কমরেড শামছুজ্জামান সেলিমের শোকসভা

কমরেড শামছুজ্জামান সেলিমের শোকসভা

২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, শুক্রবার বিকেল ৪টায় রাজধানীর বিএমএ মিলনায়তনে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র প্রয়াত প্রেসিডিয়াম সদস্য, বীর মুক্তিযোদ্ধা কমরেড শামছুজ্জামান সেলিমের শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়। সিপিবি’র সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলমের সভাপতিত্বে শোকসভায় বক্তব্য রাখেন পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, সাবেক সভাপতি ও বর্তমান সদস্য মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, প্রেসিডিয়াম সদস্য লক্ষ্মী চক্রবর্তী, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অধ্যাপক এম এম আকাশ, ডা. দিবালোক সিংহ, সাজ্জাদ জহির চন্দন, বাংলাদেশ কৃষক সমিতির সভাপতি অ্যাড. এসএমএ সবুর, বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ডা. ফজলুর রহমান, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সহ-সভাপতি এবং সিপিবি’র কন্ট্রোল কমিশনের চেয়ারম্যান, টিইউসি নেতা মাহাবুবুল আলম, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি বদিউর রহমান, বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাড. সোহেল আহমেদ, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসরের প্রেসিডিয়াম সদস্য রথীন চক্রবর্তী, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়নের প্রেসিডিয়াম সদস্য ত্রিদিব সাহা।

শোকসভা পরিচালনা করেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মানবেন্দ্র দেব এবং ক্ষেতমজুর সমিতির কেন্দ্রীয় নেতা মোতালেব হোসেন।

সিপিবির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, আপাদমস্তক একজন কমিউনিস্ট শামছুজ্জামান সেলিম পার্টি বিস্তার এবং শ্রেণি সংগ্রামকে বেগবান করতে আমৃত্যু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি আজীবন সাম্যের জন্য লড়াই অব্যাহত রেখে গেছেন। যতদিন শোষিত মানুষের সংগ্রাম থাকবে, জনগণ শামছুজ্জামান সেলিমকে মনে রাখবে।

রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক, শোষণমুক্ত দেশ গড়েই তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে হবে। কমরেড শামছুজ্জামানের সেলিমের পথ ধরে আমাদের এগুতে হবে। বীর মুক্তিযোদ্ধা সেলিম বাংলাদেশকে সমাজতান্ত্রিক দেশ হিসেবে গড়তে চেয়েছিলেন। তাঁর অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করতে নতুন প্রজন্মকে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি চলমান গণতন্ত্র ও ব্যবস্থা বদলের সংগ্রাম অগ্রসর করতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।

মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, কমরেড শামছুজ্জামান সেলিম একজন নিখাদ কমিউনিস্ট ছিলেন এবং আমৃত্যু তা ধারণ করে গেছেন।

শোকসভায় বক্তারা বলেন, কমরেড সেলিম ছিলেন একজন আমৃত্যু বিপ্লবী। তার মৃত্যুতে আমাদের পার্টি এবং এ দেশের মেহনতি মানুষের এক অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। তিনি ছিলেন মেহনতি মানুষের অকৃত্রিম বন্ধু। তিনি ছিলেন আজন্ম দৃঢ়চেতা একজন মানুষ। শ্রমিক এবং ক্ষেতমজুর আন্দোলনে তার অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

তারা আরও বলেন, পুজিবাদ এবং পশ্চিমা ষড়যন্ত্রের কারণে ৯০’র দশকে সমাজতান্ত্রিক শিবির আক্রান্ত হয়। তখন অনেকে সমাজতন্ত্রের প্রতি আস্থা হারালেও, কমরেড শামছুজ্জামান সেলিম ছিলেন অবিচল। এবং বাংলাদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনের ধারাকে টিকিয়ে রাখার জন্য দৃঢ়ভাবে লড়াই করেছেন এবং আমৃত্যু সেই লড়াই জারি রেখেছেন।

বক্তারা আরও বলেন, কমরেড শামছুজ্জামান মনে করতেন কমিউনিস্ট পার্টিকে গ্রামে সর্বহারাদের সংগঠিত করার বিকল্প নেই। তিনি ছিলেন একজন অকপট মানুষ। শক্তিশালী সংগঠন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন একজন অবিচল।

কমরেড শামছুজ্জামান সেলিমের শোকসভার শুরুতে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) কেন্দ্রীয় কমিটিসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ তাঁর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সংগীত পরিবেশন করে। এরপর কমরেড শামছুজ্জামান সেলিমের সংক্ষিপ্ত জীবনী তুলে ধরেন সিপিবির কেন্দ্রীয় সদস্য মানবেন্দ্র দেব।

উল্লেখ্য, গত ১৭ আগস্ট ২০২৩, বৃহস্পতিবার, রাত ১০.৪৬ মিনিটে আজীবন বিপ্লবী প্রবীণ কমিউনিস্ট নেতা বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা কমরেড শামছুজ্জামান সেলিম ঢাকার হেলথ এন্ড হোপ হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতা ও হৃদরোগে ভুগছিলেন।

কমরেড শামছুজ্জামান সেলিমের জন্ম ১৯৫০ সালের ২৭ অক্টোবর, পাবনার সাধুপাড়ায়। পরবর্তীতে তিনি ঈশ্বরদীতে স্থায়ী হন। সাঁড়া মাড়োয়ারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং ইশ্বরদী কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশোনা সম্পন্ন করেন। পরে বুলগেরিয়ার সোফিয়ায় সমাজবিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা একাডেমি থেকে সমাজবিজ্ঞান ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেন।

১৯৬৮ সালে কিশোর বয়সেই গোপন কমিউনিস্ট পার্টিতে যুক্ত হন। পার্টির নির্দেশে তিনি ১৯৬৯ সালের আগস্টে পাকশী পেপার মিলে শ্রমিকের চাকরি নেন এবং ১৯৭৩ সালে সিবিএ’র সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়নের বিশেষ গেরিলা বাহিনীর প্রশিক্ষণ নিয়ে যুদ্ধে অংশ নেন। পার্টির নির্দেশে ১৯৭৪ সালে পার্টির সার্বক্ষণিক কর্মী হন। তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের পর ১৯৭৬ সালে গ্রেফতার হন। দুই বছর পর মুক্তি পান। ৮০’র দশকের শেষে সিপিবি পাবনা জেলার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। বিলোপবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে ১৯৯৩ সালে সিপিবি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। কমরেড শামছুজ্জামান সেলিম বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র প্রেসিডিয়াম সদস্য, কেন্দ্রীয় সংগঠন বিভাগের প্রধান ও বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর সমিতির নির্বাহী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

তিনি পার্টির মুখপত্র সাপ্তাহিক একতা ও বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে নিয়মিত লিখতেন। ‘উৎসের সন্ধানে’ ও পার্টি সংগঠন বিষয়ে তার একাধিক পুস্তক প্রকাশিত হয়েছে।