বকেয়ার ৫ শতাংশ অথবা মেয়াদোত্তীর্ণ কিস্তির কমপক্ষে ৮ শতাংশের মধ্যে যা কম, তা পরিশোধ করতে হবে। আগে মোট বকেয়ার ২০ শতাংশ বা মেয়াদোত্তীর্ণ কিস্তির ৩০ শতাংশের মধ্যে যেটি কম, সে অনুযায়ী পরিশোধের সুযোগ ছিল। এ ক্ষেত্রে ঋণের মেয়াদ পাঁচ বছর।

তৃতীয়বার পুনঃ তফসিলে মোট বকেয়ার ৬ শতাংশ অথবা মেয়াদোত্তীর্ণ কিস্তির অন্তত ৯ শতাংশের মধ্যে যা কম, তা জমা দিতে হবে। আগে মোট বকেয়ার ৩০ শতাংশ বা মেয়াদোত্তীর্ণ কিস্তির ৫০ শতাংশের মধ্যে যা কম, তা জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা ছিল। এবারে ঋণের মেয়াদ করা হয় পাঁচ বছর।

তবে নীতিমালায় বলা হয়েছে, নগদ আদায় ছাড়া ঋণ পুনঃ তফসিল বা পুনর্গঠন করা যাবে না। গ্রাহকের অস্তিত্ব, ঋণের যথাযথ ব্যবহার ও জামানত যাচাই করতে হবে। পুনঃ তফসিল করতে তহবিল খরচ অবশ্যই আদায় করতে হবে, এরপর সুদ মওকুফ করা যাবে। কিন্তু জালিয়াতি হয়েছে, এমন কোনো ঋণ পুনঃ তফসিল করা যাবে না।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, নীতিমালা মেনে ঋণ পুনঃ তফসিল করতে হবে। পরিদর্শনের সময় নীতিমালা লঙ্ঘন করে ঋণ পুনঃ তফসিলের কোনো প্রমাণ পাওয়া গেলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শকেরাই সংশ্লিষ্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ পুনঃ তফসিল করার সুবিধা বাতিল করতে পারবেন।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে দেশে খেলাপি ঋণ বাড়ছে। অনেক গ্রাহককে খুঁজেও পাওয়া যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঋণ পুনঃ তফসিল করার সুবিধা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত জুন শেষে দেশে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় ঋণের স্থিতি ছিল ৬৯ হাজার ৩৩২ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১৫ হাজার ৯৩৬ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ২২ দশমিক ৯৯ শতাংশ।

বর্তমানে দেশে আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৩৫টি। এর মধ্যে ২টি সরকারি, ১৯টি বেসরকারি খাতের ব্যবসায়ীদের ও ১৩টি দেশি বিদেশি যৌথ বিনিয়োগের। অন্যটি একটি সরকারি ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান।