বাম গণতান্ত্রিক জোট ঢাকা মহানগর কমিটির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত পদযাত্রা পূর্ব সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেছেন, নজরদারির উচ্চ প্রযুক্তি আমদানি, গোপন পুলিশ ও জেল-জুলুমকে হাতিয়ার করে সরকার হিটলারের ‘গেস্টাপো’ বাহিনীর অনুরূপ প্রস্তুতি নিচ্ছে। নেতৃবৃন্দ সংবাদপত্রে প্রকাশিত ‘সমন্বিত নজরদারি’ প্রযুক্তি আমদানির সংবাদ উল্লেখ করে বলেন, দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষকে দমন নির্মূল করতে ফ্রান্সসহ যারা এসকল প্রযুক্তি বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন সরকারের হাতে তুলে দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে বিশ্ব জনমত গড়ে তোলা হবে। নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, জেল-জুলুমকে হাতিয়ার করে অতীতে কোনো স্বৈরশাসক চিরস্থায়ী হতে পারেনি, বাংলাদেশের মানুষ গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে।
বাম গণতান্ত্রিক জোট ঢাকা মহানগর কমিটির উদ্যোগে আজ ২০ অক্টোবর ২০২৩, শুক্রবার, বিকেল সাড়ে ৪টায় ঢাকার পুরানা পল্টন মোড় থেকে বিজয়নগর হয়ে বক্স কালভার্ট সড়ক পর্যন্ত পদযাত্রা কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। বাম গণতান্ত্রিক জোট ঢাকা মহানগরের সমন্বয়ক তৈমুর খানের সভাপতিত্বে ও সিপিবি ঢাকা দক্ষিণ কমিটির সম্পাদকম-লীর সদস্য সাইফুল ইসলাম সমীরের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়, বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবীর জাহিদ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ঢাকা মহানগর দক্ষিণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জলি তালুকদার, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ডা. সাজেদুল হক রুবেল, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের ঢাকা মহানগরের সমন্বয়ক জুলফিকার আলী, বাসদ (মার্কসবাদী)’র কেন্দ্রীয় নেতা সীমা দত্ত, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির নেতা রুবেল সিকদার প্রমুখ।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, দেশে স্বৈরশাসন কায়েমের পরিকল্পনা থেকেই সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী করা হয়েছিল। যা আজকের রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি করেছে। নির্দলীয় তদারকি সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠান ব্যতিরেকে অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন সম্ভব নয়। তাই গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে চলমান স্বৈরশাসনের অবসান ঘটাতে হবে। সমাবেশ থেকে সংসদ ভেঙে দেয়া ও সরকারের পদত্যাগ দাবি করা হয়। একই সঙ্গে দ্রব্যমূল্যের চরম ঊর্ধ্বগতি রোধ ও দুর্নীতি-লুটপাট-অর্থপাচার-বাজার সিন্ডিকেটের হোতাদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবি জানানো হয়।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, বর্তমান সরকার শুধু ভোটের অধিকারই কেড়ে নেয়নি, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসমূহ ধ্বংস করেছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করার কোনো আগ্রহ সরকারের নেই। সরকারের পক্ষ থেকে অতীতের মতই একটি প্রহসনের নির্বাচনে কিছু সংখ্যক বিরোধী রাজনৈতিক দলকে টেনে আনার সব প্রচেষ্টা ভেস্তে গেছে। তাতে ব্যর্থ হয়ে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী দিশেহারা। তারা দমন-পীড়ন-নির্যাতনের পথে মানুষের প্রতিরোধ সংগ্রামকে নির্মূল করতে চাচ্ছে। সরকার মানুষের সাংবিধানিক ও আইনি অধিকার হরণ করার গোয়েন্দা নজরদারি প্রযুক্তির নাম দিয়েছে ‘সমন্বিত আইনসঙ্গত আড়িপাতা ব্যবস্থা’।
নেতৃবৃন্দ বলেন, যে কোন মূল্যে চলমান দুঃশাসনের অবসান ঘটাতে হবে এবং গণমাধ্যম, বিচার বিভাগসহ সকল সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসমূহের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার সংগ্রাম জোরদার করতে হবে। দেশের শাসন প্রক্রিয়ায় ন্যূনতম গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ বিনষ্ট করা হয়েছে। জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে একটি সাংবিধানিক স্বৈরশাসন কায়েম করা হয়েছে। শাসক গোষ্ঠীর দলগুলো রাজনীতিকে নীতিহীন, শক্তির খেলায় পরিণত করেছে। যার সুযোগে সাম্রাজ্যবাদী ও আঞ্চলিক আদিপত্যবাদী শক্তিসমূহ নানা অপতৎপরতা চালাচ্ছে। জাতীয় স্বার্থ ও দেশের সার্বভৌমত্ব আজ খেলো বিষয়ে পরিনত হয়েছে।