নীতিনীষ্ঠ রাজনীতি ছাড়া দেশে রাজনীতি নেই - রুহিন হোসেন প্রিন্স

নীতিনীষ্ঠ রাজনীতি ছাড়া দেশে রাজনীতি নেই - রুহিন হোসেন প্রিন্স

অবিলম্বে সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে নির্দলীয় তদারকি সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)মৌলভীবাজার জেলা কমিটির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত জনসভায়  বক্তারা বলেছেন, দেশের জনগণের ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার করার মধ্য দিয়ে চলমান স্বৈরশাসনের অবসান ঘটাতে হবে। নির্দলীয় তদারকি সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠান ব্যতিরেকে অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন সম্ভব নয়। 
কেন্দ্রীয় কর্মসুচির অংশ হিসেবে রবিবার ( ১৫অক্টোবর) বিকেলে মেয়র মুক্ত মঞ্চে সিপিবি  মৌলভীবাজার জেলা কমিটির উদ্যোগে এই জনসভা অনুষ্ঠিত হয়।
মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড লুৎফুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিলিমেষ ঘোষ বলুর পরিচালনায় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক কমরেড রুহিন হোসেন প্রিন্স ১৪ অক্টোবর নেত্রকোণায় সিপিবি সমাবেশে যুব লীগ, ছাত্রলীগ ও পুলিশের হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেন, দেশ আজ এক গভীর সংকটে নিমজ্জিত।একদিকে জনগণের ভোটের অধিকার ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে এগিয়ে নিতে হবে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১৪ ও ২০১৮ সালে জনগণের ম্যান্ডেট না নিয়ে ছল-ছাতুরী ও কারচুপির মাধ্যমে জোর করে ক্ষমতায় টিকে আছে। অশুভ শক্তিকে সন্তুষ্ট করে বর্তমান সরকার জোর করে ক্ষমতায় থাকার কারণে লুটেরা গোষ্ঠী সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষা করে চলার কারণে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি সহ নানা সংকটে জনগণ দুর্বিসহ জীবন যাপন করছে। শ্রমিক ন্যায্য মজুরী পাচ্ছে না, কৃষক ফসলের লাভজনক দাম পাচ্ছে না। 
এছাড়াও তিনি বলেন, বাংলাদেশে যখন যে সরকার ক্ষমতায় এসেছে, সেই সরকারই লুটেরা ধনীক শ্রেণির স্বার্থ রক্ষা করে করে চলেছে। দুর্নীতি ও লুটপাটের মাধ্যমে জনগণের সম্পদ আত্মসাৎ করেছে। তিনি বলেন, এদেশে যে সরকারই ক্ষমতায় এসেছে সেই সরকারই জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে ক্ষমতায় থাকার নীল নকশা করেছে। কিন্তু কোন সরকারই জনগণের আন্দোলনের চাপে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে পারেনি। জনগণে তাদেরকে ক্ষমতার মসনদ থেকে টেনে নামিয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের এক সরকার কে ক্ষমতা থেকে নামিয়ে অপর সরকার ক্ষমতায় আসলেই হবে না। সরকারের ক্ষমতার বদল হলে জনগণের ভাগ্যে পরিবর্তন হবে না তাই নীতি ও ব্যবস্থার বদল করতে হবে। পুজিবাদী ধারার সরকারকে উচ্ছেদ করে বাম-প্রগতিশীল ধরার সরকার ক্ষমতায় আসার মাধ্যমেই জনগণের আশা আকাঙ্খার সত্যিকারের প্রতিফলন হবে।
 প্রিন্স আরও বলেন বামপন্থীদের নীতিনীস্ঠ রাজনীতি ছাড়া দেশে রাজনীতি নেই। যা আছে তাহলো দূর্বৃত্তায়িত রাজনীতি। যেনতেন ভাবে ক্ষমতায় থাকা ও ক্ষমতায় যাওয়া,আর ক্ষমতাকে ব্যবহার করে অবাধে দূর্নীতি লুটপাট টাকা পাচার চলছে।ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে মানুষের কন্ঠ রোধ করার চেষ্টা হচ্ছে। মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে নির্বাচন কে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছে।
আগামীতে আবারো প্রহসনের নির্বাচন সংগঠিত করার চেষ্টা চলছে।
এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে  আসতে না পারলে অগণতান্ত্রিক শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে।
তিনি, নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কারসহ নির্দলীয় তদারকি সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে, নির্দলীয় সরকারের রূপরেখা প্রনয়নের জন্য আলোচনা শুরু করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন,দূর্বৃত্তায়িত রাজনীতির কারণে আজ দেশের রাজনীতিতে বিদেশি হস্তক্ষেপ বেড়ে চলেছে। বিদেশীদের কাছে ধর্ণা দিয়ে গনতন্ত্র অর্জন করা যাবে না। এরা দেশের ওপর নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখতেই তৎপরতা চালাচ্ছে।
তিনি চা শ্রমিক সহ শ্রমিকদের জাতীয় নূন্যতম মজুরি ঘোষণা ও সারাদেশে রেশন চালুর দাবি জানান।
তিনি বলেন,মুক্ত বাজারের ধারা বহাল রেখে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। এজন্য ব্যবস্থা বদল করতে হবে।
এজন্য বামপন্থীদের ক্ষমতায় বসাতে হবে। নতুবা ক্ষমতার মিউজিকাল চেয়ার বদলে মানুষের মুক্তি আসবে না।
তিনি দূর্বৃত্তায়িত রাজনীতিকে 'না' বলে,নীতিনীস্ঠ রাজনীতিকে 'হ্যা ' বলতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন,বাংলাদেশে জনগণের ভাত ও ভোটের অধিকার হরণ করে কারও পক্ষে শাসন ক্ষমতা টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না।
অন্যানদের মধ্যে বক্তব্য  রাখেন  অ্যাডভোকেট মকবুল হোসেন,  আব্দুল লতিফ,  জহর লাল দত্ত, সৈয়দ মোশাররফ আলী,অ্যাডভোকেট মাসুক মিয়া, জেলা যুব ইউনিয়নের সভাপতি আবু রেজা সিদ্দিকী ইমন প্রমুখ।
বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, সিপিবিসহ বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা-হুলিয়ার মাধ্যমে আন্দোলন দমনের অপচেষ্টা হচ্ছে। রাজনৈতিক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে সব জুলুম-নির্যাতন মোকাবিলা করে দাবি আদায় করা হবে বলে নেতৃবৃন্দ ঘোষণা দেন।
সমাবেশে বক্তারা আরও  বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে অতীতের মতো একটি প্রহসনের নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দলকে টেনে আনার সব ধরনের প্রচেষ্টা চলমান আছে। তাতে ব্যর্থ হলে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী যত বেশি সম্ভব রাজনৈতিক দল ও শক্তিকে নির্বাচনে নিতে চায়। এ প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে সম্প্রতি বিভিন্ন সাম্প্রদায়িক দল, এমনকি জামায়াতকে নিয়েও রাষ্ট্রশক্তির নানা তৎপরতা চোখে পড়ছে।
বক্তারা আগামী জাতীয় নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক, অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত করতে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তদারকি সরকারের দাবিতে তীব্র রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে তোলার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।