সাংসদ শিবলী সাদিক এবং তার চাচা দেলোয়ার হোসেনের কবল থেকে সাঁওতালদের জমি, বসতবাড়ি, জীবন ও সম্মান রক্ষার দাবিতে আজ ৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন ও পরবর্তীতে প্রেস ক্লাবের সামনে এক সংহতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলন ও সংহতি সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন উকিল হেমব্রম। বক্তব্য রাখেন সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাসদ এর সহকারী সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন, জাতীয় শ্রমিক জোটের সভাপতি ও স্কপ নেতা সাইফুজ্জান বাদশা, আদিবাসী জাতীয় পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটি সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট এর সভাপতি মুক্তা বাড়ৈ, উদীচীর সাংগঠনিক সম্পাদক আরিফ নুর, খাসিয়া মন্ত্রী রানা সুরং, আদিবাসী ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তরুণ মুন্ডা। সমাবেশ পরিচালনা করেন বিশুরাম মুর্মু।
সংবাদ সম্মেলন ও সংহতি সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলায় স্বপ্নপুরি নামে একটি বিশাল এবং আধুনিক বিনোদনকেন্দ্র গড়ে উঠেছে। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ সেখানে আনন্দ করতে যায়। সেখানে পার্ক আছে, বিলাসবহুল হোটেল মোটেল আছে, লেক আছে, নানা ধরনের রাইড আছে। বাইরে থেকে দেখতে অত্যন্ত সুন্দর এবং আকর্ষণীয় এই বিনোদনকেন্দ্র। কিন্তু এই স্বপ্নপুরি যে শত শত সাঁওতালের জীবনের স্বপ্ন ও আশা আকাংখ্যা কেড়ে নিয়েছে তা অনেকেরই অজানা। প্রায় ৩০০ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত এই বিনোদনকেন্দ্রে সাঁওতাল ও মাহালি সম্প্রদায়ের ৩টি কবরস্থান আছে। একটি কবরস্থানের উপর মেয়র শিবলীর বিলাসবহুল বাড়ি নির্মিত হয়েছে যা প্রতিনিয়ত সাঁওতাল সম্প্রদায়কে কষ্টের অনুভুতিতে আচ্ছন্ন করে রাখে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, পুরো উত্তরাঞ্চল জুড়ে সাঁওতালদের অস্তিত্ব আজ সংকটাপন্ন। পদে পদে নির্যাতন করা হচ্ছে। জাল-জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে পূর্বপুরুষের জমি-জমা কেড়ে নেয়া হচ্ছে। এলাকা থেকে নির্বাচিত সাংসদ জনাব শিবলী সাদিক এবং তার আপন চাচা দেলোয়ার হোসেন একজন কুখ্যাত ভূমিদস্যু ও সন্ত্রাসীদের প্রশ্রয়দাতা। তারা দুইজন মিলে বিশাল এক বাহিনী লালনপালন করে। এদেরকে দিয়ে এহেন কোন অপরাধ কর্ম নাই যা তারা করে না। সাঁওতালদের জমিই শুধু তারা দখল করে নাই, বন বিভাগের বিপুল পরিমাণ জমিও তারা আত্মসাৎ করেছে। এই অবস্থায় ভয় এবং আতংক সত্ত্বেও দেলোয়ার হোসেন এর অধীনস্ত বাহিনীর কয়েকজনের নাম আমরা আজকের সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করছি। তারা হলেন, ১। আমিনুল হক, পিতা- তোজাম্মেল হক, ২। মোঃ মনোয়ার হোসেন, পিতা- মৃত আজগার আলী, ৩। মোঃ আনার আলী, পিতা- মৃত আজগার আলী, ৪। মোঃ আলনগীর হোসেন, ৫। মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, উভয় পিতা- মোঃ আনার আলী, ৬। এমপি-র পিএস মোঃ শামসুজ্জামান, ৭। এমপি-র ম্যানেজার মুক্তার আলী, ৮। মোঃ সেলিম, ৯। মোঃ মামুন, ১০। দিপক ( এমপির পারমানেন্ট আমিন), ১১। সিরাজুক ইসলাম, ১২। তবজুল ইসলাম, উভয়ের পিতা- লুৎফর রহমান, ১৩। আনোয়ারুল আজিম( বিএনপি দলীয় ইউনিয়ন সভাপতি এবং বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান), ১৪। মোঃ বুলবুল পিতা- অজ্ঞাত, ১৫। আব্দুর রহিম, পিতা- অজ্ঞাত, ১৬। করবান আলী, পিতা- রাজ্জাক আলী, ১৭। মোঃ আলমাস, পিতা- মৃত আফাজ, ১৮। মোঃ মোজাহার, পিতা- মৃত ঝুরু মোহাম্মদ সহ অজ্ঞাতনামা আরও ৩০/৩৫ জন পোষ্য গুণ্ডাবাহিনী। এদের দ্বারা দেলোয়ার হোসেন ৭৭.৬১ একর জমি জবর দখল করে রেখেছে এবং আরও অনেক আদিবাসীর সম্পত্তি গ্রাস করেছে। এরা প্রতিনিয়ত খুন জখম করার হুমকী দিচ্ছে এবং ভারতে চলে যাওয়ার জন্য নানাভাবে চাপ দিচ্ছে।
সমাবেশে আদিবাসীরা বলেন, এই পরিস্থিতিতে আমাদের জমি ও জীবন রক্ষার দাবিতে দিনাজপুর থেকে ১। গণেশ হেমরম, পিতা- মৃত জেঠা হেমরম, ২। রবেন মার্ডি, পিতা- মৃত সোনা মার্ডি, ৩। খুকুমনি হেমরম, স্বামী- মৃত কবিরাজ হাঁসদা, ৪। অখিল হেমরম, পিতা- মৃত কেনা হেমরম, ৫। লুইস হাসদা, পিতা- বার্নাবাস হাসদা, ৬। সলেমন মার্ডি, পিতা- মৃত দুখন মার্ডি, সকলের সাং- খালিপপুর, থানা- নবাবগঞ্জ, জেলা- দিনাজপুর জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে আবেদন জানাতে এসেছি।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, অসহায় সাঁওতালদের বেদনার কথা আমরা সরকারের কাছে পৌঁছে দিতে চাই এবং সাঁওতালদের জীবন ও জমি-জমার সুরক্ষা এবং অধিকার রক্ষার স্বার্থে বাংলাদেশ সরকার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন আশা করি।