শিরোনাম
অনলাইনে কুতথ্য প্রতিরোধে সফল ভূমিকা রাখছে আইইডি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সম্মেলন নিত্যপণ্যের দাম কমানো, রেশনিং ব্যবস্থা চালুর দাবিতে গাইবান্ধায় বাম জোটের বিক্ষোভ দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে জরুরী পদক্ষেপের দাবি বাম জোটের জ্বালানি খাতে এখনই ৪০ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় সম্ভব খাওয়ার স্যালাইনের সহ-উদ্ভাবক বাংলাদেশের বন্ধু রিচার্ড ক্যাশ মৃত্যু বরণ করেছেন বিসিএস পরীক্ষা দেওয়া যাবে তিনবার  কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে পদত্যাগের আলটিমেটাম  বাংলাদেশ থেকে পাচারকৃত টাকা ফেরাতে  আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক সহযোগিতায় রাজি শোষণ-বৈষম্যবিরোধী গণতান্ত্রিক জাগরণ যাত্রার ডাক সিপিবি’র

ফ্রেডরিক এঙ্গেলস এর কমিউনিজমের নীতিমালা – প্রাসঙ্গিক আলোচনা

শরিফ উল আনোয়ার সজ্জন


ফ্রেডরিক এঙ্গেলস এর কমিউনিজমের নীতিমালা – প্রাসঙ্গিক আলোচনা

১৮৪৭ সালে কমিউনিস্ট লীগের জন্য প্রশ্নোত্তর আকারে ফ্রেডরিক এঙ্গেলস দুটি খসড়া পরিকল্পনা লিখেছিলেন। জুন মাসে তিনি লিখেছিলেন ‘কমিউনিস্ট বিশ্বাসের স্বীকারোক্তি’ (Draft of a Communist Confession of Faith) এবং অক্টোবরে লিখেছিলেন ‘কমিউনিজমের নীতিমালা’ (The Principles of Communism)।

‘কমিউনিজমের নীতিমালা’ (The Principles of Communism) প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯১৪ সালে। আফজালুল বাসার এর অনুবাদটি ১৯৮৬ সালের অক্টোবর মাসে ‘নন্দন প্রকাশন’ থেকে প্রথম প্রকাশিত হয়। ১৯৭৭ সালে পিকিং থেকে Foreign Languages Press কর্তক প্রকাশিত The Principles of Communism এর ইংরেজী পাঠ অবলম্বনে অনুবাদটি করা হয়েছে। কমিউনিস্ট আন্দোলনের তত্ত্বগত জায়গায় এই বইটি গুরুত্বপূর্ণ হলেও বর্তমান সময়ে এদেশে এই বইটি নিয়ে আলোচনা নেই বললেই চলে।

 

১৮৪৭ সালের জুন মাসে লন্ডনে ‘লীগ অব দা জাস্ট’ এর প্রথম কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়। এই কংগ্রেসেই ‘লীগ অব দা জাস্ট’ এর নামকরণ করা হয় ‘কমিউনিস্ট লীগ’। কমিউনিস্ট লীগের বিভিন্ন শাখায় আলোচনার জন্য ‘কমিউনিস্ট বিশ্বাসের স্বীকারোক্তি’ (Draft of a Communist Confession of Faith) খসড়া দলিলটি প্রচার করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পরবর্তীতে ১৮৪৭ সালের অক্টোবর মাসে প্রথম খসড়াকে ভিত্তি করে ‘কমিউনিজমের নীতিমালা’ (The Principles of Communism) লেখা হয়। কমিউনিস্ট লীগের ‘প্যারিস চক্র’ এর পরিচালমণ্ডলীর পরামর্শ অনুযায়ী এঙ্গেলস এটি রচনা করেছিলেন।

১৮৪৭ সালের ২৩-২৪ নভেম্বরে কার্ল মার্কস এর নিকট লিখিত এক চিঠিতে এঙ্গেলস মত প্রকাশ করেন যে, ‘‘পুরাতন প্রশ্নোত্তরটি ত্যাগ করা এবং ইতিহাসের আকারে একটি খসড়া পরিকল্পনা গ্রহণ করাই ভাল’’। একই বছর লন্ডনে অনুষ্ঠিত কমিউনিস্ট লীগের দ্বিতীয় কংগ্রেসে (২৭ নভেম্বর থেকে ৮ ডিসেম্বর) মার্কস এবং এঙ্গেলস কমিউনিজমের মৌলিক বৈজ্ঞানিক নীতিসমূহ সমর্থন করেন এবং তাঁদের দুজনকে ‘কমিউনিস্ট পার্টির ইশতেহার’ আকারে একটি পরিকল্পনার খসড়া রচনা করার দায়িত্ব প্রদান করা হয়। এই ইশতেহারটি লিখতে গিয়ে কার্ল মার্কস এবং ফ্রেডরিক এঙ্গেলস ‘কমিউনিজমের নীতিমালা’ (The Principles of Communism) তে বর্ণিত প্রস্তাবনাসমূহ ব্যবহার করেছিলেন। ১৮৪৮ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ‘কমিউনিস্ট পার্টির ইশতেহার’ প্রকাশিত হয়।

১৮ শতকের মধ্যভাগে সংঘটিত শিল্প বিপ্লবের মধ্য দিয়ে পূর্বের সকল উৎপাদন পদ্ধতি বদলে যায়। বাষ্পীয় ইঞ্জিন, বিভিন্ন রকমের সুতাকল, বিদ্যুতচালিত তাঁত এবং উৎপাদনের আরও অনেক যান্ত্রিক কৌশল উদ্ভাবনের ফলে শুরু হয় নতুন ধরণের উৎপাদন ব্যবস্থা। এসব উৎপাদন যন্ত্র তৈরীর খরচ ছিল অনেক বেশী, ফলে শুধুমাত্র পুঁজিপতিরাই এগুলো কিনতে পারতো। চরকা ও হস্তচালিত তাঁতে উৎপাদিত পণ্যের চাইতে আধুনিক যন্ত্রের সাহায্যে সস্তায় ভালো এবং অল্প সময়ে অধিক পণ্য উৎপাদন করা সম্ভব ছিল। এই উৎপাদন পদ্ধতি পুরাতন ক্ষুদ্র হস্তশিল্প-শ্রমিকদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। শ্রমিকদের অবস্থা সম্পূর্ণ বদলে গিয়ে তৈরী হয়েছিল দুটি নতুন শ্রেণি, বুর্জোয়া এবং প্রলেতারিয়েত।

সামন্ত সমাজের ধ্বংসাবশেষ থেকে আধুনিক যে বুর্জোয়া সমাজ জন্ম নিল, তাতে শ্রেণি-বিরোধ দূর হলো না। এই সমাজ তৈরী করলো নতুন শ্রেণি, অত্যাচারের নতুন অবস্থা, সংগ্রামের পুরনো ধরনের বদলে নতুন ধরন। নতুন এই সংগ্রামে প্রলেতারিয়েতকে শ্রেণি হিসাবে গঠন করা, বুর্জোয়া আধিপত্যের উচ্ছেদ, প্রলেতারিয়েত কর্তৃক রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল ইত্যাদি প্রশ্নগুলো সামনে চলে আসে। নতুন এই সমাজ ব্যবস্থা কেমন হবে, কিভাবে বুর্জোয়া আধিপত্যের উচ্ছেদ হবে, প্রলেতারিয়েত বিপ্লবের কার্যক্রম কি হবে, কমিউনিস্টদের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন হবে, অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে কমিউনিস্টদের সম্পর্ক কেমন হবে, কমিউনিস্টদের মতামত, লক্ষ্য ইত্যাদি বিষয়ে সুস্পষ্ট বক্তব্য হাজির করার প্রয়োজনীয়তা সামনে এসে হাজির হয়।

এসব প্রশ্নের প্রাথমিক উত্তর লেখা হয় ‘কমিউনিজমের নীতিমালা’র (The Principles of Communism) খসড়াতে। কমিউনিজম কি? প্রলেতারিয়েত কি? প্রলেতারিয়েতের উদ্ভব কিভাবে হল? শিল্প-বিপ্লবের এবং বুর্জোয়া ও সর্বহারা শ্রেণীতে সমাজের বিভাজনে অব্যবহিত ফল কি হয়েছিল? এই নতুন সমাজ-ব্যবস্থা কি রকম হওয়া উচিৎ? এই বিপ্লবের কার্যক্রম কি হবে? কমিউনিস্ট সমাজব্যবস্থা পরিবারের উপর কি প্রভাব ফেলবে? আমাদের সময়ের অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সাথে কমিউনিস্টদের সম্পর্ক কি? এরকম ২৫ টি প্রশ্ন এবং তার উত্তর নিয়ে লিখিত হয়েছিল খসড়াটি। খসড়াটিতে ২২ টি প্রশ্নের উত্তর লেখা ছিল।

খসড়ার ৯ নং প্রশ্নের (কোন্ কোন্ দিক দিয়ে প্রলেতারিয়ান হস্তশিল্প শ্রমিক থেকে আলাদা?) উত্তরে এঙ্গেলস অর্ধ পৃষ্ঠা খালি রেখেছিলেন। ‘কমিউনিস্ট বিশ্বাসের স্বীকারোক্তি’ (Draft of a Communist Confession of Faith) এ একই প্রশ্নের উত্তর লেখা রয়েছে ১২ নং প্রশ্নের উত্তর।        

২২ ও ২৩ নং প্রশ্নের (বর্তমান জাতিসমূহের প্রতি কমিউনিস্ট সমাজ কি দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করবে? এবং বর্তমান ধর্মসমূহের প্রতি এর দৃষ্টিভঙ্গি কি হবে) উত্তরে ‘অপরিবর্তিত’ লিখেছিলেন। এঙ্গেলস এর ‘অপরিবর্তিত’ উত্তরের স্থলে ‘কমিউনিস্ট বিশ্বাসের স্বীকারোক্তি’ (Draft of a Communist Confession of Faith) এর খসড়ার ২১ ও ২২ নং প্রশ্নের উত্তরগুলো নির্দেশ করে।

 

কমিউনিস্ট আন্দোলনের কর্মীদের জন্য এঙ্গেলস এর এই খসড়াটি বিশেষভাবে পাঠ্য হওয়া জরুরী। কমিউনিস্ট দৃষ্টিভঙ্গি এবং কমিউনিস্টদের কার্যক্রমের প্রাথমিক ধারণা পাওয়া যায় এই খসড়াতে। আর ‘কমিউনিস্ট পার্টির ইশতেহার’ বোঝার জন্যও সহায়ক পাঠ হতে পারে এই খসড়াটি।

 

মূল বই: The Principles of Communism - Friedrich Engels

অনুবাদ: কমিউনিজমের নীতিমালা – আফজালুল বাসার

 

লেখক: শরিফ উল আনোয়ার সজ্জন