শিরোনাম
গণ-অভ্যুত্থানে উত্তরায় আহত ১৪৬৭ এবং শহীদ ৮২ জন বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচার, দুর্নীতি ও পাচারকৃত টাকা উদ্ধার এবং রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি বামজোটের আমরা ফেসবুক গরম রাখতে ভালবাসি কালচারাল পলিটিক্স উছিলা সিনেমা মুক্তিযুদ্ধ, জাতীয় সংগীত ও সংবিধানের মূল ভিত্তির উপর আঘাতকারীদের ষড়যন্ত্র রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান সিপিবির প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ'র স্মরণ সভা ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান’এ উত্তরার শিক্ষার্থী-শিক্ষক-অভিভাবকদের আন্দোলনের অভিজ্ঞতা বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত উত্তরায় সন্তানের নিরাপত্তাহীনতায় উদ্বিগ্ন অভিভাবকবৃন্দের শোক সমাবেশ কোটা ব্যবস্থার সংস্কারের পাশাপাশি রাষ্ট্রের সংস্কারের দাবি ছাত্র ইউনিয়নের ‘‘স্থায়িত্বশীল নগরায়ন: সমস্যা ও সমাধান’’ বিষয়ক বাপা’র পুস্তিকা উম্মোচন

আমরা ফেসবুক গরম রাখতে ভালবাসি

মাসুদ হাসান উজ্জ্বল


আমরা ফেসবুক গরম রাখতে ভালবাসি

অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে কেবলমাত্র আমি এখন পর্যন্ত কোন দাবিদাওয়া পেশ করি নাই  এবং রাজনৈতিক বা সাংস্কৃতিক সংস্কারের জন্য ছোটখাটো কমিউনিটি বানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন সেমিনার হল ভাড়া করে বক্তৃতা দেই নাই। কারণ কি জানেন? হুমায়ূন আহমেদের ভাষায় “ আমার লইজ্জা করে”।

আগে বিটিভিতে একটা বিতর্ক প্রতিযোগীতা হত “সংসদীয় বিতর্ক প্রতিযোগীতা’’ যেখানে একজন স্পিকার, সরকারী দল এবং বিরোধী দল থাকে। আপনি তুখোড় সব বিতার্কিক দেখবেন সেই অনুষ্ঠানে, বিতর্ক করে দেশের অনেক হাতি-ঘোড়া মেরে ফেলবে অথচ সেই সংসদটাই একটা কাল্পনিক সংসদ-বাচ্চাদের যৌক্তিক বিতর্ক চর্চ্চার উদ্দেশ্যে তৈরী একটা অনুষ্ঠান মাত্র। আমাদের সংস্কার আকাঙ্খা ঠিক সেই অবস্থায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। নিজেরা নিজেরা সংস্কার করে উল্টে ফেলছি যা সরকারের কানে পৌঁছানোর আদৌ কোন সম্ভাবনা নাই। বেশীর ভাগ জায়গায় মূল লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য পুরাতন সিন্ডেকেট ভেঙ্গে নতুন সিল্ডিকেট বানানো। অথচ যেই খাওয়ার উদ্দেশ্যে সিন্ডিকেট, সেই নতুন সিন্ডিকেট খাবেটা কোত্থেকে সেই হিসাব নাই, মানে কোন কাজ নাই, টাকাও নাই। এত ক্ষুদ্র চাওয়া নিয়ে এনারা না কি দেশ বদলে দেবেন !

ভাবছি এর আগেও দেশে কয়েকবার গণ অভ্যুত্থান হয়েছিল, পরবর্তীতে এত বিশৃঙ্খলা হয় নাই। এখন একদল বলবে “ ভাই ১৫ বছরের স্বৈর শাসনের যে ক্ষতি, মাত্র ১ মাসে সেটা ঠিক করা যায় !! তাহলে ১৫ বছরের প্রশাসন (হোক সে দলীয়) ১৫ দিনে ঢেলে সাজিয়ে এই প্রশাসনিক শূন্যতা তৈরী কেন করতে হল? এমন তো নয় সব খানে যোগ্য মানুষ বসানো হয়েছে, এত দ্রুত এসব সম্ভব নয়। দেশে ইতিমধ্যে ৩-৪ বার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শাসন চলেছে এবং তার অধীনে অবাধ সুষ্ঠ নির্বাচন হয়ে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় এসেছে। কোনবারই সরকার পতনের পরে বলতে গেলে কোন নৈরাজ্য বা বিশৃঙ্খলা নজরে আসেনি। হুট করে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবার মত ব্যপার আর কি।

এই সরকারের ১ মাসে সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন দপ্তরে জামায়াতে ইসলামির লোকজনকে বসানো, জেল থেকে গণহারে আসামী দের মুক্তি দেওয়া - ভাবখানা এমন যে কুখ্যাত সব সন্ত্রাসী এতদিন রাজনৈতিক বন্দি ছিল ! এই পরিমানে সাজাপ্রাপ্ত দাগি আসামী মুক্তি পেয়েছে, যে আপনি যদি হুট করে চিড়িয়াখানার খাঁচা থেকে ক্ষুধার্ত বাঘ, সিংহ, বিষাক্ত সাপ রাস্তায় ছেড়ে দেন - তাহলে যেই অবস্থার সৃষ্টি হবে, তেমন পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে আর কি। এর পর জাতীয় সংগীত পাল্টানোর দাবি তোলা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদেরকে লাঞ্ছিত করা এবং পদত্যাগে বাধ্য করা, মাজার ভাঙ্গা আর কোনপ্রকার কুটনৈতিক কৌশল অবলম্বন না করেই কয়দিন পর পর ভারতকে হুমকি দেওয়া ছাড়া তেমন উল্লেখযোগ্য কোন সংস্কার বা অগ্রগতি নজরে আসে নাই! তবে ডঃইউনুস কথা বলেন সব ভাল ভাল, তাঁর বাচনভঙ্গিও দুর্দান্ত।

আপনারা কেউ খেয়াল করেছেন - আমরা যেহেতু ফেসবুক গরম রাখতে ভালবাসি - আমাদেরকে একের পর এক এসব টপিক দিয়ে গরম রাখা হচ্ছে, কিন্তু কাজ আর টাকাটা দেওয়া হচ্ছে না। বলেন তো আমাদের এই মুহুর্তে কাজ আর টাকা দরকার না কি সমস্ত প্রতিষ্ঠানে জামাত - বিএনপি বসানো দরকার? সরকারের কাজ এদেরকে পুনর্বাসিত করা না কি জনগনকে খাদ্য এবং সামাজিক নিরাপত্তা দেওয়া? নির্বাচন দিলে এরা নিজেরাই নিজেদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে নেবে। আপনি আপনার গোটা সময় যদি এদেরকে সার্ভ করা নিয়েই ব্যস্ত থাকেন, দেশের সাধারণ মানুষকে দেখবেটা কে!

ভারতের সামরিক বাহিনীতে মোট ১,৩২৫,০০০ জন নিয়মিত সেনা, ১,১৫৫,০০০ জন সংরক্ষিত সেনা এবং ১,২৯৩,৩০০ জন আধাসামরিক সেনা রয়েছে। ভারতের সামরিক বাহিনীর সর্বমোট সেনা জওয়ানের সংখ্যা ৩,৭৭৩,৩০০ জন। ভারতের সামরিক বাহিনী চীনের পরেই বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম সামরিক বাহিনী। বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীতে নিয়মিত সৈন্যের সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৬৩ হাজার। সেনা শক্তিতে বাংলাদেশ বিশ্বে ৩৭ তম। দুই দিন পর পর চিকেন নেকের খবর করে দেব বলে হুমকি দিয়ে ভারতকে উস্কে দেয়ার কি মানে? এটা কি ভারত বিদ্বেষি সাধারণ জনগনকে খুশী করার একটা সস্তা স্ট্যান্ডবাজি নয়? ভারতে ইলিশ রপ্তানী বন্ধ বলে বেকুব জাতিকে খুশী করে দিলেন, আর ইলিশের রাজধানী চাঁদপুরে ইলিশের কেজি ১৯০০ টাকা।

মানলাম এক অসম যুদ্ধেও নাহয় বীর বাঙ্গালী যুদ্ধ করে ভারতকে হারিয়ে দেবে, কিন্তু সেই যুদ্ধ করাটা কি খুব বেশী জরুরী?

তবে হঠাৎ করে রাজনীতিবিদ বনে যাওয়া কিছু মানুষ ইউনুস সাহেবের এমনই ভক্ত যে তাদের আচরণ সদ্য হাটতে শেখা শিশুর মায়েদের মত। দেখবেন শিশু ২% পারলে মায়েরা ১০% চিৎকার করে বলে - ওয়াও বাবা ইউ আর ডুইং গ্রেট! ইউনুস সাহেব বোতলের বদলে জগে পানি খাওয়ার নিয়ম করেছেন - ওয়াও , যেখানে হাসিনা ১৩০-৪০ জন নিয়ে জাতিসংঘে যেতেন, ড. ইউনুস মাত্র ৭ জন নিয়ে যাচ্ছেন, ওয়াও! ভাই হাসিনার সাপেক্ষে ইউনুসকে বাহবা দিলে হবে? যার পতনই হয়েছে স্বৈরশাসক হিসাবে, যার সরকার লুটপাটই করেছে লক্ষ কোটি টাকা - তার প্যারামিটারে অন্য সরকার মাপলে তো সেই সরকার মিষ্টি করে হাসলেও সেটা একটা বিরাট রাজনৈতিক সংস্কার বলে মনে হবে। দয়া করে ইউনুস সাহেবকে অনীল কাপুর ভেবে সিনেমার বিনোদন নিয়েন না। দেশ দুই ঘন্টার সিনেমা না। দেশের সরকার বোঝার জন্য দেশের আইন সৃঙ্খলা পরিস্থিতি আর অর্থনীতি এই দুইটা দেখলেই চলে। দেশে মব জাস্টিস নিয়ে সরকারের কোন মাথা ব্যাথা নাই। মাঝেমধ্যে কেউ কেউ অবশ্য বলে - এডি কইরেন না, এডি বালা না। অথচ আইনগত কোন কঠোরতা নাই! বিমানবন্দরের মত গুরুত্বপূর্ণ জায়গা যেন বাজার হয়ে গিয়েছে, যে কেউ ভেতরে টিকেট -পাসপোর্ট ছাড়া ঢুকতে পারছে! ঢাকা বিমানবন্দরে গেলে আপনার হুট করে মনে হবে আপনি কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে আছেন। এভাবে সমস্ত কিছু নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে দশাটা কি হবে বুঝতে পারছেন?

যাই হোক আমাকে আবার আওয়ামী বা ভারতের দালাল বলে গালি দিতে আইসেন না, আমিও জুলাই বিপ্লবে সমর্থন দিয়ে ছাত্রদের সাথে থাকা মানুষ। তখন শেখ হাসিনা ঠিক করছেন না মনে করেছি, তাই প্রতিবাদ করেছি, এখন আবার নতুন সরকারের সমালোচনা করছি। কোন সরকারকেই আমি চাটি না, কারণ আমার কোন ব্যক্তিগত ধান্দা নাই। আমার কাজই অন্যায়ের বিপক্ষে থাকা। আমি হতভম্ব হয়ে ভাবছি আগে ছিল চারিদিকে আওয়ামী দল কানা, আর এখন দেখছি বৈষম্য বিরোধী দল কানা বৈষম্য বাজ! আমার মত মানুষেরা পড়েছে বিপদে, আমাদের তো ভাই দল একটাই, দলের নাম “বাংলাদেশ”।

লেখকঃ মাসুদ হাসান উজ্জ্বল

কবি, শিল্পী, সংগীত ও চলচ্চিত্র পরিচালক