দাবি মানা না হলে বৃহত্তর কর্মসূচি

কৃষক সমিতির বরেন্দ্র কৃষক সমাবেশ

৯ মার্চ রংপুরে ‘তিস্তা কৃষক সমাবেশ’


কৃষক সমিতির বরেন্দ্র কৃষক সমাবেশ

বাংলাদেশ কৃষক সমিতির উদ্যোগে গত ২৯ ফেব্রুয়ারি রাজশাহীর বাটার মোড়ে উত্তর জনপদের বরেন্দ্র অঞ্চলের হাজার হাজার কৃষকের অংশগ্রহণে সমাবেশ ও সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল রাজশাহী শহরের বিভিন্ন রাস্তা প্রদক্ষিণ করে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে এবং বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষ বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করে।

সমাবেশে নেতৃবৃন্দ আগামী ৯ মার্চ রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের জেলাসমূহের উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও স্থানীয় বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষ কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

বাংলাদেশ কৃষক সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এ্যাড. এস এম এ সবুরের সভাপতিত্বে ও সাংগঠনিক সম্পাদক আবিদ হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন, সহসভাপতি নিমাই গাঙ্গুলী, সহসাধারণ সম্পাদক  সুকান্ত শফি চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য রাগীব আহসান মুন্না, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এ্যাড. মহসিন রেজা, হাসেন আলী, রেবেকা সরেন রাজশাহী জেলা কমিটির সভাপতি বিজন সরকার, জয়পুরহাট জেলা কমিটির আহবায়ক ইউনুসার রহমান, নাটোর জেলা কমিটির আহবায়ক আলফুজ্জামান, সিরাজগঞ্জ জেলা কমিটির যুগ্ম আহবায়ক আব্দুল আজিজ মল্লিক, সিরাজগঞ্জ জেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মোস্তফা নুরুল আমিন, কৃষক নেতা জহর লাল রায়। সংহতি বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি রাজশাহী জেলা কমিটির সভাপতি কমরেড হুমায়ুন রেজা জেনু, বাংলাদেশ আদিবাসী ইউনিয়নের সভাপতি রেবেকা সরেন।

সমাবেশের পূর্বে অজিত কুমার মন্ডলের নেতৃত্বে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী রাজশাহী জেলার শিল্পীবৃন্দ গণসংগীত পরিবেশন করেন।

সমাবেশে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, জয়পুরহাট, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, পাবনা ও নাটোর জেলা থেকে হাজার হাজার কৃষক অংশগ্রহণ করে।

সমাবেশে নেতৃবৃন্দ  বলেন, “বরেন্দ্র অঞ্চলে বিভিন্ন ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে ঠিকই, কিন্ত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর শ্রমে আর ঘামে ফসল উৎপাদন আর জীবন-জীবিকা এক চরম সংকট আর অনিশ্চয়তার পথে। একদিকে শুষ্ক রুক্ষ প্রকৃতি আরেক দিকে মানুষের সৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ভূ-উপরস্থ পানির প্রধান উৎস নদী, খাল, বিল, পুকুর, জলাশয় শুকিয়ে যাচ্ছে। ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে। কৃষক জমিতে সেচের পানি দিতে হিমশিম খাচ্ছেন।”

উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬টি জেলার ১২৫টি উপজেলাকে নিয়ে বরেন্দ্র অঞ্চল। বরেন্দ্র অঞ্চলে ভূ-প্রকৃতির কারণে বৃষ্টির পানি মাটির গভীরে প্রবেশের তুলনায় উঁচু থেকে নিচের দিকে গড়িয়ে যায়। ফলে শুষ্ক মৌসুমে মাটির আর্দ্রতা মারাত্মকভাবে কমে যায়। বাংলাদেশে উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলজুড়ে উঁচু বরেন্দ্র ভূমি রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ জেলার আবহাওয়া দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় রুক্ষ এবং চরম ভাবাপন্ন। এই অঞ্চলে বৃষ্টিপাতও কম হয়। মৌসুমভিত্তিক হলেও বৃষ্টির পানি ধরে রাখতে না পারায় এবং সুষম বণ্টন না হওয়ায় আমন ধান রোপন যায় না। ফলে অধিকাংশ সময়ে আমন চাষ দেরি হওয়ায় পরবর্তী ফসল চাষের সুযোগ বিঘিœত হয়। এ সমস্যার কারণে বরেন্দ্র অঞ্চলে আমন ধান কাটার পরে রবি মৌসুমে প্রায় ৮০ হাজার হেক্টর জমি অনাবাদি থেকে যায়। অসম বৃষ্টিপাতের কারণে আমন ধানের বৃদ্ধির বিভিন্ন পর্যায় খরা আক্রান্ত হয়- যা ফলনে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পরে।

৭০-এর দশকে পদ্মার পানি দিয়ে সেচ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি প্রকল্প হাতে নেয়। ভূ-উপরস্থ পানি দিয়ে বরেন্দ্র অঞ্চলে সেচ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে জাপানের জাইকা ১৯৮৮ প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রণয়ন করে। এই প্রকল্পে পদ্মা থেকে পাম্পের সাহায্যে ৮০ ঘনমিটার/সেকেন্ড পদ্মার পানি উত্তোলন করে ৫২.৫০ কি.মি. শাখা খালের মাধ্যমে আবাসযোগ্য ১, ৩৩, ৭০০ হেক্টর জমির মধ্যে ৭৪, ৮০০ হেক্টর জমিতে সেচ ব্যবস্থার প্রস্তাবনা করে। রাজশাহীর জেলার পবা, গোদাগাড়ী, তানোর; চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর, নাচোল, নিয়ামতপুর এবং নওগাঁর পোরশা, মান্দাসহ মোট ৯টি উপজেলা এই প্রস্তাবনার অন্তর্ভুক্ত। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এলাকায় শস্য নিবিড়তা ২২৮% শতাংশে উন্নীত হয়ে ২, ১১, ০০০ টন উদ্বৃত্ত ফসল উৎপন্ন হতো। গঙ্গার পানি চুক্তির ফলে সর্বনি¤œ ৩৫ হাজার কিউসেক প্রাপ্ত পানির মধ্যে কুষ্টিয়া-যশোরের জিকে প্রজেক্টে মাত্র ৭ হাজার কিউসেক পানি ব্যবহৃত হয়। আর কোথাও গঙ্গার পানি ব্যবহার হয় না। ফলে বাকি পানি বঙ্গোপসাগরে গড়িয়ে যায়। উত্তর রাজশাহী প্রকল্পে অবশিষ্ট ২, ৮২৫ কিউসেক পানি ব্যবহার করলে বরেন্দ্রর বৃহত্তর অঞ্চলে পানির অভাব হবে না।

‘উত্তর রাজশাহী প্রকল্প’ নামে পরিচিত এই প্রকল্পটির ফাইল পানি উন্নয়ন বোর্ড, পরিকল্পনা কমিশন, অর্থ মন্ত্রণালয়সহ নানা জায়গায় চালাচালি হয়। বারবার প্রকল্পটি রিভিউ করা হয়, কিন্তু কী এক অন্ধকারের হাতছানিতে প্রকল্পটি আর আলোর মুখ দেখতে পায়নি।

বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গভীর নলকূপ স্থাপন করে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করে সেচ ব্যবস্থা গড়ে তোলে। বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষের প্রকল্প এলাকায় মাত্র ২৬% জমিতে সেচ দিতে পারছে। বিএমডিএসহ ব্যক্তি পর্যায়ে বিপুল সংখ্যক গভীর নলকূপের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন এবং সেইসাথে প্রয়োজনীয় পানি পুনর্ভরণ না করার ফলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে পানি শূন্য হয়ে যাচ্ছে। ফলে বরেন্দ্র অঞ্চলে মরুকরণ প্রক্রিয়া বৃদ্ধি পাচ্ছে। জমিতে রাসায়নিক দূষণ, ব্যাপক আয়রণ-আর্সেনিক বৃদ্ধি পাচ্ছে। রাসায়নিক সারের ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। খাল, বিল, পুকুর, জলাশয় শুকিয়ে যাচ্ছে। টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। গাছপালার বৃদ্ধি কমছে, গাছের প্রাকৃতিক রং লালচে হচ্ছে। ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে প্রাণবৈচিত্র্য।

নেতৃবৃন্দ বলেন, ''বরেন্দ্র সেচ নীতিমালায় সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে- ‘বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষ কর্তৃক মনোনীত অপারেটর, গভীর নলকূপ চালনার দায়িত্ব পালন করবে। উপকারভোগী কৃষকদের মধ্যে থেকে বা স্থানীয় কোনো ব্যক্তিকে অপারেটর হিসেবে মনোনয়নের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেয়া হবে।’

‘উপকারভোগী কৃষকদের মধ্য থেকে অপারেটর হিসেবে মনোনয়ন দেবার মত যোগ্যতাসম্পন্ন লোক পাওয়া না গেলে নির্বাহী পরিচালক বা তাঁর ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তার মনোনীত ব্যক্তি অপারেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবে।’

‘অপারেটর কোনো অবস্থাতেই নগদ টাকা লেনদেনের মাধ্যমে সেচ প্রদান করতে পারবেন না। নগদ টাকা লেনদেনের মাধ্যমে সেচ প্রদান করলে বা কোনো অসদুপায় অবলম্বন করলে বা সেচ কাজে বিঘœ সৃষ্টি করলে তার জামানত বাজেয়াপ্তসহ অপারেটর পদে নিয়োগ বাতিল করা হবে।’

অপারেটররা শর্তবদ্ধ থাকে যে, মনোনীত অপারেটর কোনো অবস্থাতেই কৃষকদের নিকট নির্ধারিত হারের অতিরিক্ত টাকা গ্রহণ করতে পারবে না বা নগদে সেচ প্রদান করতে পারবে না।

অপারেটর কোনো অবস্থাতেই কোন কৃষকের নিকট হতে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত কূপন গ্রহন/প্রি-পেইড কার্ড ব্যতিরেকে সেচ প্রদান করতে পারবেন না। অপারেটর ধারে বা নগদ টাকার বিনিময়েও সেচ প্রদান করতে পারবে না। অপারেটরের নগদ টাকার বিষয়টি প্রমাণ হলে তার জামানত বাজেয়াপ্তসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গৃহীত হবে।

নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, “সেচের পানির বিতরণের জন্য বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষ আইন-নীতিমালার তোয়াক্কা না করে প্রভাবশালী লোকজনকে অপারেটর নিয়োগ দিয়ে থাকে। এই অপারেটরদের বিরুদ্ধে কৃষকের অভিযোগের শেষ নেই। বরেন্দ্র অঞ্চলের পানি অপারেটরদের কব্জায়, তাদের হাতে বরেন্দ্রর প্রায় ৪ লাখ কৃষক জিম্মি। অপারেটররা প্রান্তিক কৃষকদের কাছ থেকে পানি বাণিজ্য করছে। বিদ্যুৎ খরচ বাবদ কৃষকের কার্ড থেকে প্রতি ঘণ্টায় পানির জন্য টাকার নির্ধারণ করা থাকলেও বাস্তবে নেওয়া হয় অনেক বেশি।”

রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে সেচের পানি বেশি লাগে। গোদাগাড়ীর কৃষক হয়রানির শিকারও হচ্ছে বেশী। নিজের কার্ড ব্যবহারের সুযোগ পায় না অসংখ্য কৃষক। অপারেটরের কার্ড থেকে পানি নিতে বাধ্য করা হয়। সেচের পানির দাম ছাড়াও মৌসুম শেষে বিঘা প্রতি ৫ থেকে ১০ কেজি করে ধান অপারেটররা কৃষকের কাছ থেকে আদায় করে। কোথাও কোথাও অপারেটররা নিজেদের গভীর নলকূপের আওতাধীন পুরো জমি বাইরের ব্যবসায়ীদের কাছে ইজারা দেন। সেই ইজারাদার যে ফসল ফলান, বাদবাকি চাষিদের সেই ফসল ফলাতে বাধ্য করা হয়। অপারেটরের সিদ্ধান্ত না মানলে কৃষকের জমিতে পানি দেয়া হয় না। কৃষকেরা নিজেরা এসে কার্ড ঢুকিয়ে পানি নিতে সিরিয়াল পেতে ২/৩ দিন আসতে হয়। এই সুযোগে চুক্তি করে অপারেটররা বেশি টাকা আদায় করে।

আদিবাসী কৃষকদের প্রতি শোষণ করা হয় খুব বেশি। রাজশাহীর গোদাগাড়ীর নিমঘটু গ্রামের আদিবাসী দুই ভাই রবি মার্ডি ও অভিনাথ মার্ড বারবার ধর্না দিয়েও সময়মতো ও চাহিদামতো সেচের পানি না পেয়ে রাগে ক্ষোভে মনোকষ্টে কীটনাশক বিষ পান করে আত্মহত্যা করেন। এর কিছুদিন পর মুকুল সরেণ একই কারণে কীটনাশক বিষ পান করে মরতে মরতে বেঁচে যান।

নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, “বাংলাদেশের ধান উৎপাদনে ৭৫ ভাগ সেচের ভূগর্ভস্থ পানি থেকে দেওয়া হয়। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অস্বাভাবিকভাবে নি¤œমুখী ও পানির সংকট দেখা দেয়ায় বরেন্দ্র অঞ্চলে ২০১৪ সাল থেকে গভীর নলকূপ বসানো বন্ধ রেখেছে বিএমডিএ। কিন্তু থামানো যাচ্ছে না ব্যক্তি উদ্যোগে নলকূপ বসিয়ে পানি তোলা। বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষি-কৃষি জমি-কৃষক-পরিবেশ প্রকৃতি- জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে গভীর নলকূপের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন বন্ধ করে বিকল্প পদ্ধতিতে পানির প্রয়োজন মেটাতে হবে। গঙ্গার প্রাপ্য পানির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। উত্তর রাজশাহী প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ভূ-উপরস্থ পানি ব্যবহারের ফলে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন হ্রাস পাবে। ফলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর স্বাভাবিক হয়ে আসবে। মরুকরণ রোধ হবে। জমিতে রাসায়নিক দূষণ আয়রণ, আর্সেনিক ও পরিবেশের অবক্ষয়ের আশঙ্কা থাকবে না। সারের ব্যবহার কমে আসবে, কৃষকের উৎপাদন খরচ কমে আসবে। ৭৪,৮৫০ হেক্টর জমিতে ৩ ফসলি ফসল উৎপাদন হবে। কৃষিতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে। রুক্ষ বরেন্দ্র অঞ্চলে জলীয়বাষ্পের প্রভাবে আবহাওয়া শীতল থাকবে। ব্যাপকভাবে গবাদি পশু, মাছ চাষ বৃদ্ধি পাবে।”

বাংলাদেশ কৃষক সমিতির উদ্যোগে বরেন্দ্র অঞ্চলের বগুড়া, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, জয়পুরহাট, নাটোর, পাবনা, সিরাজগঞ্জসহ অন্যান্য জেলা থেকে হাজার হাজার কৃষকের অংশগ্রহণে নিম্নোক্ত দাবিতে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়। বিক্ষোভ কর্মসূচির শেষে বিএমডিএ কর্তৃপক্ষ বরাবর বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকের দাবি সম্বলিত  একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।

দাবিসমূহ

১।      বরেন্দ্র অঞ্চলে কৃষি কাজে সেচের পানি বিতরণে ও গভীর নলকূপের অপারেটর নিয়োগে অনিয়ম- হয়রানি-দুর্নীতি বন্ধ কর। অপারেটরদের দৌরাত্ম্য রোধ কর। খাল, বিল, খাসপুকুর, দিঘি সংস্কার করে কৃষকদের পানি ব্যবহারের অবাধ অধিকার নিশ্চিত কর।

২।      বরেন্দ্র অঞ্চলের চাষের জমিতে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত কর। বিকল্প হিসেবে সৌর বিদ্যুৎ ও ন্যায্য দামে ডিজেল সরবরাহ কর।

৩।     প্রত্যেকটি জেলার বরেন্দ্র কার্যালয় ও গভীর নলকূপের সামনে সেচের মূল্য উল্লেখ করে সাধারণ নিয়মাবলী সম্বলিত তালিকা প্রকাশ্যে লটকাতে হবে।

৪।      প্রকৃত উৎপাদক কৃষককে কৃষি কার্ড দাও। সার-বীজ-কীটনাশক-ডিজেলসহ কৃষি উপকরণের দাম কমাও। পল্লী রেশন ও শস্য বীমা চালু কর।

৫।     বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষি, কৃষি জমি, পরিবেশ প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা কর।

৬।     উত্তর রাজশাহী সেচ প্রকল্প' চালু করে ভূ-উপরিস্থ পানি সংরক্ষণ ও সরবরাহ নিশ্চিত কর।

অবিলম্বে দাবি মানা না হলে বরেন্দ্র অঞ্চলের সকল জেলার তৃণমূল থেকে হাজার হাজার কৃষকের অংশগ্রহণে বৃহত্তর আন্দোলন কর্মসূচি পালন করবে কৃষক সমিতি। 

৯ মার্চ রংপুরে ‘তিস্তা কৃষক সমাবেশ’

আগামী ৯ মার্চ রংপুরে নিম্নোক্ত দাবিতে কৃষক সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে 'তিস্তা কৃষক সমাবেশ' অনুষ্ঠিত হবে।

 সারাবছর তিস্তা নদীর স্বাভাবিক পানি প্রবাহ নিশ্চিত কর।  ভারতের সঙ্গে দ্রুত পানি চুক্তি করে পানির হিস্যা আদায় কর। তিস্তা নদীকে মেরে ফেলার হাত থেকে রক্ষা কর।  তিস্তাসহ অন্যান্য নদী, খাল, বিল, জলাশয় পরিকল্পিতভাবে খনন করে তলদেশের নাব্যতা বজায় রাখার উদ্যোগ নিতে হবে।  দেশপ্রেমিক নদী গবেষকদের পরামর্শের ভিত্তিতে তিস্তার পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিতে হবে।  তিস্তা নদীর দুই পাড়ের মানুষের যাতায়াত ও কৃষিপণ্য দ্রুত হাট-বাজারে নেওয়ার জন্য সড়ক ব্যবস্থার উন্নয়ন কর।  নদী ভাঙন, কৃষকের ফসল, গবাদিপশু, ঘরবাড়ি রক্ষার জন্য পরিকল্পিত স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ কর।  নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের ক্ষতিপূরণ দাও। জেগে উঠা জমি (পয়স্তি জমি) প্রকৃত মালিকদের ফিরিয়ে দাও। ভূমিহীন মানুষকে খাসজমি বরাদ্দ দাও।  বরেন্দ্র অঞ্চলে সেচের পানি বিতরণে ও গভীর নলকূপের অপারেটর নিয়োগে অনিয়ম-হয়রানি-দুর্নীতি বন্ধ কর। অপারেটরদের দৌরাত্ম্য রোধ কর।  ভূমি অফিস ও পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের অনিয়ম-হয়রানি-দুর্নীতি বন্ধ কর। এই দাবিতে তিস্তা কৃষক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।

তিস্তা কৃষক সফল করার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।