রাজধানী মার্কেট থেকে ধোলাইখাল পদযাত্রা পূর্ব সমাবেশে সিপিবি নেতৃবৃন্দ

স্বৈরতন্ত্র টিকিয়ে রাখতে আইন ও বিচার বিভাগকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে সরকার

স্বৈরতন্ত্র টিকিয়ে রাখতে আইন ও বিচার বিভাগকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে সরকার

ক্ষমতাসীন সরকার দেশে চলমান স্বৈরতন্ত্র টিকিয়ে রাখতে আইন ও বিচার বিভাগকে হাতিয়ার এবং রাষ্ট্রীয় সংস্থাসমূহকে দলীয় লাঠিয়াল বাহিনীতে পরিণত করেছে বলে অভিযোগ করেছেন সিপিবি নেতৃবৃন্দ। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবিতে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ঢাকা মহানগর দক্ষিণ কমিটির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত পদযাত্রা পূর্ব সমাবেশে তারা এ কথা বলেন। নেতৃবৃন্দ বলেন, দেশের মানুষের ভোটসহ সকল গণতান্ত্রিক অধিকার, জীবিকার অধিকার হরণ করা সরকারের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা জনমত ও আন্দোলন দমনে তারা চরম জুলুম চালাচ্ছে। অন্যদিকে সরকারের জনবিচ্ছিন্ন ‘এলিয়েন’ অবস্থা সামাল দিতে দেশের তথাকথিত অগ্রগতি ও সরকারের বাহাদুরি প্রচারে অস্তিত্বহীন বুদ্ধিজীবী, বিশেষজ্ঞগণ কলম ধরেছেন। আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এএফপি’র বরাতে নেতৃবৃন্দ বলেন, যে সরকার ডিএসএর মত আইন দিয়ে ফেসবুক স্ট্যাটাসের জন্য মানুষকে বছরের পর বছর জেলে পুরে রাখে, সেই সরকারের সমর্থনে দেশী ও আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে ভিনগ্রহের বিশেষজ্ঞ ও বুদ্ধিজীবীগণের সাতশতাধিক প্রবন্ধ ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। 

সিপিবি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ কমিটির উদ্যোগে আজ ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, শুক্রবার, বিকেল সাড়ে ৪টায় নগরীর রাজধানী মার্কেট থেকে নারিন্দা হয়ে ধোলাইখাল পর্যন্ত পদযাত্রা কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। সিপিবি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ কমিটির সভাপতি শামসুজ্জামান হীরার সভাপতিত্বে ও সিপিবি জেলা কমিটির অন্যতম সদস্য মঞ্জুর মঈনের পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ কমিটির সম্পাদকম-লীর সদস্য সাইফুল ইসলাম সমীর, সেকেন্দার হায়াৎ, সদস্য জাহিদ হোসেন খান, আব্দুল কুদ্দুস, সিপিবি সূত্রাপুর থানা কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বিকাশ সাহা, সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বী খান, সিপিবি ৪৫-৪৬নং ওয়ার্ড শাখার সম্পাদক হামিদুর রহমান ইকবাল প্রমুখ।

সমাবেশে সিপিবি নেতৃবৃন্দ বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের পরিবর্তে প্রস্তাবিত সাইবার নিরাপত্তা বিল একটি লোক দেখানো সংস্কার মাত্র। আমাদের দেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যক্তিগত পর্যায়ে মত প্রকাশের দায়েও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে বহু মানুষ নির্যাতিত হয়েছে। জেলখানায় লেখকের মৃত্যু হয়েছে। গণমাধ্যমের ওপর কর্তৃত্ব, স্বাধীন মত প্রকাশ বন্ধ ও জনসাধারণের কণ্ঠরোধ ভিন্ন নতুন সাইবার নিরাপত্তা আইনের মত নিবর্তনমূলক আইনের আর কোন উদ্দেশ্য নেই।

সমাবেশে সিপিবি নেতৃবৃন্দ বলেন, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বহু আগেই মানুষের কাছে স্পষ্ট হয়েছে। বাংলাদেশকে একটি ভুয়া ভোট ও একনায়কের দেশে পরিণত করাই ছিলো সেই সংবিধান সংশোধনীর লক্ষ্য। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপরীতে আজ দেশ চলছে। এর পরিণতির জন্য সম্পূর্ণ দায়-দায়িত্ব ক্ষমতাসীনদের নিতে হবে।

নেতৃবৃন্দ বলেন, ২০১৪ ও ২০১৮ এর নির্বাচন প্রমাণ করেছে দলীয় সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনের তিন জোটের রূপরেখার সাথে বিগত দিনে ক্ষমতাসীন দলগুলো বিশ্বাসঘাতকতা করেই আজকের পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। সিপিবির মতো গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ রাজনৈতিক দলকে শক্তিশালী করার মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের আকাক্সক্ষার বাংলাদেশ নির্মাণ করতে হবে।

সমাবেশে নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, দেশ থেকে লক্ষ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। বিদেশি ঋণের টাকায় মেগা প্রকল্পসমূহে মেগা লুটপাটের অভিযোগ আছে। দেশের বর্তমান নাজুক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে প্রয়োজনীয় আমদানি ব্যয় মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে ঋণ পরিশোধের সময় আসন্ন। দেশের প্রতিটি মধ্যবিত্ত ও শ্রমজীবী পরিবার বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে খাদ্য সংকট ও অভাবে ভুগছে। মানুষ ব্যাপকভাবে ঋণের জালে আটকা পড়ছে। নেতৃবৃন্দ বলেন, এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী ক্ষমতাসীনদের একদিন বিচারের সম্মুখীন হতে হবে।     

পদযাত্রা ও সমাবেশ থেকে সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের লক্ষ্যে তীব্র রাজনৈতিক সংগ্রাম গড়ে তুলতে সকলের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। সিপিবি নেতৃবৃন্দ আগামী ১৫ সেপ্টেম্বও, বিকেল ৪টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে একই দাবিতে অনুষ্ঠিতব্য বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় সমাবেশ সফল করতে ঢাকাবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেয়া ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনসহ অন্যান্য গণদাবিতে সিপিবি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ কমিটি ঘোষিত কর্মসূচি হিসেবে আগামী ২২ সেপ্টেম্বর লালবাগ সেকশন থেকে আজিমপুর হয়ে নিউমার্কেট পর্যন্ত পদযাত্রা কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে।