বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র সাধারণ সম্পাদক, বাম গণতান্ত্রিক জোটের শীর্ষ নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স বর্তমান সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙ্গে দেওয়া, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ তদারকি সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম জোরদার করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, লুটেরা শাসকরা জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করেছে। ভোটাধিকার লুট করেছে। লুটেরা দুর্বৃত্তদের শাসনের অবসান ছাড়া দেশবাসীর মুক্তি নেই। এজন্য চলমান দুঃশাসন হটিয়ে ব্যবস্থা বদলের সংগ্রাম এগিয়ে নিতে হবে। নীতিনিষ্ঠ বাম গণতান্ত্রিক শক্তিকে ক্ষমতায় বসাতে হবে।
আজ ১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ শুক্রবার বিকেল ৪টায় মিরপুর-কাফরুলে পদযাত্রা ও কাফরুল থানার ভিশন মোড়ে সিপিবি আয়োজিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। সিপিবি কাফরুল থানার সভাপতি আলী কাউসার মামুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সিপিবি’র কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, ঢাকা উত্তর সিপিবি সভাপতি ডা. সাজেদুল হক রুবেল, ঢাকা উত্তরের সাধারণ সম্পাদক লূনা নূর, সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য মোতালেব হোসেন, রাসেল ইসলাম সুজন, যুব ইউনিয়নের সভাপতি খান আসাদুজ্জামান মাসুম, খন্দকার হীরকুজ্জামান হীরক।
রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রনহীন, সবকিছু সিন্ডিকেট ও লুটেরা গোষ্ঠীর দখলে। সরকার এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে এদেরই মদদ দিয়ে চলেছে। গণতন্ত্রহীনতার সুযোগে বিদেশী আধিপত্যবাদী অপশক্তি দেশের অভ্যন্তরীন রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করে নানা ফায়দা লুটার চেষ্টা করছে। নীতিহীন, লুটেরা ও ব্যক্তি-গোষ্ঠীর স্বার্থরক্ষাকারী রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় থাকতে ও ক্ষমতায় যেতে এদের দেন-দরবারে সায় দিচ্ছে। ক্ষমতাসীনদের কথায় বেরিয়ে আসছে, ক্ষমতায় থাকতে বা ক্ষমতায় যেতে নাকি দেশের স্বার্থ বিসর্জন দিতে হয়। এসব হলো নীতিহীন রাজনীতির দেউলিয়াপনা। এদের কাছে দেশ ও দেশের মানুষ নিরাপদ নয়।
রুহিন হোসেন প্রিন্স আরও বলেন, ‘‘জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে সুষ্ঠ, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন পরিবেশ তৈরী ও নির্বাচন করতে ব্যর্থ হলে অন্ধকারের অপশক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। সুযোগ পেলে এরা অগণতান্ত্রিক পরিবেশ দীর্ঘায়িত করবে। এর ফলে সাধারণ মানুষের জীবন আরো দুঃসহ হয়ে উঠবে। দুঃশাসন নতুন মাত্রা পাবে, মানুষের মুক্তি আসবে না।
ব্যবসায়ী নামধারী লুটেরদের সিন্ডিকেট এত শক্তিশালী যে, বাণিজ্যমন্ত্রী এদের কথা বলে আবার ঐ কথা ফিরিয়ে নিচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলতে পারছেন না। প্রকারান্তরে সরকারই সিন্ডিকেটের পাহারাদারের ভূমিকা পালন করছে।’’
তিনি নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তদারকি সরকারের রূপরেখা নিয়ে আন্দোলনকারীদের সাথে আলোচনার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সরকার এ কাজে ব্যর্থ হলে পরিস্থিতি আরো অবনতি হবে, যার দায় সরকারকেই নিতে হবে। শ্রমিকের জাতীয় নূন্যতম মজুরির দাবিসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষকে যার যার নিজস্ব দাবীতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে চলমান দুঃশাসনের অবসানের সংগ্রাম এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘‘টাকা পাচারকারী, দূর্নীতি, লুটপাটকারী ও এর মদদদাতাদের বিচার এই বাংলার মাটিতে হবে। চলমান দুঃশাসনের বিরুদ্ধে জনগণকে রাজপথে নামতে হবে। গণআন্দোলন, গণসংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে। এর মধ্য দিয়ে বিজয়ী হয়ে ভোটাধিকার, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’’
তিনি আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকায় বাম জোট আহুত সমাবেশ সফল করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র দ্বি-দলীয় ধারার রাজনীতির বিপরীতে জনগণের আস্থা ভাজন বাম গণতান্ত্রিক শক্তির সমাবেশ ঘটাতে হবে।
ডাঃ সাজেদুল হক রুবেল বলেন, ‘‘নির্বাচনকে সামনে রেখে অতীতের ন্যায় আবার দুই দল নানা খেলা শুরু করছে। জনগণ তার যাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছে। তারা জনগণের সংকটকে তোয়াক্কা না করে বিদেশী শক্তির উপর ভর করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চাচ্ছে অথবা ক্ষমতায় যেতে চাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে জনগণের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বাম বিকল্প ধারা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। সেই লক্ষ্যে সবাইকে কমিউনিস্ট পার্টির পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’’
সমাবেশ শেষে পদযাত্রা করে মিরপুর ১০ নাম্বার গোলচত্বরে সমাবেশের মধ্য দিয়ে কর্মসূচি সমাপ্ত হয়।