শিতাংশু ভৌমিক অংকুর,
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে টানা এক সপ্তাহ ধরে চলা রাজধানী সহ সারাদেশে প্রায় শত মানুষের জীবন কেড়ে নিয়েছে। আন্দোলনকারীরা যেমন পুলিশ মেরেছে পুলিশ ও আত্মরক্ষার খাতিরে আন্দোলনকারীদের উপরে গুলি নিক্ষেপ করে। প্রশ্ন হচ্ছে নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের হাতে কিভাবে আসলো এসব অস্ত্র। চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে যে অনুপ্রবেশকারীরা ঢুকে ছিল। তা রবিবার (১৪ই জুলাই) এর পর থেকে তা প্রমাণিত হয়েছে। এসব হামলা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপর আক্রমনের মধ্য দিয়ে। কোটা সংস্কারের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে অনুপ্রবেশ করে রাজনৈতিক লড়াইয়ে হেরে যাওয়া স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির পক্ষের দুষ্কৃতিকারীরা তারা পুলিশ সহ ক্ষমতাশীল দলের ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে গুজব ও মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে তাদের উস্কানি দিতে থাকে। দেশের প্রচলিত সকল গোয়েন্দা সংস্থা ও সরকার বড় ধরনের কোন সংঘাতের শঙ্কার আচও করতে পেরেছিলেন হয়তো। তাই হয় তো প্রধানমন্ত্রী ও ক্ষমতাশীল দল এবং তার ছাত্র সংগঠনের কোটা সংস্কারের ইস্যুতে ভূমিকা ছিল নিরব প্রথম দিকে। প্রধানমন্ত্রী চীন সফর শেষে সংবাদ সম্মেলনে কোটা সংস্কারের ইস্যুতে শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে বলেন, চীন সফর নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘কোটা নিয়ে আদালত থেকে সমাধান না আসলে সরকারের কিছু করার নেই।’ তিনি প্রশ্ন রাখেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিরা চাকরি পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতিপুতিরা পাবে?’ সরকারপ্রধানের সেই বক্তব্যকে বিকৃত করে রাতেই কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতার উপর ছাত্রলীগের হামলার অভিযোগ তুলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সহ ইডেন মহিলা কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ সহ ঢাকা শহরের বিভিন্ন সরকারি -বেসরকারি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জোর হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। শুধু ঢাকায় নয় , প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের বিকৃতি করে সরকার বিরোধীরা প্রচার করে প্রধানমন্ত্রী কোটা সংস্কারের দাবিতে থাকা ছাত্র সমাজকে রাজাকার বলেছেন। এরই জের ধরে সেই রাতে বিক্ষোভ করতে শুরু করে সারাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যে আন্দোলনকারীদের অবমাননা করা হয়েছে দাবি করে মধ্য রাতে রাজপথে নেমেছিল শিক্ষার্থীরা। ওই রাতে রাস্তা অবরোধের সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার, রাজাকার’, ‘চাইলাম কোটা সংস্কার, পেলাম রাজাকার'সহ নানা স্লোগান দিতে দেখা যায়। তার পর দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কারের আন্দোলনে থাকা শিক্ষার্থীদের সাথে ছাত্রলীগ ও পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এতে করে কোটা সংস্কার আন্দোলন থাকা আন্দোলনের আন্দোলনকারীদের মুখোশের পাশে থাকা দুষ্কৃতিকারীদের সাথে ছাত্রলীগের নেতা ও পুলিশের মধ্যে হামলা -পাল্টা -হামলা সহ গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এই গোলাগুলির ঘটনায় পরিস্থিতি ক্রমশ সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে থাকে। তারপর সারা দেশের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উপর সরকারি দলের ছাত্র সংগঠনের নেতা ও পুলিশের হামলা হয়েছে এতে করে অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। তবে এর সাথে আরেক টি গুজব ও ছড়িয়ে পড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের পাশে নাকি কতগুলো লাশ পাওয়া গেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামী -ছাত্র শিবির, জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)র নামে ও ঘরনার মানুষদের দীর্ঘদিন যাবত নিয়ন্ত্রণে থাকা পেইজ, গ্রুপ, একাউন্ট থেকে এসব ছড়িয়েছে প্রমাণ পাওয়া যায়।
তবে এই পালে হাওয়া দিয়েছে বাংলাদেশের অনেক গুলো বাম ছাত্র সংগঠন। তারাও দুষ্কৃতিকারীদের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে কম্পিলিট শার্ট ডাউনের আন্দোলনে যোগ দিয়েছে নিজেদের কোন কর্মসূচি ছাড়া। গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে যে পরিমাণ সাধারণ শিক্ষার্থী ও জনগণ হামলা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন আহত-নিহত হয়েছে তার দায় অবশ্যই সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং তাদের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা গুলোকে নিতে হবে।এত এত আভাস ও তথ্য তারা জমা করেছেন কিন্তু কোনটিই কাজে আসলো না কেন? এত গুলো নিরিহ মানুষ মারা যাওয়ার পর কেন তারা বলছে জামাত-বিএনপি সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের অনুপ্রবেশ করে শত শত কোটি টাকার সম্পদ ও জীবনের ক্ষতি করেছে! রাষ্ট্রের জনগণ হিসেবে আমি এবং আমরা প্রতিনিয়ত যে ট্যাক্স এবং ভ্যাট সরকারকে দিয়ে থাকি সেই টাকায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা বেতন ভাতা দেওয়া হয়। আসলে তার কি করল এই ভয়াবহ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শুধু কি গুলি ও ঢিলের বিপরীতে গুলি ছুড়ে তাদের দায়িত্ব শেষ করল নাকি সরকার সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করেছিল। এসব প্রশ্ন এখন মানুষের মনের মধ্যে। আজকের স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিরা যে এত শক্তিশালী হলো মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ টানা তিনবার ক্ষমতায় থেকে চতুর্থ মেয়াদ পার করছে তাতে করে আওয়ামীলীগের কি জানা ছিল না। যে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তিরা সংগঠিত হচ্ছে বিদেশি শক্তি ও দেশিও ক্ষমতা লোভী মানুষ হত্যারা। এসব প্রশ্নের উত্তর সরকার কেই দিতে হবে এবং একই সাথে সরকারের উচিত স্বাধীনতার স্বপক্ষের মিত্র শক্তিগুলোকে শক্তিশালী করা। দেশের সাংস্কৃতিক ও সামাজিক অঙ্গনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছড়িয়ে দেওয়া। তার সাথে তরুণ প্রজন্মের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা দেওয়ার জন্য সেসব প্রকল্প আওয়ামীলীগ নিয়েছিল তা বাস্তবায়নে অনিয়ম দূর্নীতি রুখে দিতে সরকারকে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে দল হিসাবে আওয়ামীলীগ স্বাধীনতা স্বপক্ষের শক্তি হিসাবেই পরিচিত বাঙালির কাছে তারা যেন মুক্তিযুদ্ধ ও তরুণ প্রজন্মের মাঝে কোন ফাটল সৃষ্টির দ্বায় না নেয়। সেটা তার কর্ম ও পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে নিতে হবে। কোটা সংস্কার আন্দোলন ও সহিংসতা যে নিরহ সাধারণ মানুষদের হত্যার শিকার হতে হল তাদের প্রত্যেকের পরিবার ও পরিজনের কাছে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ক্ষমা চাওয়া উচিত।
লেখক:সংবাদকর্মী